Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
National Institute of Homeopathy

শাস্তির মুখে

অন্যায় যে করে এবং অন্যায় যে সহ্য করে, উভয়েই অপরাধী। সুতরাং, শাস্তিও উভয়েরই প্রাপ্য। সেই শাস্তি কী, এবং তার মাত্রা কতটা হওয়া উচিত, তা আলোচনা সাপেক্ষ।

ragging

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৯
Share: Save:

পড়ুয়াদের শাস্তি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিয়োপ্যাথি’ (এনআইএইচ)। প্রথম বর্ষ বাদে কলেজের সমস্ত বর্ষের পড়ুয়াকে হস্টেল থেকে সাসপেন্ড এবং আর্থিক জরিমানা। পড়ুয়াদের অপরাধ, তারা র‌্যাগিং-এর ঘটনা জানা সত্ত্বেও প্রতিবাদ করেনি। এমনকি তাদের নীরবতার কারণে অভিযুক্তদের চিহ্নিতও করা যায়নি। উল্লেখ্য, এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের র‌্যাগিং-বিরোধী সেলের বিধি অনুযায়ী। পড়ুয়াদের নীরবতায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা না গেলে সে ক্ষেত্রে গণশাস্তির বিধান রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, র‌্যাগিং-এর মতো অপরাধ ঘটছে দেখেও যদি অন্য পড়ুয়ারা মুখে কুলুপ এঁটে থাকে, তবে সেটিকেও অপরাধ বলে মনে করে ইউজিসি। সেই কারণেই কলেজে ভর্তির সময় পড়ুয়া ও তার অভিভাবককে মুচলেকা দিয়ে অঙ্গীকার করতে হয় যে, র‌্যাগিং-এর ঘটনা জানতে পারলে পড়ুয়া তা কর্তৃপক্ষের নজরে আনবে এবং নিজেও প্রতিবাদ করবে। তা সত্ত্বেও অবশ্য অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবচিত্রের পরিবর্তন ঘটে না। নির্যাতন হচ্ছে জেনেও পড়ুয়ারা চুপ থাকে, কর্তৃপক্ষও উপযুক্ত শাস্তিবিধানে অনিচ্ছুক হন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাগিং-কাণ্ডে হস্টেলের একটি ব্লকের সমস্ত আবাসিককে সাসপেন্ড করার প্রস্তাব এলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এনআইএইচ কর্তৃপক্ষ সেই বাঁধা পথে হাঁটেননি।

অন্যায় যে করে এবং অন্যায় যে সহ্য করে, উভয়েই অপরাধী। সুতরাং, শাস্তিও উভয়েরই প্রাপ্য। সেই শাস্তি কী, এবং তার মাত্রা কতটা হওয়া উচিত, তা আলোচনা সাপেক্ষ। কিন্তু যেখানে বহু প্রচেষ্টা সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে র‌্যাগিং-এ রাশ টানা সম্ভব হচ্ছে না, সম্প্রতি একাধিক দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, সেখানে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। বিভিন্ন ঘটনায় প্রমাণিত যে, র‌্যাগিং-এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে পড়ুয়াদের সামান্য অংশই। অবশিষ্ট এক বিরাট সংখ্যক পড়ুয়া অন্যায় দেখেও নীরব থাকে। অথচ, তারা প্রাপ্তবয়স্ক। র‌্যাগিং যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সে বিষয়ে অজ্ঞাত নয়। তা সত্ত্বেও তাদের নীরবতা পরোক্ষে সেই অন্যায়কেই প্রশ্রয় জোগায়। অন্য দিকে, প্রাপ্তবয়স্ক, তদর্থে এই দেশের নাগরিক বলেই তাদের কিছু নির্দিষ্ট কর্তব্য রয়েছে। প্রথম কর্তব্য অবশ্যই নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সুনাম বজায় রাখা এবং শিক্ষার সুস্থ পরিবেশটিকে অক্ষুণ্ণ রাখা। দ্বিতীয় কর্তব্যটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের নাগরিক হিসাবে নিজ সহ নাগরিকদের এক সংগঠিত অন্যায়ের শিকার হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো। এই পর্যায়েও যদি তারা প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পক্ষে তা সু-ইঙ্গিতবাহী নয়।

তবে, পড়ুয়াদের কঠোর শাস্তিপ্রদানে র‌্যাগিং প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা ঢাকা পড়ে না। এ ক্ষেত্রে শাস্তিবিধানের চেয়েও প্রতিরোধ অধিকতর কাম্য ছিল। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে র‌্যাগিং নির্মূল করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুস্পষ্ট নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও এবং তাতে বিস্তারিত ভাবে উদ্দেশ্য, কী ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, কোন বিষয়গুলি শাস্তিযোগ্য প্রভৃতি বর্ণনা করা হলেও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও র‌্যাগিং-এর ঘটনা শোনা যাচ্ছে। তাদের নিজস্ব নজরদারি কমিটি কী করছিল, সে প্রশ্ন তোলা জরুরি। পড়ুয়ারা শাস্তি পেল, কিন্তু যাঁদের ব্যর্থতায় এখনও এই অপরাধ ঘটে চলেছে, তাঁদের শাস্তিও নিশ্চিত হবে তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ragging Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE