Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Israel Palestine Conflict

শিশুমেধ

বাস্তবিক, গুতেরেস কেন, এই ঘটনার পর সমগ্র রাষ্ট্রপুঞ্জেরই আর কোনও গুরুত্ব থাকা উচিত কি না, সেটিই একটি প্রশ্ন।

ছবি: রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:১৮
Share: Save:

যাতে কোনও ভাবেই এই পৃথিবী শিশুদের বাসযোগ্য না থাকে, সেই অঙ্গীকার নিয়ে অব্যাহত রয়েছে হামাস বনাম ইজ়রায়েল যুদ্ধ। যুদ্ধবিরতির চিহ্ন এখনও দূরপরাহত, ইতিমধ্যেই নিহত শিশুর হিসাব ছাড়িয়েছে দুই হাজার। সব মিলিয়ে নিহত যে কত, তার সত্য সংখ্যা দেবা ন জানন্তি, জনরব— সাড়ে পাঁচ হাজার। এ এক গভীর লজ্জা, এমনকি ঘৃণার বিষয় যে মানব-অধিকারের এই ভয়াবহ দলনের পরও যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়নি আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জাপানের মতো শক্তিসমূহ, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে হেরে গিয়েছে সেই প্রস্তাব। এই সূত্রে স্মরণ করা যেতে পারে যে, যে কোনও যুদ্ধের সময় সিভিলিয়ান জনসাধারণকে লক্ষ্য করে নিধনযজ্ঞ চালানো একটি যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। এবং ‘অতিজরুরি নীতি’ বলে সাব্যস্ত হয়েছিল যে ছয়টি বিষয়, তার মধ্যে একটি হল যুদ্ধে শিশুনিধন এবং শিশুর অঙ্গহানি। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেছেন, আর নয়, অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত রাষ্ট্রপুঞ্জের সেক্রেটারি-জেনারেল আন্তোনিয়ো গুতেরেস-এর, যিনি গাজ়ার ঘটনা দেখে ইতিমধ্যে মন্তব্য করেছেন ‘ইভন ওয়র হ্যাজ় রুলস’। বাস্তবিক, গুতেরেস কেন, এই ঘটনার পর সমগ্র রাষ্ট্রপুঞ্জেরই আর কোনও গুরুত্ব থাকা উচিত কি না, সেটিই একটি প্রশ্ন। একেবারে রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফলের মতো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে বিশ্বশান্তির ও আন্তর্জাতিক স্থিতির প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে তৈরি হয়েছিল যে গোষ্ঠী, তা এখন সম্পূর্ণত কতকগুলি বিশেষ দেশের স্বার্থরক্ষার্থে ব্যবহার হয়। এবং সেই স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে অনুন্নত দেশের মানুষের, বিশেষত অশ্বেত সভ্যতার মানুষের দাম কানাকড়ি নয়, শূন্যকড়ি। বিনা দোষে পশুর মতো তাঁদের ও তাঁদের শিশুদের মেধযজ্ঞ চালালেও কিছু বলার বা করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না যে ‘রাষ্ট্রপুঞ্জ’— কোন শক্তি, কোন স্বার্থ এখানে পুঞ্জীভূত, এত নির্লজ্জের মতো তা প্রকাশিত করে দেওয়ার পরও তার অস্তিত্বের কোনও অর্থ থাকে কি?

লক্ষণীয়, কেবল আন্তর্জাতিক শক্তির স্বার্থহিসাবই নয়, এমন একটি ভয়াবহ কাণ্ডে বিশ্বজনমতও কিন্তু তেমন স্পষ্ট ও সরব নয়। এই সূত্রে একটি তুলনা না করে পারা যায় না। দুনিয়া কাঁপানো ৯/১১-র ঘটনাতে মোট নিহতসংখ্যা ছিল হাজার তিনেক। সে দিন তাঁরাও ছিলেন সাধারণ নাগরিক, পরিভাষায় ‘সিভিলিয়ান’। আর আজ, গাজ়া আক্রমণের আগে-পরে যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁরাও তাই। অথচ বিশ্বপৃথিবীর হালচাল এমনই যে, ২০০১ সালের ঘটনায় আবেগ কম্পমান ছিল সাধারণ্যের জন্য, কেননা তাঁরা তথাকথিত ‘সুসভ্যতা’র আলোকবিহারী। আর গাজ়ার মানুষ, এমনকি দুই সহস্র শিশুর জন্যও আজ তেমন কম্পিত নয় ভুবনহৃদয়। একে কী ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, সেটাই প্রশ্ন এখন। বর্ণবিদ্বেষ হতেই পারে একটি সম্ভাব্য কারণ। দরিদ্র প্যালেস্টাইনিদের প্রতি বিদ্বেষ হতেই পারে দারিদ্র-দ্বেষ উদ্ভূত, কিংবা মুসলমানভীতি-প্রসূত। ব্যাখ্যা যা-ই হোক না কেন, নির্বিচার শিশুনিধনের এই কার্যক্রমের ফল কী হতে পারে, তা সম্ভবত সহজেই অনুমেয়। অনুমেয়, যে বিরাট পরিমাণ শিশু অনাথ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ল, সন্ত্রাসের প্রেক্ষিতে এই কালান্তক আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণ ঘটল দুই যুযুধান পক্ষ থেকে, এর ফলে সেই সন্ত্রাস আরও কয়েক প্রজন্ম প্রবাহিত হতে থাকবে। এই ভাবেই প্যালেস্টাইন গোটা পৃথিবীর সর্বাধিক বিপজ্জনক ক্ষতস্থান হয়ে থাকবে আরও অনেক দশক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Israel Palestine Conflict Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE