Advertisement
E-Paper

অসহ অসাম্য

এই অসাম্য বহুলাংশে কাঠামোগত। যেমন, দেশে জিএসটি বাবদ মোট যত কর আদায় করা হয়, তার ৪৬% আসে দেশের দরিদ্রতম ৫০% মানুষের পকেট থেকে।

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৬
দেশের একশো জন ধনীতম ব্যক্তির সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬,০০০ কোটি ডলারে।

দেশের একশো জন ধনীতম ব্যক্তির সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬,০০০ কোটি ডলারে। প্রতীকী ছবি।

ভারত কি ক্রমেই কেবল ধনীদের দেশ হয়ে উঠছে? অক্সফ্যাম-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট সারভাইভাল অব দ্য রিচেস্ট-এর তথ্য থেকে তেমন আশঙ্কা হওয়া অমূলক নয়। দেশে বিলিয়নেয়ার বা একশো কোটি ডলারের অধিক সম্পদের মালিকের সংখ্যা ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বেড়েছে ষাট শতাংশেরও বেশি— ১০২ জন থেকে ১৬৬ জন। গৌতম আদানি বিশ্বের ধনীতমদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন, ২০২২ সালে তাঁর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। দেশের একশো জন ধনীতম ব্যক্তির সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬,০০০ কোটি ডলারে। ২০১২ থেকে ২০২১ সাল অবধি দেশে যত সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে, তার ৪০.৫% ধনীতম এক শতাংশ মানুষের কুক্ষিগত হয়েছে; আর অন্য দিকে, দরিদ্রতম ৫০% মানুষের ভাগে পড়েছে এই সময়ে সৃষ্টি হওয়া সম্পদের মাত্র তিন শতাংশ। অসাম্যের ছবিটি ভয়াবহ।

এই অসাম্য বহুলাংশে কাঠামোগত। যেমন, দেশে জিএসটি বাবদ মোট যত কর আদায় করা হয়, তার ৪৬% আসে দেশের দরিদ্রতম ৫০% মানুষের পকেট থেকে। আর, মোট জিএসটি আদায়ের মাত্র চার শতাংশ আসে ধনীতম দশ শতাংশ মানুষের থেকে। তার কারণটি সহজ— দরিদ্র মানুষের আয়ের সিংহভাগ যায় ভোগব্যয়ে, যেখানে ধনীদের আয়ের অনুপাতে তাঁদের ভোগব্যয় যৎসামান্য। বাকি টাকা তাঁরা হয় সঞ্চয় করেন, নয়তো লগ্নি। ভারতের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে যে, ধনীদের আয় যে ভাবে বেড়েছে, লগ্নির প্রবণতা ততখানি বাড়েনি। বাজার অনিশ্চিত, ফলে তাঁরা হাতের টাকা সঞ্চয় করছেন। আয়ের অনুপাতে ভোগব্যয়ের পরিমাণ যে-হেতু দরিদ্র মানুষের বেশি, ফলে জিএসটির বোঝাও তাঁদের উপরই বেশি। কথাটি শুধু জিএসটির জন্য সত্য নয়, এমনকি শুধু ভারতের জন্যও নয়— যে কোনও পরোক্ষ করের ক্ষেত্রেই এই একই ঘটনা ঘটে। পরোক্ষ কর চরিত্রে রিগ্রেসিভ, অর্থাৎ কার আয় কম বা বেশি, এই করের হার তার উপরে নির্ভর করে না— গৌতম আদানি থেকে রামা কৈবর্ত, প্রত্যেকেই সমান হারে পরোক্ষ কর দিতে বাধ্য। যাঁরা ধনী, তাঁদের থেকে বেশি হারে প্রত্যক্ষ কর আদায় করা যায়, কিন্তু এখানেই বর্তমান ভারতীয় ব্যবস্থার দ্বিতীয় কাঠামোগত সমস্যা। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেট করের পরিমাণ বহুলাংশে কমিয়ে দেয়। তার ফলে বাজেটে যত রাজস্ব লোকসান হয়েছিল, একটি হিসাব বলছে যে, তা ভারতের মোট স্বাস্থ্য বাজেটের অর্ধেক। দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনও আয়কর-জালের বাইরে থেকে গিয়েছেন। প্রত্যক্ষ কর আদায়ের সেই তুলনামূলক ঘাটতি পরোক্ষ করের মাধ্যমে পূরণ করা হলে দরিদ্র মানুষের উপরে তার অভিঘাত স্বভাবতই বেশি হবে।

আর্থিক অসাম্য অর্থব্যবস্থার পক্ষে কতখানি ক্ষতিকর, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। একটি মত হল, অর্থব্যবস্থায় বৃদ্ধির হার চড়া হলে, এবং সব আর্থিক শ্রেণির লোকেরই আয়বৃদ্ধি হলে যদি খানিক অসাম্য বাড়েও, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু, ভারতের মতো দেশে, বিশেষত আর্থিক গতিভঙ্গের সময়, তীব্র অর্থনৈতিক অসাম্য গভীর বিপদ ডেকে আনতে পারে। তার একটি দিক হল, জীবনধারণের ন্যূনতম উপাদানগুলিও নাগরিকদের একটা বড় অংশের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। তার মধ্যে যেমন অন্ন-বস্ত্র রয়েছে, তেমনই রয়েছে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। ফলে এক প্রজন্মের আর্থিক অসাম্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিকাশ-সম্ভাবনাকে খর্ব করতে পারে। অন্য দিকে, সম্পদ যদি অতিধনীদের কুক্ষিগত হয়, তবে সার্বিক ভোগব্যয়ে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়া সম্ভব। তাতে আর্থিক বৃদ্ধির ক্ষতি। ফলে, অসাম্য কমানোর কথা ভাবতেই হবে। ‘বন্ধু’ অতিধনীদের চটাতে সরকার রাজি হবে কি না, সে প্রশ্ন অবশ্য ভিন্ন।

India Society rich
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy