Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Asha Workers

আশা-র কথা

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন ভারতের ১০ লক্ষেরও অধিক অ্যাক্রেডিটেড সোশ্যাল হেলথ অ্যাক্টিভিস্ট বা আশাকর্মী।

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২২ ০৫:৪৩
Share: Save:

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন ভারতের ১০ লক্ষেরও অধিক অ্যাক্রেডিটেড সোশ্যাল হেলথ অ্যাক্টিভিস্ট বা আশাকর্মী। তাঁদের এই বছরের ‘গ্লোবাল হেলথ লিডারস’ পুরস্কার দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই স্বীকৃতি তাঁদেরই দেওয়া হয়েছে, যাঁরা অতিমারি, অসাম্য, সংঘাত, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্কটের সম্মুখীন দুনিয়ায় মানুষের কাছে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে পৌঁছে দিতে অসাধারণ ভূমিকা নিয়েছেন। ভারতের আশাকর্মীরাও তার মধ্যে পড়েন। এই স্বীকৃতি গৌরবের। বাস্তবিকই কোভিড মোকাবিলায় প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁরা। শুধু অতিমারিতে নয়, দীর্ঘ দিন ধরেই এই প্রশিক্ষিত মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং জনসমাজের মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করে চলেছেন। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন-এর মূল স্তম্ভ এঁরাই। সেই কথাটিই যেন উঠে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতিতেও— গ্রামাঞ্চলে যাঁরা দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করেন, তাঁদেরও স্বাস্থ্যের বৃত্তে নিয়ে আসার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছেন ভারতের আশাকর্মীরা।

কিন্তু এ দেশে তাঁরা প্রাপ্য মর্যাদাটুকু পান কি? মা-শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব তাঁদের হাতে। অথচ, তাঁরাই মাতৃত্বকালীন ছুটি ঠিকমতো পান না, সদ্যোজাত সন্তানের দেখাশোনা করার পর্যাপ্ত সময় পান না ‘ডিউটি’র তাগিদে। অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটিতে থাকলে পারিশ্রমিক কেটে নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। মাঝেমধ্যেই বকেয়া থাকে ভাতা। আন্দোলনে নামতে হয় সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর মর্যাদা পাওয়ার দাবিতে। প্রসূতি ভর্তির জন্য রাতে হামেশাই ডাক পড়ে তাঁদের, হাসপাতালে রাত কাটাতে হয়। তাই হাসপাতাল চত্বরে তাঁদের জন্য পৃথক বিশ্রামঘরের সঙ্গে শৌচাগারের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছিল ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘দিশা’ প্রকল্পে। কিন্তু সেই সুবিধা দীর্ঘ কাল পরেও সর্বত্র গড়ে ওঠেনি। কোভিড পরিস্থিতিতে তাঁরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছেন। অথচ, গোড়ার দিকে তাঁদের হাতে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, পিপিই কিটের ন্যূনতম সুরক্ষাটুকুও তুলে দেওয়া যায়নি। অভিযোগ, কোভিডে অনেক আশাকর্মীর মৃত্যু হলেও তার যথাযথ পরিসংখ্যান কেন্দ্রীয় সরকার রাখেনি। ফলে তাঁদের পরিবার ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এত অসুবিধা সত্ত্বেও তাঁদের নিরন্তর কাজ যে সকলের নজর কেড়েছে, এই স্বীকৃতিই তার প্রমাণ। তবে এ প্রসঙ্গে এটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন যে, অতিমারির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাধারণ ভাবে মহিলা ও শিশু সুরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী এক হওয়া উচিত কি না। আশাকর্মীদের উপর অতিমারিজনিত অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার ফলে মা ও শিশুসুরক্ষার কাজটি কত দূর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা দেখতে হবে। অতিমারি পর্বে প্রসূতি ও শিশুমৃত্যু এবং টিকাকরণের হার সংক্রান্ত তথ্যগুলি এখনও নির্দিষ্ট ভাবে জানা না গেলেও তা যে খুব ভাল অবস্থায় নেই, অনুমান করা যায়। এর পাশাপাশি তাঁদের পারিশ্রমিক এবং পিএফ, পেনশন সংক্রান্ত দাবিগুলিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। সর্বোপরি, নজর দিতে হবে তাঁদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার দিকে। প্রশাসনকে বুঝতে হবে, নিজে অসুরক্ষিত থেকে কেউ অন্যকে সুরক্ষা দেওয়ার কাজটি করতে পারেন না। তাতে দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্যেরই ক্ষতি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Asha Workers Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE