Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Union Budget 2023

বোঝা

কম করের ফলে হাতে থাকা বাড়তি টাকা ভোগব্যয়ে খরচ হবে, এমনটা আশা করা চলে। তাতে সামগ্রিক চাহিদা বাড়বে, অর্থব্যবস্থায় তার সুপ্রভাব পড়বে।

Picture of Nirmala Sitharaman.

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই।

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫৭
Share: Save:

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট মধ্যবিত্তের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেছে। বেশ কিছু বছর পরে আয়করের উপরে তাৎপর্যপূর্ণ ছাড়ের ব্যবস্থা হল বাজেটে। এই ছাড় প্রকৃতপক্ষে কত জনের কাছে লাভজনক হবে, তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন অবশ্য উঠছে। কিন্তু সেই খুঁটিনাটি হিসাবে না ঢুকে আপাতত অর্থমন্ত্রীর দাবিটিই মেনে নেওয়া যাক— যাঁদের আয় তুলনামূলক ভাবে কম, এই করছাড়ে তাঁরা লাভবান হবেন। মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ না কমিয়ে যদি তুলনায় স্বল্পবিত্তদের করে ছাড় দেওয়া যায়, তা নিয়ে আপত্তি করার বিশেষ কারণ নেই। তাতে দেশের কত শতাংশ মানুষের লাভ হবে, সে প্রশ্ন ভিন্ন— একটি হিসাব বলছে যে, অন্তত এক জন আয়কর দেন, এমন পরিবার দেশে দশটির মধ্যে মাত্র একটি। অর্থাৎ, দেশের নব্বই শতাংশ পরিবারের কাছেই এই করছাড়ের কোনও প্রত্যক্ষ গুরুত্ব নেই। যাঁরা এই ছাড় পাবেন, অনুমান করা চলে যে, তাঁদের ভোগব্যয়ের পরিমাণ বাড়বে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, করের এই সুবিধা পাওয়া যাবে শুধুমাত্র নতুন ব্যবস্থায়। সেই ব্যবস্থায় ফিক্সড ডিপোজ়িট, জীবন বিমা বা পাবলিক প্রভিডেন্ড ফান্ডের মতো জায়গায় সঞ্চয়ের জন্য করছাড় পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কম করের ফলে হাতে থাকা বাড়তি টাকা ভোগব্যয়ে খরচ হবে, এমনটা আশা করা চলে। তাতে সামগ্রিক চাহিদা বাড়বে, অর্থব্যবস্থায় তার সুপ্রভাব পড়বে।

কিন্তু, এখানে একটি বড় প্রশ্ন থেকে যায়। আয়কর কমার ফলে, এবং অন্যান্য প্রত্যক্ষ কর অপরিবর্তিত থাকায়, রাজস্বে যে ঘাটতি হবে, তা পূরণ করা হবে পরোক্ষ কর রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে। পরোক্ষ কর চরিত্রে রিগ্রেসিভ— অর্থাৎ, যাঁর আয় যত কম, তাঁর উপর আয়ের অনুপাতে পরোক্ষ করের বোঝা ততই বেশি। দেশের ধনীতম ব্যক্তি এবং হাসিম শেখ বা রামা কৈবর্ত যে কোনও পণ্যের উপর একই হারে পরোক্ষ কর দিয়ে থাকেন। ভারতের রাজস্ব ব্যবস্থার ঝোঁক এমনিতেও পরোক্ষ করের দিকেই। সে ঝোঁক যদি আরও বাড়ে, তা হলে দরিদ্রতর মানুষের উপর করের বোঝা আরও বেশি চেপে বসবে। এই অবস্থা কখনও কাম্য হতে পারে না। প্রত্যক্ষ করের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করাই পথ, কিন্তু তার জন্য তুলনায় অসচ্ছল মানুষের জন্য করের বোঝা লাঘব করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার কারণ নেই। সাম্প্রতিক কালে এ বিষয়ে অক্সফ্যাম-এর সারভাইভাল অব দ্য রিচেস্ট নামক রিপোর্টে যে আলোচনা করা হয়েছে, তা স্মরণ করা যেতে পারে।

অর্থমন্ত্রী অতিধনীদের জন্য করের হার কমিয়েছেন। তাঁদের সর্বোচ্চ করের হার ৪৩% থেকে কমে হয়েছে ৩৯%। এই প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বললেন, বিশ্বের প্রায় কোথাও এত চড়া সর্বোচ্চ করের হার নেই। অনুমান করা চলে, হার কমানোর পিছনে যে যুক্তিটি কাজ করেছে, তা হল— ভারতের সর্বোচ্চ করের হারকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিযোগিতার যোগ্য করে তুলতে হবে। তা হলে অতিধনী লগ্নিকারীরা ভারতে লগ্নি করার কথা ভাববেন। যুক্তিটিতে ভুল নেই, কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিন্ন কথা বলে। ভারতে কর্পোরেট করের হার চড়া ছিল— ২০১৯ সালে তা বহুলাংশে ছেঁটে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার যোগ্য করে তোলা হয়। কর্পোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি বিলক্ষণ আছে, কিন্তু ভারতে কর কমানোর ফলে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেড়েছে কি? সর্বোচ্চ করের হার কমালেই বিনিয়োগের পরিমাণ বা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে, সে নিশ্চয়তাও নেই। বরং, আর্থিক অসাম্য কমলে অর্থব্যবস্থার লাভ হতে পারে। দরিদ্র মানুষের হাতে থাকা টাকা মূলত ভোগব্যয়েই খরচ হয়, ধনীর টাকা বহু ক্ষেত্রে সঞ্চয়ে গচ্ছিত থাকে। ফলে, দরিদ্র মানুষের হাতে টাকার জোগান বাড়লে চাহিদা বৃদ্ধি পেতে পারত। কর-সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় অর্থমন্ত্রী কথাগুলি ভেবেছিলেন কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE