Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Siddique Kappan

নির্ভয়

দীর্ঘ কারাবাসের পর মুক্তি পাওয়া সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান কলকাতায় এক আলোচনাসভায় বললেন, যদি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, তবে সদা জাগরূক রাখতে হবে স্মৃতিকে।

An image of ournalist Siddique Kappan

সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩ ০৪:৪৬
Share: Save:

বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির সংগ্রামই হল ক্ষমতার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের লড়াই”— কথাগুলি সদ্যপ্রয়াত লেখক মিলান কুন্দেরার, দীর্ঘ কারাবাসের পর মুক্তি পাওয়া সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানেরও। কলকাতায় এক আলোচনাসভায় সিদ্দিক বললেন, যদি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, তবে সদা জাগরূক রাখতে হবে স্মৃতিকে। ভুলে গেলে চলবে না, রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে শাসক নিপীড়নের পথে কত দূর হেঁটেছিলেন, হাঁটেন। তিনি মনে করালেন, ‘আমরা কিছুই ভুলব না’। একাধিপত্যকামী শাসক কোন কথাগুলি ভুলিয়ে দিতে চান, তা স্পষ্ট। জাতির ইতিহাসও আজ পাল্টাচ্ছে। তেমনই ‘অসত্য’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সামাজিক অন্যায় এবং আর্থিক নিপীড়নের তথ্য-প্রমাণকে। ইতিহাসের বই থেকে বাছাই অংশের বিলুপ্তি, অতীতের ঘটনাবলির এক তথ্যবিরোধী, সঙ্গতিহীন সংস্করণের প্রচার, বিজ্ঞানের পাঠ্যবই থেকে বিবর্তন তত্ত্বের বিলুপ্তি, এ সবই শেষ পর্যন্ত এক বিকৃত, বিদ্বেষদুষ্ট পরিবেশ তৈরি করার প্রচেষ্টা। ভারতে বহুত্ববাদের উত্তরাধিকার, মানবতাবাদের ঐতিহ্যকে এই ভাবে মুছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, কারণ একাধিপত্যকামী শাসক এর বিপ্রতীপ রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম যে কেবল বিদেশি শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল না, ভারতীয় সমাজের অন্যায়, বৈষম্যপূর্ণ প্রথাগুলি থেকে মুক্তির সংগ্রামও ছিল, এই সত্যটি জাতির স্মৃতি থেকে বিলুপ্তির তোড়জোড়কে প্রতিরোধ করা দরকার। সামূহিক স্মৃতিতে সত্যের শিখাটি জাগিয়ে রাখার কর্তব্য এখন আরও বেশি করে এসে পড়েছে নাগরিকের উপরে।

বর্তমানের উপরও বিস্মৃতির প্রলেপ দিতে উদ্যত রাষ্ট্রক্ষমতা। এই দোষে কেবল কেন্দ্রীয় সরকার নয়, বেশ কিছু রাজ্যের সরকারও দায়ী। দারিদ্র ও অপুষ্টির বিপুল প্রকোপ, শিক্ষাপরিবেশ বিনষ্টি, কর্মহীনতার বৃদ্ধি, চাষি ও মজুরের রোজগারে ঘাটতি, মুসলিম ও দলিত-জনজাতিদের নিপীড়ন, মেয়েদের আর্থিক বঞ্চনা— এই তিক্ত বাস্তব যখনই কোনও সমীক্ষায় প্রকাশ হয়, তখনই সে সব তথ্যকে ভ্রান্ত বলে দাবি করেন শাসক। তদুপরি কেন্দ্রে এবং রাজ্যে সরকারি সমীক্ষা প্রকাশই করা হয় না, আন্তর্জাতিক সমীক্ষাগুলিকে নানা অজুহাতে নস্যাৎ করা হয়, আর বেসরকারি সংস্থাগুলিকে যারপরনাই হয়রান করা হয়, যাতে তারা চুপ করে যায়। সত্য প্রকাশ করা, মিথ্যাকে প্রশ্ন করার সাহসকে প্রায় অপরাধের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে আজকের রাষ্ট্র। মনে রাখতে হবে, ভয় দেখিয়ে ভুলিয়ে দেওয়ার এই পন্থাটিও ফ্যাসিবাদেরই সাবেক অস্ত্র।

একে প্রতিহত করার অস্ত্র হল, প্রতিটি নিপীড়নকে দেশবাসীর মনে সদাজাগ্রত রাখা। স্ট্যান স্বামী কারারুদ্ধ অবস্থায় মারা গিয়েছেন, গৌতম নওলাখা রয়েছেন গৃহবন্দি হয়ে, উমর খালিদের কারাবাস হাজার দিন পেরিয়েছে, আটাশ মাস কারারুদ্ধ থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সিদ্দিক কাপ্পান। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে কাপ্পানের আহ্বান এই কারণেই মূল্যবান। কথাগুলিকে প্রকৃত শক্তি জুগিয়েছেন কাপ্পান নিজে। কলকাতার সভায় তিনি একটি অতি মূল্যবান কথা বলে গিয়েছেন: চূড়ান্ত ভয়ের পর যে অবস্থা আসে, তা হল ভয়হীনতা। সেই নির্ভীকতায় অবস্থান নিলে তবেই আগ্রাসী রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। আধিপত্যকামী যে কোনও ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চরম অস্ত্র হল ভয়হীন প্রতিবাদ। গান্ধীর দেশের মানুষকে সে কথা কি বলে দিতে হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Siddique Kappan Indian Journalist Imprisonment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE