ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মরক্কো। ছবি: রয়টার্স।
এখনও ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। কিন্তু এরই মধ্যে স্পষ্ট, মরক্কো দেশটিতে সাম্প্রতিক ভূমিকম্প যে ক্ষতি সাধন করে দিয়ে গেল, এই দরিদ্র দেশের পক্ষে তার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা অনেক সময়ের ব্যাপার। দুই সহস্রাধিক প্রাণক্ষয়ের সঙ্গে আরও কত যে মানুষ আহত, কত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত, তার ইয়ত্তা করাই কঠিন। ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইটের তকমা-প্রাপ্ত ম্যারাকেশের যতখানি ক্ষতি হয়েছে, তার পূরণ করা সহজ কাজ নয়। গত ছয় দশকে সে দেশটিতে এমন মাপের কিছু দুর্যোগ ঘটেনি— ফলে শাসক ও শাসিত সমাজের কাছে আপাতত কোনও হদিস নেই এত বড় সঙ্কট মোকাবিলার পথ বিষয়ে। তদুপরি যে অঞ্চলটি সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত, পার্বত্য গ্রাম হওয়ার জন্য সেখানে যাতায়াতেরও সুবিধা নেই, পরিকাঠামোর দুর্বলতাও সহজেই অনুমেয়। আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া মরক্কো এই প্রবল দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারবে না, বলা বাহুল্য। বিশেষ সুসংবাদ, ইতিমধ্যেই বিশ্বের নানা দেশ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি আলজিরিয়াও এগিয়ে এসেছে, যে দেশটি গত কয়েক দশকের লাগাতার পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলস্বরূপ আজ থেকে দুই বছর আগে মরক্কোর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছেদ করে দিয়েছিল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন, সব রকম সাহায্য দিতে তাঁরা প্রস্তুত। বাস্তবিক, জি২০ অধিবেশন দিল্লিতে চলাকালীন এই ঘটনা ঘটায় আন্তর্জাতিক সক্রিয়তাও দ্রুত শুরু হতে পেরেছে। বিশেষ করে তুরস্ক, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, জর্ডন প্রমুখ প্রতিবেশী দেশ পাশে দাঁড়াতে তৎপর, কেননা এমন কোনও ঘটনা যে অদূর ভবিষ্যতে সে সব দেশেও ঘটবে না, তা বলা যায় না— প্রকৃতির রোষ এখন এমনই দুর্মর! বড় রকমের সহায়তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে এসেছে ভারতও।
তবে কেবল সহায়তাতেই কাজ ফুরাবে না। মরক্কো আবারও বুঝিয়ে দিল, আগাম প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা কত অসম্ভব রকমের জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশ্বপৃথিবীর যে পরিস্থিতি, তাতে ভূমিকম্প কিংবা পার্বত্য ধস আটকানো মানুষের পক্ষে সহজ কিংবা সম্ভব নয়— ফলে আপাতত সামনে দু’টি খুব জরুরি কাজ। এক, যথাযোগ্য প্রস্তুতি তৈরি করা। বড় মাপের দুর্যোগে যাতে সমস্ত ভাবে উদ্ধার, ক্ষতিপূরণ, পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করা যায়, তার জন্য একেবারে জরুরি অবস্থাকালীন কর্মপদ্ধতির নীল নকশা বানিয়ে রাখা। ভারতে সাম্প্রতিক যে দুর্যোগ হিমাচলে ঘটে গেল, তা দেখে কিন্তু মনে হয় না তেমন কোনও প্রস্তুতি এ দেশে চলমান।
আরও একটি দ্বিতীয় কাজ আছে। গোটা দেশের ভূ-প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্ভাবনার একটি মানচিত্র তৈরি করা উচিত। কোথায় কতখানি ঝুঁকি রয়েছে, এবং কী ধরনের ঝুঁকি— তার স্পষ্ট তথ্য দরকার। বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে এই বিপদ-প্রবণতা অনেক ভাবে বাড়ছে, কিন্তু প্রস্তুতি কিংবা তথ্যসংগ্রহ/প্রচার তেমন করে বাড়ছে কই? যেমন, সুন্দরবন যে মনুষ্যবসতি হিসাবে ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, এবং আগামী দিনে যে সেই বিপদ ক্রমশ বাড়তেই থাকবে, তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা এবং গবেষণা হচ্ছে কি? রাজনীতিতে তার ছাপ পড়ছে কি? না কি মানুষ এ ভাবেই দিন অতিবাহন করবে— এক দিকে প্রকৃতির অপ্রত্যাশিত রোষ, অন্য দিকে শাসককুলের অসংবেদনশীলতা ও সঙ্কীর্ণ স্বার্থহিসাবের মাঝে দোদুল্যমান অসহায়তায়? মরক্কো আবার ভাবিয়ে দিয়ে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy