E-Paper

সংঘাত অব্যাহত

উনিশশো সত্তরের দশক থেকে এই সাগর যেমন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য জলপথ হয়ে উঠেছে, তেমনই এখানকার তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডারের কারণে অঞ্চলটির গুরুত্ব বেড়েছে।

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪২

—ফাইল চিত্র।

দক্ষিণ চিন সাগরে ২০২৩ সালটি শেষ হল উত্তপ্ত আবহে। বৎসরান্তে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে ফিলিপিনসের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়ে জানানো হয় যে, দক্ষিণ চিন সাগরে তাদের নৌ-বাহিনীর উপরে কোনও প্রকারের উস্কানি বা হয়রানি ভাল চোখে দেখবে না বেজিং। প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরের গোড়ায় চিনের নৌসেনার বিরুদ্ধে তাদের কয়েকটি মালবাহী জলযানকে জেনেশুনে জলকামান দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ আনে ম্যানিলা। চিন অবশ্য দাবি করছে যে, বিতর্ক উস্কে দিতেই তাদের অঞ্চলে অনধিকার প্রবেশ করেছিল ফিলিপিনসের জলযানগুলি। দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে চিনের সঙ্গে সাগর সংলগ্ন রাষ্ট্রগুলির সংঘাত দীর্ঘ দিনের। বিশেষত এখানকার ক্ষুদ্র দ্বীপ এবং মগ্নচড়াগুলি (শোল) নিয়ে গত বছর ম্যানিলা ও বেজিং-এর মধ্যে সংঘাতের পারদ চড়তে দেখা যায়। বহু সময় ধরেই এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রটির অত্যাধুনিক সব রণতরী নিয়মিত ভাবে ফিলিপিনসের উপকূল রক্ষী বাহিনী, নৌসেনা তথা মৎস্যজীবীদের হয়রান করে আসছে। শুধু তা-ই নয়, নিজেদেরই সৃষ্ট ‘নাইন-ড্যাশ লাইন’-এর মাধ্যমে স্কারবোরো এবং সেকেন্ড টমাস শোল-সহ দক্ষিণ চিন সাগরের প্রায় পুরোটাই নিজেদের বলে দাবি করছে বেজিং। যদিও ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি (ইউএনসিএলওএস) আইনের জোরে সে দাবি মানতে নারাজ ফিলিপিনস, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামের মতো আঞ্চলিক রাষ্ট্র। এই আইন অনুযায়ী, যে উপকূলের উপরে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সার্বভৌম অধিকার রয়েছে, সেখান থেকে প্রায় ৩৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত ন্যস্ত থাকবে তারই নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল।

উনিশশো সত্তরের দশক থেকে এই সাগর যেমন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য জলপথ হয়ে উঠেছে, তেমনই এখানকার তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডারের কারণে অঞ্চলটির গুরুত্ব বেড়েছে। কোনও দেশই যাতে এই ভান্ডারের উপর অনধিকার দাবি না করতে পারে, সেই সূত্রেই ১৯৮২ সালে ইউএনসিএলওএস আইন গৃহীত এবং স্বাক্ষরিত হয় চিন-সহ সমুদ্রবর্তী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে। তৎসত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অঞ্চল অবৈধ ভাবে দখল করে এসেছে বেজিং। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল চিনের এ-হেন দখলদারিকে অবৈধ ঘোষণা করলেও তা দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিং-এর একাধিপত্যকে প্রশমিত করতে পারেনি।

এ দিকে, দক্ষিণ চিন সাগরে ভারতের স্বার্থ মূলত বাণিজ্যিক ও ভূকৌশলগত। যে-হেতু তার অর্ধেকের বেশি বিদেশি বাণিজ্য মলাক্কা প্রণালীর মধ্যে দিয়ে চলাচল করে, সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ চিন সাগরের মধ্যে দিয়ে মুক্ত এবং নিরাপদ নৌ-চলাচল ভারতের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলে কোনও সংঘাত তার আর্থিক নিরাপত্তার পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। অন্য দিকে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে আমেরিকা-চিনের ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে চিনের আধিপত্য প্রশমিত করতে আমেরিকার ভারতকে প্রয়োজন। এখানকার আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলিকে অস্ত্র সরবরাহ তথা নৌ-মহড়ার মাধ্যমে নিজের গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে দিল্লি। ফলে, দক্ষিণ চিন সাগর বিষয়ে ভারতের নানা ভাবে জড়িয়ে-পড়া চিনের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। দক্ষিণ চিন সাগরের শক্তি-সংঘাত অব্যাহত থাকছে, থাকবে— এটাই আশঙ্কা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

South China Sea

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy