—প্রতীকী ছবি।
পুরাতন বরষ’-এর সঙ্গে ‘পুরাতন অপরাধ’ও ক্ষমা করে দেওয়ার প্রার্থনা জানিয়েছিলেন কবি। ফেলে আসা বছরটি ব্যক্তিগত থেকে সমষ্টি স্তরে, ক্ষুদ্র থেকে বৃহতের পরিসরে বিস্তর ‘অপরাধ’-এর সাক্ষী থেকেছে, প্রতিবাদী, দ্বিধাগ্রস্ত এমনকি নীরবও থেকেছে অনেক সময়, সে সবই ক্ষমার্হ কি না তা তর্কসাপেক্ষ। তবে, নতুন বছরের শুরুতে আশার আলো না হোক, আশাবাদের গাঢ় রেখাটি দেখা যাচ্ছে। একটি বহুজাতিক মার্কেট রিসার্চ ও উপদেষ্টা সংস্থা সম্প্রতি বিশ্বের ৩৪টি দেশের পঁচিশ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিয়ে একটি সমীক্ষা করেছিল, সেখানে ৭০% মানুষ বলেছেন, তাঁদের আশা: ব্যক্তিগত স্তরে ২০২৪ সাল আগের বছরটির চেয়ে ভাল যাবে। ফেলে আসা ২০২৩, কিংবা তারও আগের অতিমারিধ্বস্ত বছরগুলির নিরিখে এই আশাবাদের রেখচিত্র স্বভাবতই ঊর্ধ্বমুখী; এর অনেকটাই অর্থনীতির নড়েচড়ে বসার সঙ্গেও সম্পর্কিত, বিশেষত ইউরোপে। দেখা গেছে, ব্রিটেন সুইডেন স্পেন পোল্যান্ডের মতো দেশে নতুন বছরটি নিয়ে আশাবাদ বেড়েছে ১১-১২ শতাংশ বিন্দু পর্যন্ত। ব্যক্তিগত আশাবাদ ও অর্থনীতির আশাবাদের একটি প্রগাঢ় সম্পর্ক আছে, সমীক্ষাভুক্ত মানুষদের ৫০% বলছেন এ বছরে বিশ্ব অর্থনীতি আরও পোক্ত হবে, অর্থাৎ বাকি ৫০% এ নিয়ে দ্বিধায়। তবু মোটের উপর অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদও বেড়েছে।
সমীক্ষায় খুঁটিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরগুলি দেখলে অবশ্য ধন্দ জাগে, এই আশাবাদ ‘বৃথা আশা’ নয় তো? নতুন বছরে দেশে দ্রব্যমূল্য মানুষের রোজগারের থেকে দ্রুত গতিতে বাড়বে কি না, মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার ও বেকারত্ব আগের বছরের চেয়ে বেশি হবে কি না— এই সব প্রশ্নেরই উত্তর এসেছে ‘হ্যাঁ’, ৬৮ থেকে ৭৯ শতাংশ ক্ষেত্রে! কর্মসংস্থানের সঙ্গে তো বটেই, মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তার বোধের সঙ্গেও এখন প্রযুক্তির অপরিহার্য যোগ, সমীক্ষাতেও তারই প্রতিফলন। ৬৪% মানুষের মত, এআই-এর বাড়বাড়ন্তে তাঁদের দেশে মানুষ কাজ হারাবেন; ৫৫% মনে করেন এ বছর তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য আন্তর্জালে ফাঁস হয়ে যেতে পারে। আবার বিশ্বব্যাপী ‘দুর্যোগ’-এর আশঙ্কাও কম নয়, নতুন ভাইরাসের প্রকোপে ফের অতিমারির ভয়ে সিঁটিয়ে আছেন ৪৮% মানুষ, ৫৬% বলছেন এ বছর নির্ঘাত কোনও গ্রহাণু আছড়ে পড়বে পৃথিবীতে। ইউক্রেন যুদ্ধ এ বছরেও থামবে না, মত সিংহভাগের।
তা হলে আশা কোথায়? সমীক্ষা, রাশিবিজ্ঞানের অঙ্ক, এই সব কিছুই দিনের শেষে তুল্যমূল্য বিচার, আগের বছর বা তার আগের নির্দিষ্ট সময়কালের নিক্তিতে নবাগত সময়ের নাড়ি বোঝার চেষ্টা। উল্লিখিত প্রতিটি পরিসরেই আগের কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে বিশ্ব জুড়ে মানুষের মনে, তা-ই সম্ভবত দেখা দিচ্ছে এক সার্বিক আশাবাদের রূপ ধরে। তবে এক বিরাটসংখ্যক মানুষের ভবিষ্যতের নিয়ামক হিসাবে যে প্রশ্নগুলির গুরুত্ব, তাদের উত্তরগুলি প্রকৃতই আশা জোগায়— যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন কি না, কার্বন নিঃসরণ রুখতে ‘আমার দেশের সরকার’ দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ করবে কি না— এই বিষয়গুলিতে মানুষ দৃঢ় ভাবে উত্তর দিয়েছেন, যথাক্রমে ‘না’ ও ‘হ্যাঁ’। আসল কথা বলবে সময়ই; তবে দেশ, সরকার, চাকরি, পরিবার, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, জলবায়ু নিয়ে বিশ্বমানব যে দিনশেষে আশাতেই বাঁচে, তা পরিষ্কার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy