E-Paper

সদ্যোজাত স্বস্তি

অর্থনীতির দিক থেকে কেরল ভারতের ধনীতম কিংবা শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির একটি নয়। দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনীতিগুলির মধ্যে কেরলের স্থান একাদশতম।

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:২৩

দীর্ঘ দিন ধরেই সদ্যোজাত, শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যের প্রতি নজরদারি এবং যত্নের বিষয়টি কেরলের অগ্রাধিকারের তালিকায় অন্যতম ছিল। তারই সুফল পাচ্ছে রাজ্যটি। ২০২৩ সালের স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম প্রদত্ত রিপোর্ট জানাচ্ছে, কেরলে প্রতি ১০০০ জন জীবিত শিশুর জন্মপিছু নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র পাঁচ। এবং এই ক্ষেত্রটিতে কেরল শুধুমাত্র দেশের মধ্যেই সর্বশ্রেষ্ঠ স্থানে পৌঁছে যায়নি, পিছনে ফেলেছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত বিশ্বের দেশকেও। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০ সাল নাগাদ কেরলের আইএমআর ছিল ১২। ২০১৮ সালে তা নেমে আসে ৭-এ, ২০১৯ সালে ৬ এবং ২০২৩-এ তা পৌঁছেছে ৫-এ। লক্ষণীয়, এ-হেন ক্রমোন্নতি ভারতের অন্য কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দেখা যায়নি। তাদের কেউই এখনও নবজাতক মৃত্যুর হারে দুই অঙ্কের গণ্ডি ছেড়ে বেরোয়নি। কেরল যে সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে, এবং একটানা সেই উন্নতিকে ধরে রেখেছে, তার জন্য রাজ্য প্রশাসন, বিশেষত স্বাস্থ্য দফতরের সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি, দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসার্হ।

অথচ, অর্থনীতির দিক থেকে কেরল ভারতের ধনীতম কিংবা শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির একটি নয়। দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনীতিগুলির মধ্যে কেরলের স্থান একাদশতম। রাজ্যটির সাম্প্রতিকতম ‘গ্রোস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট’ (জিএসডিপি)-এর বৃদ্ধির হার গত বছরের তুলনায় শুধুমাত্র কমেইনি, বরং গোটা দক্ষিণ ভারতের মধ্যে সর্বনিম্ন স্থানে পৌঁছে গিয়েছে। গত পাঁচ বছরে রাজ্যের সর্বমোট ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে। অবস্থা এমনই যে, এই বছরের গোড়ায় রাজ্য সরকার তার উন্নয়নমূলক পরিকল্পনাগুলি ছেঁটে অর্ধেক করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এর কোনওটির প্রভাব জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবনযাত্রার মানের মতো মানবোন্নয়নের সূচকগুলির উপরে পড়েনি। বরং বিতর্ক সত্ত্বেও ‘কেরল মডেল’ প্রমাণ করে দিয়েছে, মাথাপিছু আয় তুলনামূলক ভাবে কম হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনিক উদ্যোগ এবং নাগরিক সহযোগিতায় এই ক্ষেত্রগুলির উন্নয়ন ঘটিয়ে উন্নততর বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভব। রাজনীতির ক্ষেত্রেও ১৯৮২ সালের পর থেকেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর পদটি পালা করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট)-র দখলে থেকেছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো কোনও একক সরকার সুদীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকেনি। কিন্তু বার বার শাসক দল এবং শীর্ষ প্রশাসনিক মুখ পরিবর্তিত হলেও সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচির গতি সেখানে অপ্রতিহত।

সার্বিক ভাবে কেরলের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নতি শুধুমাত্র মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল পরিকাঠামো নির্মাণেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রোগীপিছু চিকিৎসকের অনুপাতে উন্নতি এবং চিকিৎসায় আধুনিক প্রযুক্তিতে উদার বিনিয়োগ কেরলকে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রেখেছে। ২০১৩ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, নবজাতক মৃত্যুর ৭৫ শতাংশই ঘটছে জন্মের অব্যবহিত পরে। সেই মতো স্বাস্থ্য দফতর শিশুর জন্মের পূর্ব এবং পরবর্তী কালের যত্ন বিষয়ক এক উন্নততর ব্যবস্থা ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা প্রস্তুত করে, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং সেবাকর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করে। এ সবের সম্মিলিত ফল এই স্বস্তিদায়ক পরিসংখ্যান। কেরল পেরেছে। বাকি রাজ্যগুলি শিক্ষা নেবে কি?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kerala New Born

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy