Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Survival Tips

টিকে থাকার পরীক্ষা

ডারউইন ‘স্ট্রাগল ফর লাইফ’-এর ধারণা পেয়েছিলেন টমাস রবার্ট ম্যালথাসের কাছ থেকে। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত অ্যান এসে অন দ্য প্রিন্সিপল অব পপুলেশন গ্রন্থে ম্যালথাস ওই ধারণা ব্যাখ্যা করেন।

An image of Human Evolution

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ ০৭:১২
Share: Save:

নিজে বেঁচে থাকার জন্য মনুষ্যজাতি কী না করছে? টিকে থাকার জন্য লড়াই, এই হচ্ছে চার্লস রবার্ট ডারউইন প্রবর্তিত বিবর্তনের মূল কথা। ডারউইন ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মহাগ্রন্থ অন দি অরিজিন অব স্পিসিস বাই মিনস অব ন্যাচারাল সিলেকশন, অর দ্য প্রিজ়ারভেশন অব ফেভারড রেসেস ইন দ্য স্ট্রাগল ফর লাইফ-এ এই বিষয়ে বিশদে আলোচনা করেন। ডারউইন ‘স্ট্রাগল ফর লাইফ’-এর ধারণা পেয়েছিলেন টমাস রবার্ট ম্যালথাসের কাছ থেকে। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত অ্যান এসে অন দ্য প্রিন্সিপল অব পপুলেশন গ্রন্থে ম্যালথাস ওই ধারণা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, জনসংখ্যা বাড়ে গুণোত্তর প্রগতিতে। মানে, যে সময়ে জনসংখ্যা বাড়ে দ্বিগুণ, তার পরবর্তী ধাপে ঠিক সে সময়ের ব্যবধানে জনসংখ্যা হয় চতুর্গুণ। তার পর সমান সময়ে ওই সংখ্যা হয় আটগুণ। কিন্তু আহার্য বাড়ে দুই, চার, ছয়, এই পাটিগাণিতিক প্রগতিতে। ডারউইন এবং বিবর্তনবাদের সহ-আবিষ্কর্তা আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস দু’জনেই পড়েছিলেন ম্যালথাসের বইটি। দু’জনেই ভাবেন ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচনের কথা। যা বিবর্তনের এক নির্ণায়ক উপাদান। আহার্য কম, জনসংখ্যা বেশি, এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতি। প্রকৃতি তখন নির্বাচন করে কাকে বাঁচিয়ে রাখবে, আর কাকে মরে যেতে দেবে। এ ভাবেই যুগে যুগে জীবের বিবর্তন হয়ে এসেছে। এই হল বিবর্তনবাদের মূল কথা। কেমন পরিস্থিতি হলে কোন জীব বেঁচে থাকবে বা না থাকবে, সেটা নির্ধারণ করে প্রকৃতি। এই তত্ত্ব জনপ্রিয় করেন ডারউইনের হিতাকাঙ্ক্ষী টমাস হেনরি হাক্সলি।

বেঁচে থাকার লড়াইতে যোগ দিয়ে মানুষ অনেক কিছু করে বা করতে হয়। যেমন, বাসস্থানের সংস্থানে অরণ্য নিধন; অন্নসংস্থানের জন্য জীববৈচিত্র নষ্ট করা; প্লাস্টিক, রেফ্রিজারেটর, বাতানুকূল যন্ত্র ব্যবহার। এই অভ্যাসের ফল মারাত্মক। অরণ্য নিধনের ফলে বৃষ্টিপাত কমেছে, জীববৈচিত্র নষ্ট করার ফলে উপকারী ওষুধ কমেছে, রেফ্রিজারেটরের ব্যবহার বায়ুমণ্ডলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন তৈরি হয়ে ওজ়োন হোল বাড়াচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়ছে। ওজ়োন গ্যাসের চাদর পৃথিবীকে মুড়ে রাখে। তাকে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচায়। সে চাদর ফুটো হলে পৃথিবীর বিপদ। উষ্ণায়ন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওজ়োন চাদরের ফুটো দিয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের রোগভোগও বাড়ছে। পৃথিবীতে প্রাণীর বসবাসের পক্ষে ক্ষতিকর এই সব প্রভাব বিজ্ঞানীরা বুঝছেন কী করে? হ্রদের মাটি পরীক্ষা করে। এই হচ্ছে বিজ্ঞান। সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতে পারবেন না, কী থেকে কোন বিপদের সন্ধান পাওয়া যায়। এই জন্যই রিচার্ড ফাইনম্যান গবেষণাকে বলেছিলেন সূক্ষ্ম গোয়েন্দাগিরি।

বিজ্ঞান গবেষণার এ রকম গোয়েন্দা হচ্ছেন ভূতাত্ত্বিকেরা। মানুষের টিকে থাকার লড়াইয়ের ফলে পৃথিবীর ক্ষতির খবর ভূতাত্ত্বিকেরা সম্প্রতি সংগ্রহ করেছেন কানাডার ক্রফোর্ড হ্রদের পলিমাটি বিশ্লেষণ করে। ওখানকার পলিমাটি বিশ্লেষণ করে ভূতাত্ত্বিকেরা যা জানতে পেরেছেন, তাতে ভূতত্ত্বের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। অনেক দিন ধরে বেশ কিছু বিজ্ঞানী মানুষের দূষণপ্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে একটা নতুন যুগের কথা বলে আসছিলেন। ভূতাত্ত্বিকেরা পৃথিবীকে বিভিন্ন যুগে ভাগ করেন। যেমন হিমবাহ যুগ, প্রস্তর যুগ ইত্যাদি। এখন চলছে হলোসিন যুগ। ‘হলোস’ শব্দের অর্থ গ্রিক ভাষায় পূর্ণাঙ্গ। আর, সিন মানে নতুন। শব্দটি যুগ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। হলোসিন যুগ শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১১,৭০০ বছর আগে। মানুষের টিকে থাকার লড়াইয়ের ফলে যে পরিমাণ পরিবেশদূষণ ঘটছে, সে হিসাবে ভূতাত্ত্বিকেরা আর একটা নতুন যুগের কথা বলে আসছিলেন। যে যুগ হল অ্যানথ্রোপোসিন। গ্রিক ভাষায় ‘অ্যানথ্রোপোস’ মানে মানুষ। অ্যানথ্রোপোসিন হল মনুষ্য যুগ। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ভূতাত্ত্বিক অ্যান্টোনিয়ো স্টোপ্পানি মনুষ্য যুগের কথা প্রথম বলেন। রসায়নে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পল জে ক্রুটজ়েন ১৯৭২ সালে ওই যুগের কথা সমর্থন করায় অ্যানথ্রোপোসিন শব্দটি বাড়তি মর্যাদা পায়। স্টোপ্পানি এবং ক্রুটজ়েন এই দু’জনের দাবি ছিল যে, মানুষ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করছে। এতটাই যে, তা মিটবার নয়। গত বছর জুলাই মাসে ভূতাত্ত্বিকদের যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন বার্লিন শহরে বসেছিল, তাতে ওঁরা অ্যানথ্রোপোসিন নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, তবে কোনও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি। মানুষ পরিবেশের যে ক্ষতি করছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE