Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Coronavirus

বিভাজনের বিপদ

অতিমারিতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারই বেসরকারি ছাড়িয়া সরকারি স্কুল বাছিয়া লইয়াছে।

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৬:২২
Share: Save:

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উপর অতিমারির ভয়ানক অভিঘাত যে পড়িয়াছে, ইহা লইয়া সংশয় ছিল না— কিন্তু তাহার প্রাবল্য কতখানি, উহা প্রকাশিত হইল এক বার্ষিক সমীক্ষায়। গ্রামাঞ্চলের ৭৫,২৩৪ জন শিশু শিক্ষার্থীকে লইয়া সম্পন্ন দেশের প্রাচীনতম শিক্ষা-সমীক্ষায় যে তথ্য মিলিয়াছে, তাহা যেমন চিন্তার, তেমনই উহাতে শিখিবার এবং সংশোধন করিবার সুযোগও আছে। বিদ্যালয় ভবন বন্ধ থাকিবার কালে যাহাকে বিকল্প ভাবা হইয়াছিল, সেই অনলাইন শিক্ষা যে তাহার ভূমিকাটি পালনে ব্যর্থ, এই সমীক্ষা তাহা নিশ্চিত ভাবে জানাইয়াছে। ভারতে ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর হয় যন্ত্রের জোগান নাই, নয়তো তাহা ব্যবহারের সুবন্দোবস্ত নাই। অতএব, গৃহে বসিয়াও স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থাকে কী ভাবে আগাইয়া লওয়া যায়, ভারতে সেই হিসাব কষা অর্থহীন। আজিকার ভারতে প্রযুক্তি শিক্ষাকে সর্বজনীন করিয়া তুলিতে পারিবে না, বরং তাহা নূতন বিভাজিকার জন্ম দিতেছে, এই কথাটি আরও এক বার স্মরণ করাইয়া দিয়াছে রিপোর্টটি।।

এই বিভেদজনিত ক্ষতি নানা ভাবে প্রকাশিত। প্রথমত, অতিমারিতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারই বেসরকারি ছাড়িয়া সরকারি স্কুল বাছিয়া লইয়াছে। বাধ্যত এক বিকল্পের বিলয় শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে সুসংবাদ হইতে পারে না। দ্বিতীয়ত, যাঁহাদের সামান্য সংস্থান আছে, তাঁহারা পড়াশোনার সহিত সংযোগ রক্ষার্থে সন্তানদের প্রাইভেট টিউশনে পাঠাইয়াছেন। এই ঝোঁকের ফলে শিক্ষার মানের সহিত আপস করা হইয়াছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠিবেই। সমীক্ষাতেও তাহা প্রকাশিত— শিশুদের পড়া বুঝিতে না পারিবার অসুবিধাকেই এই মুহূর্তের সর্ববৃহৎ সঙ্কট রূপে চিহ্নিত করিয়াছেন দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষক। অনেক মাস যাবৎ বিদ্যালয়ের সহিত বিচ্ছিন্নতা গ্রামাঞ্চলের বহু ক্ষেত্রে বস্তুত শিক্ষা হইতেই বিচ্ছিন্নতা। অতএব শিশুদের শিখিবার অভ্যাসটি নষ্ট হইয়াছে, একটি অংশ সেই প্রক্রিয়ায় প্রবিষ্ট হইবার সুযোগও পায় নাই। শেষাবধি তাই স্কুল যখন খুলিতেছে, তখন শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের উত্তর দিবার বা আঙুলের কর গুনিবার বিদ্যাও বিস্মৃত হইয়াছে। লেখাপড়া হইতে দূরে সরিয়া যাইবার এই ফাঁক বুজাইতে না পারিলে নূতন ভাবে শিক্ষাচর্চার সূচনা করাই দুরূহ হইয়া উঠিবে।

অতিমারি-উত্তর পর্বে স্কুলশিক্ষা এক নূতন হিসাবনিকাশে চিরাচরিত প্রণালীতে ফিরিবার উদ্যোগ করিতেছে, সুতরাং পঠনপাঠনের ভাবনাকে পরিবর্তিত ব্যবস্থায় সাজিয়া লইবার প্রশ্নটিই এক্ষণে সর্বাপেক্ষা জরুরি। বস্তুত উপরোক্ত চ্যুতির সঙ্কট মিটানো যাইবে কি না, তাহা এই ভাবনার ক্ষমতার উপরেই নির্ভরশীল। বুঝিতে হইবে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা অদ্যাবধি ক্লাসঘরের অবয়ব বিষয়েই অবহিত নহে, কিছু শিখাইবার পূর্বে তাহাদের সহিত যোগাযোগ করিবার উপায়টি অধিগত করাই প্রাথমিক কাজ। অপরাপর শ্রেণির বিদ্যালয়-বিচ্ছিন্ন শিক্ষার্থীদেরও পাঠ্যক্রমের পূর্বে শিখিবার ক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাস ফিরাইয়া দেওয়া প্রয়োজন। না হইলে দেশের বৃহদংশের ছাত্রছাত্রীর যে দীর্ঘকালীন ক্ষতি হইয়াছে, তাহা চিরস্থায়ী হইবার আশঙ্কা। অতিমারি যেন একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ— দেশের সমাজ ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ— কাড়িয়া লইতে না পারে। সেই দায়িত্ব শিক্ষাব্যবস্থাকেই লইতে হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Online Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE