E-Paper

পড়শি সমস্যা

ভারতের প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য প্রয়োজন, যা তার নিরাপত্তা তথা আঞ্চলিক কূটনীতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে।

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:০৬
PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

সীমান্ত বিবাদ নিয়ে ফের উদ্বেগ দিল্লির অলিন্দে। সাম্প্রতিক চিন-ভুটানের বৈঠকের কারণে। ভুটানের বিদেশমন্ত্রী তান্ডি দর্জি-র বেজিং সফরের পরে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, তারা যথাশীঘ্র সম্ভব ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদ মেটাতে আগ্রহী, মূলত দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে। এমনিতেই গত মার্চে ডোকলাম বিবাদ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ভুটান ও ভারতের পাশাপাশি চিনকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং-এর বিবৃতি অস্বস্তি বাড়িয়েছিল দিল্লির। এর মাঝে চিন-ভুটানের এ-হেন নৈকট্য ভারতের সীমান্ত বিবাদের অঙ্ককে জটিলতর করে তুলল। তা ছাড়া, আমেরিকার পেন্টাগনের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টের দাবি, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদের আবহে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিন শুধু বাড়তি সেনাই মোতায়েন করেনি, বহু নতুন পরিকাঠামোও নির্মাণ করেছে— ভারতের পক্ষে উদ্বেগের কথাই বটে।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে ডোকলাম মালভূমির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ভারতের কাছে। ডোকলামের সন্নিকটে অবস্থিত বাতাং লা ত্রিদেশীয় সীমান্ত অঞ্চলটি ভুটানের অংশ হলেও চিন এটিকে তাদের চুম্বি উপত্যকার অংশ হিসাবে দাবি করে। ২০১৭ সালে এই অঞ্চলে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঝাম্পেরি চ্যুতিরেখা-মুখী একটি রাস্তা নির্মাণের কাজও শুরু করে তারা, যা সেনা পাঠিয়ে আটকে দেয় ভারত। এর জেরেই ওই অঞ্চলে দুই মাসাধিক কাল ধরে মুখোমুখি অবস্থান নেয় দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনী। ডোকলাম অঞ্চলটিকে চিন করায়ত্ত করতে চায় এক বিশেষ উদ্দেশ্যে— এতে শিলিগুড়ি করিডর-এর উপরে নজরদারি করা সহজ হবে তাদের পক্ষে। এই করিডর বা ‘চিকেন’স নেক’ ভারতের মূল ভূখণ্ডকে শুধু উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির সঙ্গেই যুক্ত করে না, এ দেশের সঙ্গে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, এমনকি তিব্বতের মতো পড়শি রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগের ভূমিকাও পালন করে। এ দিকে, ডোকলাম ঘটনার পর থেকেই পার্বত্য রাষ্ট্রটির উপরে চাপ বৃদ্ধি করে আসছে চিন। এর অন্যতম প্রমাণ গত বছরের উপগ্রহ-চিত্র, যেখানে দেখা গিয়েছে ডোকলামের ন’কিলোমিটার পূর্বে ভুটানের মধ্যেই চিনা বসতি। এখানকার আমু চু নদী উপত্যকার কাছে দ্বিতীয় একটি চিনা গ্রাম নির্মাণও শেষ হওয়ার মুখে। লক্ষণীয়, জবরদখলগুলি এমন ভাবে পরিকল্পিত, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে বেজিং-কে প্রতিরোধের ক্ষমতা থিম্পুর নেই। আর ভারতের উদ্বেগ, চিন ভুটানের উপরে এতটাই চাপ সৃষ্টি করতে পারে যে, উত্তরে চিনের সঙ্গে তাদের বিতর্কিত অঞ্চলের বদলে ডোকলামকে চিনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হবে ভুটান। এতে শুধু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে না, তার ভূ-নিরাপত্তাকেও করে তুলবে দুর্বল।

ভারতের প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য প্রয়োজন, যা তার নিরাপত্তা তথা আঞ্চলিক কূটনীতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। পড়শি রাজ্যটির সঙ্গে এ-যাবৎ কূটনৈতিক সুসম্পর্কের সুবাদে ভারতকে তার আঞ্চলিক রাজনীতির নৌকা এমন ভাবে চালনা করতে হবে, যাতে নিজের পাশাপাশি ভুটানের স্বার্থের বিষয়টিও সমান গুরুত্ব পায়। এর ফলে শুধুমাত্র দুই পড়শির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ়ই হবে না, নিজের স্বার্থ বজায় রেখে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ভারত নিজেকে পরিচালনাতেও সফল হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

PM Narendra Modi Bhutan India China

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy