E-Paper

পাতে টান

খাদ্যপণ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক সামগ্রী, ফলে তার মূল্যস্ফীতি দুশ্চিন্তার কারণ হওয়াই স্বাভাবিক। ভারতের ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার একটি বাড়তি কারণ রয়েছে।

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩১
An image of Market Price

—প্রতীকী চিত্র।

খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ে কতখানি উদ্বিগ্ন হওয়া বিধেয়? ভারতে এই বিষয়ে সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যান ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের। তাতে দেখা যাচ্ছে, অক্টোবরের তুলনায় যেমন খাদ্যপণ্যের মূল্যস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই দাম বেড়েছে ২০২২ সালের নভেম্বরের তুলনাতেও। অর্থাৎ, মূল্যস্তরের গতি ঊর্ধ্বমুখী, তা নিয়ে সংশয় নেই। নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল আট শতাংশের সামান্য বেশি; আনাজের ক্ষেত্রে এই হার অনেক বেশি, ১৭.৭ শতাংশ। হারগুলি উদ্বেগজনক, সন্দেহ নেই। কিন্তু তার চেয়ে বেশি চিন্তার কথা হল, সাম্প্রতিক অতীতে যে কারণগুলিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া হয়েছিল, তার সব ক’টিই বর্তমান। যুদ্ধপরিস্থিতি অব্যাহত, ফলে আন্তর্জাতিক জোগান শৃঙ্খলায় অনিশ্চয়তা থাকছে। যে কোনও সময়ে খাদ্যপণ্যের দাম অনেকখানি বেড়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কা নিয়েই চলতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও ক্রমে প্রকটতর হচ্ছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে এই কারণে ভারতে কৃষি উৎপাদন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ব্যাহত হয়েছে। এ বছর বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হয় কি না, তার উপরেও কৃষি উৎপাদন নির্ভর করছে। একটি সুসংবাদ হল, আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়ামের দাম কিছু দিন যাবৎ নিম্নমুখী। লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের বাজারে তেলের দাম কমবে, তেমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফলে, পরিবহণের ব্যয় খানিক হলেও কমবে বলে আশা করা যায়। তার দাম খাদ্যপণ্যের মূল্যস্তরে প্রতিফলিত হবে।

খাদ্যপণ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক সামগ্রী, ফলে তার মূল্যস্ফীতি দুশ্চিন্তার কারণ হওয়াই স্বাভাবিক। ভারতের ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার একটি বাড়তি কারণ রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় বারে বারেই যে কথাটি উঠে আসছে তা হল, গত দু’-এক বছরে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের দু’টি গবেষণাপত্রে ভারতে দারিদ্রের যে অনুমান পেশ করা হয়েছে, তা যথাযথ নয়। রক্ষণশীল অনুমানেও দেশে দারিদ্রের হার অন্তত ২০ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি পাঁচ জন ভারতীয়ের মধ্যে এক জনের প্রতি দিনের ব্যয়ের পরিমাণ ১.৯ ডলারের চেয়ে কম। দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার বিশ্বের অন্যতম সেরা, কিন্তু জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ দারিদ্রসীমার নীচে রয়ে গিয়েছেন, এই দু’টি তথ্য পাশাপাশি রাখলে একটি কথা বেরিয়ে আসে— ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির অসাম্য ভয়ঙ্কর। আয়ের সিঁড়িতে উপরের দিকে থাকা জনগোষ্ঠীর আয় বেড়েছে বিপুল হারে, তাঁদের ভোগব্যয়ও বেড়েছে। কমেছে নীচের দিকে থাকা মানুষের আয় ও ব্যয়। জনসংখ্যাকে আয় অনুসারে ভাগ করে নিয়ে তার বিভিন্ন স্তরে ব্যয়বৃদ্ধির হার যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে, গত এক দশকে দেশের সার্বিক আয়বৃদ্ধি আটকে রয়েছে উচ্চ আর্থিক স্তরেই, গরিব মানুষের ঘরে তা পৌঁছয়নি।

সেই গরিবের ঘরে উঁকি মারলে দেখা যাবে, সেখানে দ্বৈত সমস্যা— এক দিকে আয় যথেষ্ট বাড়েনি, বরং অনিশ্চিত হয়েছে; অন্য দিকে, খাদ্যপণ্যের মতো অত্যাবশ্যক পণ্যের মূল্যস্ফীতি ঘটেই চলেছে। ভোগব্যয় বিষয়ে এনএসএসও-র সর্বশেষ সমীক্ষাটি কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশ করেনি বটে, কিন্তু তার তথ্য আংশিক ভাবে ফাঁস হয়েছিল বলেই জানা যায়। সেই ফাঁস হওয়া তথ্য জানিয়েছিল, ভারতের গ্রামাঞ্চলে প্রকৃত ভোগব্যয় হ্রাস পেয়েছে। গ্রামাঞ্চলেই দেশের সিংহভাগ গরিব মানুষের বাস, ফলে এই পরিসংখ্যান তাঁদের ভোগব্যয় সঙ্কোচনের কথাই বলে। অনস্বীকার্য যে, সেই পরিসংখ্যান বছর ছয়েক আগের। কিন্তু, সেই ছ’বছরের মধ্যে দেশে অতিমারি ও লকডাউন ঘটেছে; কর্মক্ষেত্র আরও অনেক বেশি ‘গিগ’-মুখী হয়ে উঠেছে, ফলে আয়ের নিশ্চয়তা কমেছে। কাজেই, তাঁদের ভোগব্যয়ের সামর্থ্য বেড়েছে বলে ধরে নেওয়ার উপায় নেই। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি তাঁদের অনাহার ও অপুষ্টির দিকে ঠেলে দিতে পারে, এই আশঙ্কা নিয়েই নতুন বছর শুরু হল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

market price Inflation rate food industry Price Hike

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy