Advertisement
E-Paper

এগারো

রাজ্যে বিপুল হারে ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। যত মৃত্যুর সংবাদ রোজ আসছে সংবাদে, তাতে স্পষ্ট যে, এ বছর ডেঙ্গি জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আকার ধারণ করেছে।

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২২ ০৪:৫০
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ডেঙ্গিতে মৃতদের সংখ্যা ঘোষণা করলেন। না করলেই বোধ হয় ভাল ছিল। সাদা চোখে মানুষ যা দেখছে, আর সাদা-কালো অক্ষরে সরকার যা লিখছে, তার মধ্যে সম্পর্ক যত ক্ষীণ হয়ে আসে, ততই আস্থা টলে যায় সরকারের উপর থেকে। রাজ্যে যেমন বিপুল হারে ডেঙ্গি ছড়িয়েছে, যত মৃত্যুর সংবাদ রোজ আসছে সংবাদে, তাতে স্পষ্ট যে, এ বছর ডেঙ্গি জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আকার ধারণ করেছে। সংবাদসূত্রে প্রকাশ, অক্টোবরেই সরকারি আধিকারিকরা জনান্তিকে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছিলেন যে, মৃতের সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। নভেম্বরেও রোগের প্রকোপ কমেনি। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে একশোরও বেশি ডেঙ্গি-মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে রাজ্যের সংবাদমাধ্যম। স্বাস্থ্য দফতর থেকে কোনও বিবৃতি অবশ্য প্রকাশ হয়নি। কেন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সরকারি ভাবে জানানো হচ্ছে না, সে প্রশ্ন সঙ্গত ভাবেই তুলেছিলেন বিরোধীরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ভারতী প্রবীণ পওয়ার সম্প্রতি রাজ্যে এসে জানিয়েছেন, কেন্দ্রকেও ডেঙ্গির তথ্য জানায়নি রাজ্য। এমন সমালোচনার মুখে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা এগারো! এতে সত্য কতখানি প্রকাশ পেল, আর কতটা সরকারি ক্ষমতা, তা নিয়ে ধন্দ জাগতে বাধ্য।

ক্ষমতাসীন নেতারা যেন আজ ভাবছেন, সরকারি তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের সংযোগ থাকতে হবে, এমন নিয়ম কোথাও লেখা নেই। আক্রান্ত-মৃতের যে সংখ্যা ঘোষণা করবে সরকার, তা মেনে নিতে সকলে বাধ্য। অতএব, এই পোস্ট-ট্রুথ’এর মহামধ্যাহ্নে যা বললে সুবিধে হয় ক্ষমতাসীন নেতার, সেটাই ঘোষণা করা হবে। রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা এক হতে পারত, একুশও হতে পারত, একান্ন হলেও আপত্তির কারণ থাকত না। মৃতের সংখ্যা ভারতে আজ রাজনৈতিক খেলায় পর্যবসিত হয়েছে, তা নেতাদের মন্তব্য শুনলেই মালুম হয়। তৃণমূল সাংসদ এবং চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেন মনে করিয়েছেন, ভারতে কোভিডে মৃতের সংখ্যা মাত্র সাড়ে চার লক্ষ বলে দেখিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যা পঁয়তাল্লিশ লক্ষ বলে দাবি করেছিল। কেন্দ্রের এই সমালোচনা যথার্থ, কিন্তু ডেঙ্গির প্রেক্ষিতে সেই প্রসঙ্গকে টেনে আনার চেষ্টা আপত্তিকর। কেন্দ্র আপন ব্যর্থতা ঢাকতে পরিসংখ্যানে জল মিশিয়েছে, অতএব রাজ্য সরকারই বা কেন নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে মৃতের সংখ্যায় জল মেশাবে না— এমনই কি ইঙ্গিত দিচ্ছেন চিকিৎসক-সাংসদ?

এমন অর্থহীন চাপান-উতোর শুনতে শুনতে ক্লান্ত, বিরক্ত রাজ্যবাসী। দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতা, প্রতিটি সঙ্কটেই নেতা-মন্ত্রীদের বক্তব্য ঘুরে-ফিরে আসে একই কথায়— ও পক্ষ কী করেছিল? যেন দলীয় প্রতিযোগিতাই শেষ কথা, রাজ্যবাসীর কাছে ব্যর্থতার জবাবদিহির দায় কোনও দলের নেই। কত মানুষ প্রাণ দিলেন ডেঙ্গিতে, সে সম্পর্কে সত্য জানার অধিকার নেই নাগরিকের। নেতাদের এই অন্তঃসারশূন্য, বিরক্তিকর বচসাকে ‘ছেলেমানুষি’ বলে অগ্রাহ্য করা যেত, যদি না তা ক্রমশ সত্য গোপন, বা সত্যের অপলাপকে ‘স্বাভাবিক’ করে তোলার চেষ্টা করত। এ রাজ্যে এখনও অবধি পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা অজ্ঞাত, কারণ সে সংখ্যা রাজ্য সরকারকে বিব্রত করতে পারে। একই কারণে প্রতি বছর চাষির আত্মহত্যার সংখ্যা শূন্য দেখায় সরকার। বাস্তবকে অস্বীকার করে নিজের বাহাদুরি জাহির করার এমন ভয়ানক খেলার ফলে যথাযথ নীতি তৈরি হয় না, সময় থাকতে প্রতিরোধের ব্যবস্থা হয় না, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ মেলে না। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ব্যর্থতা ঢাকার এই বিকৃত, বীভৎস খেলা দেখতে থাকাই কি রাজ্যের নিয়তি?

Mamata Banerjee Dengue West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy