E-Paper

খেয়ালখুশির দৌড়

সাধারণ বুদ্ধি বলে, আইনরক্ষকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কোনও আপস করা চলে না। তা সঠিক পদ্ধতি মেনে যথাযথ ভাবে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ০৬:১০
An image of Nabanna

ম্প্রতি নবান্নে কারিগরি শিক্ষা সংক্রান্ত বৈঠকে পুলিশ প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে নিদান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।

যে সময়কাল ছিল ছ’মাসের, তা সাত দিনে সম্পন্ন করতে হবে। সম্প্রতি নবান্নে কারিগরি শিক্ষা সংক্রান্ত বৈঠকে পুলিশ প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এমনটাই নিদান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন এমন সময়সীমা হ্রাস? মূল কারণ, পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগা। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, সরকারি আধিকারিকদের কাজে ঢিলেমির কারণেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে এই প্রক্রিয়া। তাই প্রশিক্ষণের জন্য নির্ধারিত সময়ের বদলে কী ভাবে দ্রুত নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, তার পথ প্রদর্শন করেছেন তিনি। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশে লোকবল বৃদ্ধি প্রয়োজন। সুতরাং, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, তিন মাসের মধ্যে সমস্ত নিয়োগ সম্পূর্ণ করা। তিন থেকে ছ’মাসের প্রশিক্ষণ এক সপ্তাহে পূর্ণ করে নবনিযুক্তদের থানায় পাঠানো। ফিল্ড প্রশিক্ষণের সময় মাসে সাত দিন করে অন্যান্য প্রশিক্ষণ দেওয়া। প্রশ্ন হল, যাঁরা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নেবেন, তাঁদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত করা কি আদৌ সঙ্গত ভাবনা?

সাধারণ বুদ্ধি বলে, আইনরক্ষকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কোনও আপস করা চলে না। তা সঠিক পদ্ধতি মেনে যথাযথ ভাবে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। পুলিশের দীর্ঘ প্রশিক্ষণে শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ফরেনসিক সায়েন্স থেকে ক্রিমিনোলজি, আইনের প্রয়োগের মতো বিভিন্ন বিষয়ও তাঁদের শেখানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের প্রথমে বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে এবং তার পরে থানায় পোস্টিং হয়। প্রশিক্ষণকালে তাঁরা কাজের নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এই সমগ্র প্রক্রিয়াটির মধ্যে যাওয়া এক জন পুলিশকর্মীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অন্যথায়, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি যথাযথ সম্পন্ন হয় না। এবং এইখানেই এক জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশকর্মীর সঙ্গে এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারের পার্থক্য। অথচ, সাত দিনের প্রশিক্ষণের যে নিদান তাঁদের ক্ষেত্রে দেওয়া হল, তাতে শেষ পর্যন্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে পুলিশকর্মীদের কোনও তফাত থাকবে না। বর্তমানে সিভিক ভলান্টিয়ারদের সাত দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েই কাজে পাঠানো হয়।

এমনিতেই এ রাজ্যের জনসাধারণের কাছে পুলিশের ভাবমূর্তি আশাব্যঞ্জক নয়। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়বদ্ধতা, অধিকারবোধ এবং এক্তিয়ারের সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে অহরহ। শুধু তা-ই নয়, নিজ কর্তব্যটি যথাযথ পালনের বদলে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের দিয়ে শিশুদের শিক্ষক, প্রবীণদের বাজার-সরকার বা ফুটবলারের ভূমিকা পালন করানো হয়। নতুন ব্যবস্থায় তাঁদের পেশার গুরুত্ব যে আরও তলানিতে ঠেকবে, তা অনুমান করাই যায়। দুঃখের বিষয় হল, যে কোনও বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ উল্টে দেওয়াকে স্বভাবে পরিণত করেছে রাজ্যের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্ব। যেমন, শিক্ষাদানের কাজটি চলছে মূলত পার্শ্ব বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের উপর ভরসা করে। স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ বহু দিন বন্ধ। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের অভাব পূরণ করার চটজলদি ‘ডিপ্লোমা’ নিদানও সম্প্রতি শোনা গিয়েছে। আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রটিও কোনও ব্যতিক্রম নয়। এমন চললে মানতে হয়, প্রশাসনের বিচার-বিবেচনার উপর ভরসা করা যায় না। কোথায় খেয়ালখুশি চলে আর কোথায় নিয়ম মানতে হয়, প্রশাসনিক শীর্ষ নেতৃত্বের সেই বোধ না থাকলে— রাজ্যে ঘোর দুর্দিন আসন্ন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Police Training School Nabanna Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy