Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
sound crackers

শব্দাসুর

আইন আছে আবার তাহার ফাঁকও, প্রশাসনের কড়াকড়িও আছে আবার গড়িমসিও— এই পরস্পরবিরোধী পরিস্থিতিতে শব্দবাজির অত্যাচার নির্মূল হইবে না।

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩১
Share: Save:

ভবানীপুর উপনির্বাচনে তৃণমূলের বিরাট জয়ের পরে দেদার শব্দবাজি পুড়িল। প্রার্থীর ধার-ভার ও বিপুল ব্যবধানে জয়, দুইয়ের বিবেচনায় উচ্ছ্বাসের কারণ আছে বটে, শারদোৎসব আসন্ন বলিয়া রভসও খানিক বেশি। কিন্তু আইন মানা হইল কি? এই রাজ্যে শব্দবাজির ক্ষেত্রে ডেসিবেল-সীমা আগে হইতেই আইন-নির্দিষ্ট, উপরন্তু হাই কোর্টের নির্দেশে গত বারের উৎসব মরসুমে গুচ্ছ বিধিনিষেধ ছিল, যাহার অন্যতম শব্দবাজি ও আতশবাজি বিক্রয় ও পোড়ানোতেও নিষেধাজ্ঞা। সেই বিধি এই বারেও বহাল, তবু উপনির্বাচনের বিজয়োৎসবে উদ্বেল ভিড়ে নৃত্যগীত-আবিরের সঙ্গী শব্দবাজিতেই বার্তাটি পরিষ্কার: আইন আইনের পথে চলিবে, আইন অমান্যও পাশাপাশি কলার তুলিয়া পথ হাঁটিবে।

আদালতের রায়ে পূজামণ্ডপ পর্যন্ত দর্শকশূন্য করা যায়, কোভিডকালে রাজ্যের উৎসববিধির জোর খাটাইয়া জনস্রোত, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, সিঁদুরখেলা ও প্রতিমা নিরঞ্জন সামলানো যায়, কিন্তু শব্দাসুরের মোকাবিলা করা যায় না কেন? প্রতি বৎসর বাজির বিক্রয়স্থলগুলিতে পুলিশ হানা দেয়, ধরপাকড় চলে, তবু যথাসময়ে দেখা যায়, শব্দবাজির দৌরাত্ম্যে নাগরিকের প্রাণ ওষ্ঠাগত। শহরতলি বা মফস্‌সল হইতে এমন খবরও আসে, বাড়ি বা গুদামের আড়াল ব্যবহার করিয়া শব্দবাজি বিক্রয়ের পরামর্শ দিয়াছে খোদ পুলিশই। শব্দবাজি উপভোগে ধনী-নির্ধন, শিক্ষিত-নিরক্ষরে ভেদ নাই, অতিমারিজর্জর গত বৎসরে উৎসবকালে কলিকাতার বহুতল আবাসনগুলিতেই বিস্তর বাজি পোড়াইবার অভিযোগ উঠিয়াছিল। রাজ্য সরকারের এই বারের নির্দেশিকায় পঞ্চমী হইতে লক্ষ্মীপূজা অবধি রাত্রিকালীন গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রণ নাই। ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন, শব্দবাজির তাণ্ডব রাতে বাড়ে। নিশিনিয়মহীন এই বৎসরে তাহা কত দূর পর্যন্ত যাইবে ভাবিয়া শঙ্কিত হইতে হয়। কোভিড অজস্র প্রাণ কাড়িয়াছে, যাঁহারা এই অসুখের সহিত যুঝিয়া সারিয়া উঠিয়াছেন, তাঁহাদের শরীর-স্বাস্থ্যেরও গুরুতর ক্ষতি করিয়া গিয়াছে। তথ্য বলিতেছে, কোভিড হইতে সারিয়া উঠা মানুষের হৃদ্‌যন্ত্র, ফুসফুস, কানের কার্যক্ষমতা কমিয়াছে, বাড়িয়াছে মানসিক চাপ, পরিপার্শ্বের সামান্য তারতম্যে অস্বাভাবিক উদ্বিগ্ন বা অসুস্থ হইয়া পড়িবার প্রবণতা। উৎসবের রাতে মাত্রাছাড়া শব্দবাজির প্রকোপে ঘরের বয়স্ক মানুষ, শিশু ও পোষ্যরা এমনিতেই ভীত সন্ত্রস্ত হইয়া থাকে, সেখানে কোভিড-স্পৃষ্ট রোগীদের শরীর-মনের অবস্থা ভাবিতেও আতঙ্ক জাগে।

শব্দবাজি রুখিতে পুলিশের চেষ্টা আছে, কিন্তু তাহা নিখুঁত নহে। নাগরিক সমাজের বহুলাংশ শব্দবাজি ব্যবহারের বিরোধী, কিন্তু একাংশের বিপ্রতীপ আচরণে প্রশাসনের যাবতীয় তৎপরতা ব্যর্থ হইতেছে। আইন আছে আবার তাহার ফাঁকও, প্রশাসনের কড়াকড়িও আছে আবার গড়িমসিও— এই পরস্পরবিরোধী পরিস্থিতিতে শব্দবাজির অত্যাচার নির্মূল হইবে না। আইনকে কাজে লাগাইতে হইবে কঠোর ভাবে, দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির পদক্ষেপ হইতে হইবে দৃষ্টান্তমূলক। গত বৎসর বাজির বদলে মাস্ক সঙ্গে রাখিবার প্রচার করিয়াছিল পুলিশ, বাড়াইতে হইবে সেই প্রচার। প্রতি বছর শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নাগরিকের নিগৃহীত এমনকি নিহত হইবারও খবর আসে, তাহা ঘটিতে দেওয়া যাইবে না কোনও মতেই। চাই নৈঃশব্দ্যের শান্তি, তাহারই সাধনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sound crackers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE