Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Calcutta High Court

উধাও জলাশয়

বেআইনি নির্মাণ রুখতে নজরদারি কমিটি গড়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বলা হয়েছে, আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এই কমিটি তৈরি করবে।

An image of Calcutta High Court

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩ ০৭:০৫
Share: Save:

কলকাতার পরিবেশকে সুস্থ রাখতে আন্তর্জাতিক রামসার তালিকাভুক্ত পূর্ব কলকাতা জলাভূমিকে অক্ষত রাখা একান্ত প্রয়োজন— এই কথাগুলি বারংবার শোনা গিয়েছে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং সচেতন মানুষের মুখে। কিন্তু বেআইনি নির্মাণের ধাক্কায় সেই সতর্কবার্তা ভেসে গিয়েছে। সম্প্রতি সেই বেআইনি নির্মাণ রুখতে নজরদারি কমিটি গড়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বলা হয়েছে, আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এই কমিটি তৈরি করবে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই গজিয়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণগুলির বিষয়েও। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আচমকা পরিদর্শনে এ-হেন অবৈধ নির্মাণ ধরা পড়লে তা ভেঙে ফেলতে হবে। নির্মাণকারী সেই কাজটি না করলে কমিটিই সেই দায়িত্ব নেবে, এবং সে ক্ষেত্রে খরচ দিতে হবে নির্মাতাকেই। নির্মাতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থাও করতে হবে।

আদালতের রায় শিরোধার্য, তবুও একটি প্রশ্ন তোলা হয়তো অসঙ্গত হবে না। যেখানে জলাভূমি সংরক্ষণ আইন আছে, তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার এবং কী ভাবে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে তা স্পষ্ট ভাবে বলা আছে, সেখানে আরও একটি কমিটি গঠন কি পরিস্থিতিকে আদৌ পাল্টে দিতে পারবে? অভিজ্ঞতা বলে যে, পরিবেশবিদদের আন্দোলন, আদালতের নির্দেশ, জনস্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি— সব উপেক্ষা করেই এই রাজ্যে পরিবেশ সংক্রান্ত দীর্ঘলালিত সমস্যাগুলির কোনও পরিবর্তন হয় না। নানা বিষয়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগটুকুই শুধু হয়, সুরাহা দূর অস্ত্। জলাভূমি চুরি গোপনে সম্পন্ন করা কঠিন। সর্বসমক্ষেই সে কাজ হয়, এবং প্রশাসনও সে বিষয়ে দিব্য অবগত। কারণ, এ সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ পুলিশের কাছেই জমা পড়ে। রাজ্য পরিবেশ দফতরের অধীন নোডাল সংস্থা ‘পূর্ব কলকাতা জলাভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’-এর অভ্যন্তরীণ রিপোর্টই জানাচ্ছে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে এই এলাকায় নির্মাণের সংখ্যা লক্ষণীয় হারে বেড়েছে। বেড়েছে জলে এবং মাটিতে ভারী ধাতব পদার্থের পরিমাণও। অতর্কিত পরিদর্শনে বাড়তি লাভ হবে কি?

ইতিপূর্বে এই অঞ্চলে জলাভূমি ভরাট সংক্রান্ত একাধিক মামলায় জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, বেআইনি নির্মাণ যাতে না হয়, সরকারকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই নির্দেশ এবং বাস্তবের মধ্যে দূরত্বটি মোছেনি। পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য আইন অনুযায়ী, পাঁচ কাঠা বা তার থেকে বড় কোনও জলাশয় বিনা অনুমতিতে ভরাট করা হলে, তাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা বাধ্যতামূলক। সেই কাজই বা কতটুকু এগিয়েছে? প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারংবার দাবি করা হয়, জলাভূমিকে বাঁচাতে সরকার বদ্ধপরিকর। ভাল কথা। কিন্তু এত দিনে যত বেআইনি নির্মাণ সেখানে হয়েছে, তার কত শতাংশ ভেঙে পূর্বাবস্থায় ফেরত নিয়ে আসা গিয়েছে, সেই সুনির্দিষ্ট তথ্য কই? প্রসঙ্গত, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি বিনামূল্যে প্রতি দিন দৈনিক শহরের ৯১ কোটি লিটার নোংরা জল প্রাকৃতিক ভাবে পরিশোধনের কাজটি করে থাকে। এর ফলে কত কোটি টাকা সরকারের সাশ্রয় হয়, সেই হিসাবটুকুও বোধ হয় প্রশাসন আত্মস্থ করতে পারেনি। করলে, প্রচলিত ব্যবস্থাগুলিকেই কড়া হাতে কার্যকর করত। আদালতের নির্দেশে নজরদারি কমিটি গঠন করতে হত না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Wetlands Illegal Constructions
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE