Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
India And France

নিকট বন্ধু

মোদী যে সময়ে ফ্রান্স সফরে গিয়েছিলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মণিপুরের হিংসা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারের সমালোচনার প্রস্তাব নেয়।

French President Emmanuel Macron and Indian Prime Minister Narendra Modi

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরঁ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩ ০৫:৩৬
Share: Save:

কৌশলগত দিক থেকে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সম্পর্ক থাকলেও গুরুত্বের দিক থেকে সব দেশকে সমান আসনে বসানো যায় না। এই প্রসঙ্গে দু’টি প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রথমত, এ-হেন কৌশলগত সম্পর্কের পরিধি সামগ্রিক ভাবে কত দূর বিস্তৃত? দ্বিতীয়ত, সম্পর্কটি কি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে? ভারত ও ফ্রান্সের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে সে দেশ সফরকালীন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বাস্তিল দিবসের মুখ্য অতিথি বানানো এবং সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন সম্মান প্রদানে দুই প্রশ্নের উত্তরই যুগপৎ পাওয়া যায়। বলা বাহুল্য, কাশ্মীর থেকে পরমাণু শক্তি পরীক্ষা থেকে চিন— দশকের পর দশক ধরে বহু পরিস্থিতিতেই পশ্চিমি দেশটিকে পাশে পেয়েছে ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্য পদের সমর্থনে ফ্রান্সই প্রথম ভেটো দিয়েছিল। তা ছাড়া, ১৯৭৪ ও ১৯৯৮— এই দু’বছরে ভারতের পরমাণু শক্তি পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ পশ্চিমি দেশগুলি যখন নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তাতে যোগ দেয়নি ফ্রান্স। শুধু তা-ই নয়, ২০২০ সালে চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদের সময় ফ্রান্সই প্রথম ভারতকে সামরিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিল। অন্য দিকে, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান বজায় রেখে, দুই দেশই পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। প্রসঙ্গত, মোদী যে সময়ে ফ্রান্স সফরে গিয়েছিলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মণিপুরের হিংসা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারের সমালোচনার প্রস্তাব নেয়। সে প্রস্তাব কূটনৈতিক ভাবে অসঙ্গত নয়, কিন্তু তবু ফ্রান্সে বৈঠকে তা আলোচিত হয়নি। একই ভাবে ভারতও ফ্রান্সে হিংসার কারণে আলজিরীয় অভিবাসী এক তরুণের মৃত্যুর প্রসঙ্গ উত্থাপন করেনি। বরং, দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা, মহাকাশ এবং পারমাণবিক শক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার সঙ্কল্পই শোনা গিয়েছে।

প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ফ্রান্স। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ভারতকে বাধ্য করেছে একটি দেশের উপরে অত্যধিক নির্ভরতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে। তাই বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলির সঙ্গে প্রতিরক্ষা অংশীদারি প্রসারিত করার উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছে ভারত। এই সূত্রে ফ্রান্সের মতো দেশের সহযোগিতা তার প্রয়োজন, যারা শুধু আধুনিকতম প্রযুক্তি সরবরাহই নয়, ভারতে এমন প্রযুক্তি উৎপাদনে সাহায্য করতেও আগ্রহী। সেই কারণেই মোদীর সফরকালে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সূত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ‘মউ’ স্বাক্ষরিত হতে দেখা গিয়েছে।

তবে এ কথাও সত্যি, যৌথ বিবৃতিতে প্রাথমিক ভাবে ভারতের সঙ্গে অত্যাধুনিক জেট এঞ্জিন এবং ডুবোজাহাজ তৈরির উল্লেখ থাকলেও, পরবর্তী কালে সেখানে ফ্রান্স থেকে ২৬টি রাফাল মেরিন ফাইটার কেনার পরিকল্পনার কথা বা ভারতে আরও তিনটি স্করপিন ডুবোজাহাজ তৈরির ‘মউ’ স্বাক্ষরের উচ্চবাচ্য ছিল না। এমনকি যৌথ উদ্যোগে কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট এঞ্জিন তৈরির বিষয়টিও উহ্য রাখা হয়। স্বভাবতই সৃষ্টি হয়েছে বিতর্কের। তবে বিতর্ক সত্ত্বেও দুই দেশ পরস্পরের গুরুত্ব বিলক্ষণ বোঝে। বিশেষত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনকে প্রতিহত করতে হলে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ছাড়া গতি নেই ভারতের। সুতরাং, এই মৈত্রী আরও দৃঢ় হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Emmanuel Macron India france
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE