E-Paper

উপদ্রুত

গ্রাম, পশুচারণ ক্ষেত্র বা জঙ্গলের প্রান্তে আধুনিক শহর গড়ে তোলার কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে। সেখানকার বাস্তুতন্ত্র, জীববৈচিত্রের সঙ্গে আধুনিক সভ্যতার প্রাথমিক টানাপড়েন অনিবার্য।

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩ ০৪:৪৬
snake.

—প্রতীকী ছবি।

উজ্জ্বল দীপের ঠিক নীচটিতেই অন্ধকার, আর নিউ টাউনের মতো অত্যাধুনিক এলাকার আনাচেকানাচেই লুকিয়ে সর্পদংশনের ভয়। ভরসন্ধ্যায় শপিং মলের কাছের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় সাপের কামড়ে মৃত্যু হল এক তরুণের। এবং এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। শোনা যায়, প্রায়শই কলকাতার উপকণ্ঠের এই অত্যাধুনিক শহরে চন্দ্রবোড়া, কালাচ-সহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ঢুকে পড়ে বহুতল আবাসনে, কখনও অফিসে। নিউ টাউন গড়েই উঠেছে ফাঁকা মাঠ, জলাজমি ভরাট করে। ব্যাহত হয়েছে সেখানকার স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র। সুতরাং, সেখানে যে এই জাতীয় উপদ্রব হতে পারে, তা অনুমান করা অসম্ভব ছিল না। গ্রীষ্মকালে, বর্ষার আগমনে গ্রামাঞ্চলের দিকে সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি নতুন নয়। সঠিক পদ্ধতিতে সেই উপদ্রব সামলানো সম্ভব। তা সত্ত্বেও নিউ টাউনের মতো পরিকল্পিত জনবসতি গড়ে তোলার সময় ন্যূনতম নাগরিক সুরক্ষার এই দিকগুলি নিয়ে যে যথাযথ ভাবনাচিন্তা করা হল না, এবং তার প্রতিরোধের বা চিকিৎসার যথেষ্ট ব্যবস্থাও করা হল না সরকারি তরফে, তা বিস্ময়কর।

গ্রাম, পশুচারণ ক্ষেত্র বা জঙ্গলের প্রান্তে আধুনিক শহর গড়ে তোলার কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে। সেখানকার বাস্তুতন্ত্র, জীববৈচিত্রের সঙ্গে আধুনিক সভ্যতার প্রাথমিক টানাপড়েন অনিবার্য। উভয় পক্ষেরই মানিয়ে নেওয়া সময়সাপেক্ষ। স্মরণীয়, সদ্য গড়ে ওঠা নিউ টাউনের রাস্তায় আচমকা গরু চলে আসায় এক সময় বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের মূল দায়িত্ব, বিপজ্জনক অঞ্চল সম্পর্কে গাড়িচালকদের সতর্ক করা। কিন্তু সেই সতর্কতা মেনে চলা, এবং নিজ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মূল কাজটি কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাগরিকেরই। সতর্কতা সত্ত্বেও গতিসীমা না মেনে গাড়ি চালিয়ে কেউ যদি নিজের এবং হঠাৎ আসা প্রাণীটির মৃত্যুর কারণ হন, তা হলে সেই দায় প্রশাসনের হতে পারে না। কিন্তু সাপের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। শুধুমাত্র বিধিসম্মত সতর্কীকরণের নিয়ম এখানে খাটে না। যে কোনও সভ্য দেশে যখন জলাজমি, ধানজমির উপর জনবসতি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়, তখন তার সর্বাগ্রগণ্য কাজগুলির অন্যতম— সাপের হানা আটকানোর ব্যবস্থা করা। এবং সেই কাজটি প্রশাসনেরই। গুরুতর কাজ, কেননা এর সঙ্গে নাগরিক জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নটি জড়িত। কেবল শহরে নয়, গ্রামাঞ্চলেও এই কাজ সভ্য দেশে অনেক দূর এগোনোর কথা। কিন্তু উজ্জ্বল নব্য-নগরীতেই এই পরিস্থিতি হলে গাঁ-গঞ্জের মানুষের প্রাণের নিরাপত্তার দায় যে কেউ নেবে না, এ আর বলে দিতে হয় না।

সর্পদষ্ট রোগীর চিকিৎসার আধুনিক পরিকাঠামো না থাকার বিষয়টিও অমার্জনীয় অপরাধ। সাপের উপদ্রব থেকে বাঁচতে সেখানে বিভিন্ন আবাসনে বাসিন্দাদের উদ্যোগে প্রতিষেধক এবং আনুষঙ্গিক ওষুধ মজুত রাখা হচ্ছে, কার্বলিক অ্যাসিড ছড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, এখন ওখানকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও প্রতিষেধক ও ওষুধ রাখা হচ্ছে। কিন্তু বিলম্বে বোধোদয় কেন? আরও প্রশ্ন, কোথায় গেলে দ্রুত চিকিৎসা রোগী পেতে পারেন, সেই বিষয়ে বাসিন্দাদের অবহিত করা হচ্ছে তো? ‘স্মার্টসিটি’তে শুধুমাত্র সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়নি বলে সাপের কামড়ে এক জনকে মারা যেতে হল। এই লজ্জা কি নব্য-নগরায়ণের চোখধাঁধানো আলো ঢাকতে পারবে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Snakes New Town Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy