Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
JNU

নজরবন্দি

একের পর এক বিতর্কিত অধ্যাপক জেএনইউ-এর উপাচার্য পদে নিযুক্ত হইলে তাহাকে কি আর সমাপতন বলা যায়?

মামিডালা জগদেশ কুমার।

মামিডালা জগদেশ কুমার। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৪:৫৪
Share: Save:

মামিডালা জগদেশ কুমারের মেয়াদ শেষ হইল। বিতর্কের মেয়াদ ফুরাইল না। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে তাঁহার উত্তরসূরিরূপে যিনি আসিলেন, সেই শান্তিশ্রী ধুলিপুড়ি পণ্ডিত ইতিমধ্যেই এমন সকল বিতর্কে জর্জরিত, যাহার চরিত্র পূর্বতন জমানা অপেক্ষা ভিন্ন নহে। গত ছয় বৎসরে জেএনইউ-তে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হইয়াছে, ছাত্র নাজিব আহমেদ নিখোঁজ হইয়া গিয়াছেন, অস্ত্রধারী গুন্ডারা ক্যাম্পাসে ঢুকিয়া ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা চালাইয়াছে। এবং দেশের তাবৎ শিক্ষাপ্রাঙ্গণে যখন প্রতিবাদ উঠিয়াছে, সাবিত্রীবাই ফুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তিশ্রী তখন এই পড়ুয়াদের ‘হেরো’ বলিয়া কটাক্ষ ছুড়িয়াছেন। তিনি যদিও টুইটার অ্যাকাউন্টের কথা অস্বীকার করিয়াছেন, তবু তাঁহার নামাঙ্কিত টুইটার বলিয়াছে— জেএনইউ-সহ দিল্লির একাধিক নামী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসলে ‘জেহাদি’ নির্মাণের পরিসর। বুঝিতে অসুবিধা নাই, আগামী দিনেও জেএনইউ-এর সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সহিত ছাত্র-শিক্ষকগণের বিরোধ মিটিবার নহে। পরিস্থিতি ক্রমশই ঘোরালোতর হইতেছে।

কেহ বলিতে পারেন, শত মতেই মনের বিকাশ— প্রকৃত শিক্ষাপ্রাঙ্গণ তো শত চিন্তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিসর। উচ্চশিক্ষার প্রধান পাঠও তাহাই: প্রশ্ন করিবার অধিকার। কিন্তু, বিরুদ্ধমতের চরিত্রটির মীমাংসা করাও অতীব জরুরি। যে শিক্ষকেরা সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের ‘হেরো’ বা ‘জেহাদি’ বলিয়া দাগাইয়া দেন, তাঁহারা উহাদের মতের বিরোধিতাটুকুই করিতেছেন না, বরং পড়ুয়াদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করিতেছেন। তাঁহারা যে এক বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উস্কানি দিতেও সিদ্ধহস্ত, ইহা উক্ত বার্তাসমূহে যথেষ্ট প্রকট। শিক্ষাপ্রাঙ্গণের নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করা কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব, কিন্তু কেহ নিজের ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার গুরুতর অভিযোগ আনিলে— যাহা পরে আদালতে খারিজ হইয়া যায়— সেই অভিযোগের উদ্দেশ্যটি সন্ধান করিতেই হয়। উহাকে তখন আর কেবল নিরামিষ মতপার্থক্য বলা যায় না, উহার নাম পদাধিকারবলে নিগ্রহ— যাহাতে শেষাবধি প্রতিষ্ঠানের গায়ের জোর প্রতিফলিত হয়।

দ্বিতীয় আর একটি কথাও আছে, যাহা গভীরতর, স্পষ্টতর। একের পর এক বিতর্কিত অধ্যাপক জেএনইউ-এর উপাচার্য পদে নিযুক্ত হইলে তাহাকে কি আর সমাপতন বলা যায়? উপাচার্য নিয়োগকর্তা অর্থাৎ শিক্ষা মন্ত্রকের অভিমুখে তাকাইলে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সহজ। ক্ষুদ্রস্বার্থের রাজনীতি দিয়া তাঁহারা এই ঐতিহ্যময় বামপন্থী প্রতিষ্ঠানটির চরিত্রবদল ঘটাইতে চাহিতেছেন। জেএনইউ-এর উপর পেশিবলের আস্ফালনও যে কারণে ঘটিতেছে, উপাচার্য নিয়োগও সেই একই উদ্দেশ্যেই। জেএনইউ, এফটিআইআই, বিশ্বভারতী— নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে শিক্ষায় গৈরিকীকরণ একটি রীতিমতো সফল প্রকল্প। সাম্প্রতিক শিক্ষাপ্রশাসকদের বার্তায় তাই অভ্রান্ত ভাবে উঠিয়া আসে মোগল শাসন ও নেহরু-গান্ধী জমানার প্রতি আক্রমণ, বৈদিক সভ্যতার প্রচার, বামপন্থী পণ্ডিতের প্রতি কটাক্ষ। সমগ্র দেশকে হিন্দুত্ববাদের পাঠশালায় পরিণত করিতে উদ্যোগী নাগপুর তাহার একশৈলিক চিন্তাবলয়ের বন্দোবস্ত করিতে ব্যস্ত। জেএনইউ-এর মতো প্রতিবাদী প্রতিষ্ঠানের প্রতি সেই কারণেই আলাদা নজর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JNU vice chancellor Savitribai Phule
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE