Advertisement
E-Paper

ডিজিটাল উদ্বেগ

পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, অল্পবয়সিদের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তি কতটা লক্ষণীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এই আসক্তির সূচনা অতিমারির সময় থেকেই। 

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৫৯
আধুনিক পৃথিবীতে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে, তা নিয়ে সংশয় নেই।

আধুনিক পৃথিবীতে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে, তা নিয়ে সংশয় নেই। প্রতীকী ছবি।

দিনে ছ’ঘণ্টা বা তারও বেশি। দেশব্যাপী এক সমীক্ষায় প্রকাশ, ১৩ থেকে ১৭ বছরের ছেলেমেয়েদের প্রায় ২৮ শতাংশ প্রতি দিন এতটাই সময় ব্যয় করে স্মার্টফোন-সহ অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস-এ। শহরাঞ্চলের আট হাজারের বেশি অভিভাবকের মধ্যে ৭১ শতাংশ জানিয়েছেন, শ্রেণিকক্ষের বাইরে প্রায় সারা দিনটাই সন্তানদের কাটে স্মার্টফোন, ডেস্কটপ, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেটে। বুঁদ হয়ে থাকার কারণ অনলাইন পড়াশোনা নয়। তারা মগ্ন থাকছে সমাজমাধ্যম, অনলাইন গেমিং অথবা ভিডিয়ো নিয়ে। বিপরীতে, এই সমস্ত কিছুতে এক ঘণ্টারও কম সময় যারা কাটায়, তাদের সংখ্যাটা অতি অল্প। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, অল্পবয়সিদের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তি কতটা লক্ষণীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এই আসক্তির সূচনা অতিমারির সময় থেকেই।

আধুনিক পৃথিবীতে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে, তা নিয়ে সংশয় নেই। অতিমারিতে তালাবন্ধ বিশ্বে অতি প্রয়োজনীয় কাজগুলি সচল থেকেছিল এর মাধ্যমেই। পরবর্তী কালেও যে সেই নির্ভরতা কমে যাবে না, তা এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। কিন্তু অল্পবয়সিদের মধ্যে ডিজিটাল-আসক্তির ক্ষতিকর প্রভাবটি উপেক্ষা করার নয়। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে এখনও সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া না গেলেও কিছু উদ্বেগজনক প্রবণতা স্পষ্ট হচ্ছে। দিল্লিতে একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছিল, অন্তত ১৭ শতাংশ শিশু মোবাইলে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে অফলাইন ক্লাসগুলিতে মনোযোগ দিতে পারছে না। ৪১ শতাংশ শিশু বাস্তবজীবনে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর ক্ষেত্রে নয়, স্মার্টফোনের ভার্চুয়াল ‌বন্ধুত্বেই অধিক স্বচ্ছন্দ বোধ করছে। আপাতদৃষ্টিতে এই পরিবর্তনগুলি সামান্য বোধ হলেও সমাজজীবনের ক্ষেত্রে এর প্রভাব বিপুল এবং সুদূরপ্রসারী। ‘সমাজবদ্ধতা’র মূল ধারণাটিতেই তা কোপ বসায়। অন্য দিকে, মাত্রাতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের শারীরিক কুপ্রভাবগুলিও অনস্বীকার্য। অত্যধিক মোবাইল-মগ্নতার কারণে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, চোখের সমস্যা বৃদ্ধির মতো নানা অসুবিধার কথা বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। সর্বোপরি, খোলা জায়গায় দৌড়নো, খেলার অভ্যাস হারিয়ে শিশু যদি ক্রমশ কায়িক পরিশ্রমহীন অলস যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, তবে তার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পরবর্তী জীবনেও সেই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়।

এমতাবস্থায় ভারসাম্য রক্ষার কাজটি অভিভাবকদের। বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে ডিজিটাল ডিভাইস-হীন পৃথিবীর কথা কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সেই বিপ্লবকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে এক আত্মসর্বস্ব, অ-সামাজিক, অ-সুস্থ প্রজন্মকে তৈরি হতে দেওয়াও কালক্রমে সভ্যতার সঙ্কট ডেকে আনতে পারে। সুতরাং, অল্প বয়স থেকেই সন্তান যেন বাস্তব এবং ভার্চুয়াল— উভয় জগতের মধ্যে যথাযথ ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, অভিভাবককেই তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে নিজেদের মোবাইল-মগ্নতা কাটিয়ে উঠে উদাহরণ তৈরি করতে হবে। এবং অন্যদের পাশে থাকার, তাদের প্রতি সহমর্মী হয়ে ওঠার বোধটিও জাগ্রত করতে হবে। অতিমারি দীর্ঘ দিন পারস্পরিক মেলামেশার পথ বন্ধ করে মানুষকে ঘোর আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছিল। অতিমারি-উত্তর বিশ্বে প্রযুক্তির জয়যাত্রা অব্যাহত থাক, স্বার্থপরতা, অসামাজিকতার নয়।

Mobile Phones Digital Devices
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy