Advertisement
E-Paper

ভাল-মন্দ

জিডিপি বৃদ্ধির পরিসংখ্যানের নীচে আরও যে কথাটি চাপা পড়ে থাকবে, তা হল, সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমছে।

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:০০
বিশ্বের বৃহৎ অর্থব্যবস্থাগুলির মধ্যে ভারতের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে ভাল।

বিশ্বের বৃহৎ অর্থব্যবস্থাগুলির মধ্যে ভারতের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে ভাল। প্রতীকী ছবি।

ভারতে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার দাঁড়াল ৬.৩%— এই বাক্যটি যত তথ্য প্রকাশ করে, গোপন করে সম্ভবত তার চেয়েও বেশি। প্রকাশ্য তথ্যগুলির অন্যতম হল, বিশ্বের বৃহৎ অর্থব্যবস্থাগুলির মধ্যে ভারতের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে ভাল। অর্থব্যবস্থার ভিত্তি এখনও তুলনায় মজবুত। তার একটা প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে শেয়ার বাজারেও। বিপুল পরিমাণে আন্তর্জাতিক প্রাতিষ্ঠানিক পুঁজি ভারতের বাজারে ঢুকছে, ফলে দুনিয়া জুড়ে শেয়ার বাজারের সূচক যেখানে ধরাশায়ী, সেখানে ভারতের সেনসেক্স-নিফটি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে। বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক পুঁজি অবশ্য স্বভাবে অতি চঞ্চল— পরিস্থিতির সামান্যতম পরিবর্তনেও এই পুঁজি বাজার ছেড়ে চম্পট দেয়। তবে, যত ক্ষণ, তত ক্ষণ— আপাতত এই পুঁজি সুসংবাদ বহন করছে। দ্বিতীয় প্রকাশ্য তথ্যটি হল, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে যতখানি আর্থিক বৃদ্ধি হবে বলে অনুমান করা গিয়েছিল, প্রকৃত বৃদ্ধির পরিমাণ সম্ভবত তার চেয়ে কম দাঁড়াবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বা ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বৃদ্ধির পূর্বাভাস যতখানি কাটছাঁট করেছিল, প্রকৃত হ্রাসের পরিমাণ তার চেয়ে বেশি হওয়ারই আশঙ্কা। তৃতীয়ত, অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে দুঃসংবাদ অপেক্ষা করে আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দা ঘনাচ্ছে, এ কথা এখন কার্যত সর্বজনস্বীকৃত। অপরিশোধিত তেলের দাম আপাতত নিম্নমুখী, কিন্তু রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ স্তিমিত হওয়ার সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। কাজেই, বাজারের অস্থিরতা ভারতীয় অর্থব্যবস্থার উপরও প্রভাব ফেলবে।

কিন্তু, আর্থিক বৃদ্ধির ত্রৈমাসিক পরিসংখ্যান সরাসরি যে কথাগুলি বলছে না, তা সাংঘাতিক। গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড বা মোট মূল্য সংযুক্তির হিসাবে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন ক্ষেত্র গত অর্থবর্ষের তুলনায় এই অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্কুচিত হয়েছে ৪.৩%। অর্থব্যবস্থায় এই ক্ষেত্রটির গুরুত্ব অ-সামান্য— উৎপাদন ক্ষেত্রে বিপুল কর্মসংস্থান হয়ে থাকে, বিশেষত কৃষির উদ্বৃত্ত শ্রম। ২০২০ সালে, অর্থাৎ কোভিড অতিমারি থাবা বসানোর আগে, উৎপাদন ক্ষেত্র যে অবস্থায় ছিল, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তার চেয়ে বৃদ্ধি হবে মাত্র ৬.৩%। ২০১৭-২০, এই তিন অর্থবর্ষে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১০.৬%; ২০১৪-১৭, এই তিন বছরে তা ছিল ৩১.৩%। অর্থাৎ, অতিমারিই একমাত্র কারণ নয়, গত ছ’বছর ধরেই ভারতের উৎপাদনক্ষেত্রটি ধুঁকছে। স্বভাবতই, ২০১৬ থেকে ২০২০-র মধ্যে এই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানও অর্ধেক হ্রাস পেয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছবিটি এত করুণ না হলেও স্পষ্ট যে, ভ্রান্ত অর্থনৈতিক পরিচালনা এবং অতিমারির জোড়া ধাক্কা ভারতীয় অর্থব্যবস্থা এখনও সামলে উঠতে পারেনি।

জিডিপি বৃদ্ধির পরিসংখ্যানের নীচে আরও যে কথাটি চাপা পড়ে থাকবে, তা হল, সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমছে। এই বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ গত বছরের একই সময়কালের তুলনায় ৪.৪% কম; এবং, ২০১৯-২০’র তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সরকারি ভোগব্যয়ের হ্রাসের পরিমাণ প্রায় ২০%। সরকারি ব্যয় থেকে জিডিপি-র ১০ শতাংশের কাছাকাছি অংশ আসে, ফলে এই ব্যয় হ্রাসের তাৎপর্য আর্থিক বৃদ্ধির হারে প্রত্যক্ষ ভাবে তুলনায় কম। কিন্তু, সরকারি ব্যয় বাড়লে বিশেষত দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, ও ভোগব্যয় বাড়ে— আর্থিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার গুরুত্ব বিপুল। লক্ষণীয় যে, গত অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের তুলনায় এই ত্রৈমাসিকে ভোগব্যয় বেড়েছে ৯.৭%। কিন্তু, ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩, এই তিন বছরে এই ব্যয়বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ১১.২%। তার আগের তিন বছরে যা প্রায় ২১% বেড়েছিল। অভ্যন্তরীণ বাজারের এই লক্ষণগুলি পড়লে আশঙ্কা হয়, ভারত মুখ থুবড়ে পড়ার জন্য তৈরি হয়েই আছে।

Economy India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy