দিল্লির মহল্লা ক্লিনিকগুলো ভাল চলছে না, এটা কেবল দিল্লির নাগরিক, বা আপ সরকারের জন্য দুঃসংবাদ নয়। সারা ভারতের কাছেই তা উদ্বেগের বিষয়। ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ নীতিকে কাজে পরিণত করার যে ক’টা উদ্যোগ সাম্প্রতিক ভারতে দেখা গিয়েছে, দিল্লির রাজ্য সরকার পরিচালিত মহল্লা ক্লিনিক তার অন্যতম। ২০১৫ সালে এর সূচনার পর রাজধানীর দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের বিপুল সাড়া মিলেছিল। জ্বর, ব্যথা, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, এমন ধরনের সমস্যাগুলির জন্য বিনা পয়সায় পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ, বিনা পয়সায় ওষুধ পাওয়া যায় ক্লিনিকে। অধিকাংশ মহিলা-চিকিৎসক নিয়োগ করায় এলাকার মহিলারা উৎসাহিত হয়েছেন ক্লিনিকে যেতে। ২০২৩ সালে উপভোক্তার সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ— এক কোটি চুরানব্বই লক্ষ, যাঁদের মধ্যে মহিলারাই ছিলেন এক কোটির বেশি। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও এই উদ্যোগ প্রশংসা আদায় করেছিল। কিন্তু গত বছর রোগীর সংখ্যা কমেছে, চিকিৎসকদের শূন্য পদ বেড়েছে। সর্বোপরি, ওষুধের সরবরাহে বিপুল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতি, প্রয়োজনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ নিয়মবিধি গোটা প্রকল্পটিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি বেসরকারি ল্যাবের বিরুদ্ধে। ভুয়ো রোগী, ভুয়ো পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়ে দিল্লি সরকারের বিপুল টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনার সুপারিশে মহল্লা ক্লিনিকের কার্যকলাপের তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।
দুর্নীতির তদন্ত অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু স্নানের পর ময়লা জলের সঙ্গে শিশুটিকেও ফেলে দেওয়ার উপক্রম করা হবে কি না, চিন্তা তা নিয়ে। নিম্নবিত্ত মানুষকে সুলভে চিকিৎসা জোগানোর দায়িত্ব উপেক্ষা করতেই অভ্যস্ত রাজ্য সরকারগুলি। প্রায় সব রাজ্যে দরিদ্র ও গ্রামীণ এলাকার মানুষ অসুস্থ হলে সর্বপ্রথম যান ডিগ্রিহীন চিকিৎসকদের কাছে, বাড়ির কাছে সাধ্যায়ত্ত টাকায় চিকিৎসা পাওয়ার আশায়। দু’একটি ব্যতিক্রমী রাজ্য বাদে প্রায় সর্বত্র প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসক, পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং ওষুধ অপ্রতুল। মহল্লা ক্লিনিক যত দিন শাসক দল আপ-এর কাছে ভোট জেতার তুরুপের তাস ছিল, তত দিন যথেষ্ট মনোযোগ পেয়েছে। ক্রমশ দেখা দিয়েছে গয়ংগচ্ছ মনোভাব। সংবাদে প্রকাশ, ওষুধ সরবরাহকারীদের টাকা না মেটানো, এবং ওষুধ কেনার দরপত্রে নানা জটিল শর্তের জন্য ওষুধ জোগানে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় রোগীদের অতিরিক্ত ভিড়, কর্মরত চিকিৎসকদের উপর অতিরিক্ত চাপ, এগুলিও নিয়মিত সঙ্কটের কারণ।
গোদের উপর বিষফোড়া দলীয় রাজনীতি, যা বিরোধী দলকে সূচ্যগ্র মেদিনী ছাড়তে রাজি নয়। প্রবল সম্ভাবনাময় প্রকল্পকেও নস্যাৎ করতে তা দ্বিধা করে না, যদি তা নির্বাচনী লড়াইয়ে অস্ত্র করা যায়। আপ সরকারকে বিদ্ধ করতে বিজেপি মহল্লা ক্লিনিকের দুর্দশাকে ব্যবহার করছে নির্বাচনী প্রচারে। অথচ, মহল্লা ক্লিনিকের সঙ্কট এত কিছু জটিল নয়, যে প্রশাসনের কুশলতা ও তৎপরতা দিয়ে মেটানো যাবে না। নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্কীর্ণতার উপরে উঠে মহল্লা ক্লিনিকের প্রসার, এবং সরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে সেগুলির সমন্বয়ে সহায়তা করা উচিত কেন্দ্রের শাসক দলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy