E-Paper

নেশার আঁধারে

নেশাগ্রস্তদের মারধর, অভুক্ত রাখা, একই ঘরে অনেককে আটকে রাখা, এমনকি ধর্ষণেরও অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রগুলির বিরুদ্ধে। শুধু এ রাজ্যেই নয়, দেশের অন্যত্রও নেশাগ্রস্তদের উপরে নিপীড়নের চিত্রটি বিশেষ আলাদা নয়।

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৪ ০৭:৪৩
Drug Addiction

—প্রতীকী ছবি।

উদ্দেশ্য ছিল, নেশার কবল থেকে মুক্তি। সেই নেশাগ্রস্ত রোগীর পরিবারের কাছ থেকেই নেশার সামগ্রীর খরচ চাইল শহরের এক নেশামুক্তি কেন্দ্র। কর্তৃপক্ষের দাবি, এমন রোগীকে বশে রাখতে দিতে হয় নেশার সামগ্রী। ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। অভিযোগ, এ ভাবেই নেশার অভ্যাস জিইয়ে রাখা হয় শহর সংলগ্ন এলাকায় গজিয়ে ওঠা নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলিতে। এই সব কেন্দ্রে রোগীমৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিবিধ। কেন্দ্রগুলির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল সোসাইটিজ় রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৯৬১-এর অধীনে তৈরি সংস্থা, বা ট্রাস্ট তৈরি করে চালানো যায় না এমন কেন্দ্র। অথচ, এই আইনকেই সম্বল করে এ শহর তথা শহরাঞ্চলে রমরমিয়ে চলছে এই ব্যবসা। প্রসঙ্গত, মানসিক সমস্যায় ভোগা রোগীদের কোনও হোমে রাখতে হলে স্বাস্থ্য দফতরের মেন্টাল হেলথ লাইসেন্স থাকতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখানে নেশাগ্রস্তদের আলাদা রাখাটাই বাধ্যতামূলক। অথচ, অনেক কেন্দ্রেই নেশাগ্রস্ত এবং মানসিক রোগীদের এক সঙ্গে রাখা হয়। অধিকাংশ কেন্দ্রের থাকে না লাইসেন্স। তা ছাড়া, কেন্দ্রগুলিতে যেখানে সর্বক্ষণের এক জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং এমবিবিএস চিকিৎসকের উপস্থিতি, সঙ্গে দু’জন নার্স থাকা বাধ্যতামূলক, সেখানে অনেকে ক্ষেত্রেই রোগীর দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে পুরনো আবাসিক বা অপেশাদার ব্যক্তিদের উপরে। ফলে, নেশাগ্রস্তদের মারধর, অভুক্ত রাখা, একই ঘরে অনেককে আটকে রাখা, এমনকি ধর্ষণেরও অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রগুলির বিরুদ্ধে। শুধু এ রাজ্যেই নয়, দেশের অন্যত্রও নেশাগ্রস্তদের উপরে নিপীড়নের চিত্রটি বিশেষ আলাদা নয়।

নেশাগ্রস্তদের পেশাদারি চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবার-পরিজনের সহযোগিতারও প্রয়োজন পড়ে। রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী, দেহের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে নির্ভর করতে হয় মানসিক চিকিৎসা, কাউন্সেলিং, গ্রুপ থেরাপি, সামাজিক পুনর্বাসনের উপরে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম’ অনুযায়ী, নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিদেরও কোনও বৈষম্য ছাড়া স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ, সম্মান পাওয়ার অধিকার মানবাধিকার এবং নাগরিক অধিকার রয়েছে। চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তা বজায় থাকার অধিকারও রয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত সচেতনতার অভাবে ভারতে আজও মদ বা মাদকাসক্তিকে সামাজিক কলঙ্ক হিসাবে গণ্য করা হয়। মাদকবিরোধী নীতির ভিত্তিপ্রস্তর নার্কোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস (এনডিপিএস) অ্যাক্ট, ১৯৮৫, অনুসারে নিজের ব্যবহারের জন্য বা পাচারের জন্য মাদক রাখা— দুটোই অপরাধ। প্রায়ই দেখা যায়, মাদকাসক্তি যে একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, কেবল ‘অপরাধী’ করে না রেখে আসক্তের সঠিক চিকিৎসা ও পুনর্বাসন প্রয়োজন, এই ধারণাটি গড়ে ওঠে না।

বর্তমান এনডিপিএস আইনে পুনর্বাসনের সুযোগ থাকলেও, বাস্তবে তার রূপায়ণ নামমাত্র। তাই, এক দিকে প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং অন্য দিকে উন্নত পরিষেবার অভাবে বহু ক্ষেত্রে অবৈধ কেন্দ্রে অপেশাদারদের হাতে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় নেশাগ্রস্তদের। একটা সময়ে মানসিক রোগীদের সঙ্গে ব্যবহার করা হত বন্দিদের মতো। মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে এখন রোগীর স্বার্থরক্ষায় সরকার সচেষ্ট হয়েছে। একই অধিকার নেশাগ্রস্তদেরও প্রাপ্য।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

drug addiction Rehabilitation centre Drug

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy