Advertisement
E-Paper

অরণ্যের দায়

বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামগ্রিক চিত্রে অরণ্য ক্ষয়ের ভূমিকা নেতারা কোনও ভাবেই এড়াইতে পারেন না।

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২১ ০৫:২৪
জ্বলছে  আমাজ়ন।

জ্বলছে আমাজ়ন।

জলবায়ু সম্মেলনে যায় নাই, কিন্তু ২০৩০-এর মধ্যে দেশে বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ করিয়া অরণ্যনাশের চাকা ঘুরাইয়া দিবে বলিয়া শপথ করিয়াছিল ব্রাজিল। প্রতিশ্রুতি করা হয় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিতেই, এই প্রচলকথার সার্থকতা প্রমাণেই হয়তো, সম্প্রতি জানা গেল ভয়ঙ্কর তথ্য: ২০২০-২১ সালে ব্রাজিলের আমাজ়ন অঞ্চলে ১৩ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি অরণ্য মুছিয়া গিয়াছে, বৃক্ষচ্ছেদন বাড়িয়াছে ২২ শতাংশ— গত পনেরো বৎসরে সর্বাধিক। জানাইয়াছে ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইনপে’। এই তথ্য হেলাফেলার তো নহেই, বরং আতঙ্কের— দেশনেতা, নীতি-নিয়ন্তাদের মুখ ও মনের নির্লজ্জ ফারাক বাহির হইয়া পড়িবার আতঙ্ক। প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর পরিবেশ-নীতি, বিশেষত আমাজ়ন-নিরাবেগ সর্বজনবিদিত— ক্ষমতায় আসিবার পর হইতে আমাজ়নে কৃষি ও খননকার্যে ঢালাও উৎসাহ দিতেছেন তিনি। মনে রাখিবার, আমাজ়ন যেন তেন অরণ্যাঞ্চল নহে, ত্রিশ লক্ষেরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর ঠিকানা, সাড়ে তিনশোর অধিক পৃথক জনগোষ্ঠীর প্রায় তিন কোটি মানুষের বাসস্থান। কেবল নিজস্ব বিপুল জীববৈচিত্রের জন্যই নহে, পৃথিবী নামক গ্রহটির ক্রমোষ্ণ হইয়া উঠিবার গতি মন্থর করিবার কাজে আমাজ়নের ভূমিকা অবিসংবাদী। আমাজ়ন ভৌগোলিক ভাবে ব্রাজিলের সম্পত্তি বটে, কিন্তু গুরুত্বের নিরিখে সে বিশ্বসম্পদ। বিখ্যাত পরিবেশ সংস্থার অনুসন্ধান দেখাইয়া দিয়াছে, আমাজ়নে অরণ্য ধ্বংসের প্রভাব কী ভাবে আন্তর্জাতিক জোগান-শৃঙ্খলকে প্রভাবিত করে, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলি হইতে ব্রিটেনের সুপারমার্কেট-রেস্তরাঁও তাহার প্রতিক্রিয়ামুক্ত নহে। অথচ ব্রাজিলের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে ইনপে-র তথ্য অভিসন্ধিমূলক, বিশ্বের সামনে ব্রাজিলকে খাটো করিবার কৌশল। নেতা বলিতেছেন, সব ঠিক আছে, ভাল আছে।

আমাজ়ন আমাজ়ন বলিয়াই তাহার সবুজ-ধ্বংস লইয়া বিশ্ব স্তরে প্রতিবাদের কমতি নাই। তুলনায় ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন লইয়া উদ্বেগের স্বরগ্রাম এত নিচু কেন? অথচ সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যগুলির একটি, ঐতিহাসিক ভাবে এই বনাঞ্চল এই রাজ্য ও জনজীবনকে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হইতে রক্ষা করিয়াছে। আমপান-এ সুন্দরবনের ১২০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল ধ্বংস হইয়া গিয়াছে, তবু পরিবেশবিদ হইতে সুন্দরবনবাসী মাত্রেই জানেন, এই বন আছে বলিয়াই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ইহার অধিক হয় নাই। বস্তুত সুন্দরবন আছে বলিয়াই কলিকাতা মহানগরী ঘূর্ণিঝড়ের সম্পূর্ণ প্রকোপ বুঝিতে পারে না। গবেষণা বলিতেছে, ম্যানগ্রোভ অরণ্য ঘূর্ণিঝড়ের প্রাবল্য কমাইয়া দিবার ক্ষমতা রাখে। অথচ সেই সুন্দরবনেও বনক্ষয় ত্বরান্বিত হইতেছে; সুন্দরী গাছ প্রায় বিরল, সংরক্ষিত ‘বায়োস্ফিয়ার রিজ়ার্ভ’ হওয়া সত্ত্বেও। বন্যা, ভূমির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়জনিত চাপ তো আছেই, তদুপরি মানুষের জীবনধারণের প্রয়োজনে ক্রমাগত গাছ কাটিবার সাক্ষী হইতেছে এই অঞ্চল। রাজ্যের আইন ও ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ আছে, কারাবাস ও জরিমানার শাস্তিও, তবু মুছিয়া যাইতেছে ম্যানগ্রোভ। আমাজ়ন হউক বা সুন্দরবন— বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামগ্রিক চিত্রে অরণ্য ক্ষয়ের ভূমিকা নেতারা কোনও ভাবেই এড়াইতে পারেন না। আঞ্চলিক হইতে বৈশ্বিক সর্ব স্তরে সেই দায় ও দায়বদ্ধতা স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন।

Amazon Sundarban
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy