Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Iran-Pakistan Conflict

নতুন উদ্বেগ

পাকিস্তান এবং ইরান, দুই পড়শি ইসলামি প্রজাতন্ত্রেই সীমান্তবর্তী মুসলিম সংখ্যালঘুরা অদ্যাবধি উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব বা সমানাধিকার অর্জন করতে পারেনি।

Iran-Pakistan Conflict

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২২
Share: Save:

পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধপরিস্থিতির উত্তেজনা কি আরও এক ধাপ চড়ে গেল? গত সপ্তাহে দুই পড়শি রাষ্ট্র পরস্পর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় লিপ্ত হল। প্রথমে পাকিস্তানের বালুচিস্তানে জঙ্গি সংগঠন জইশ অল অদল-এর ঘাঁটি লক্ষ্য করে মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করল ইরান। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামাবাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল কূটনৈতিক— তেহরান থেকে রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেওয়া, ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানানো এবং সমস্ত দ্বিপাক্ষিক সফর বাতিল করে দেওয়া। কিন্তু তার পরই ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশে তথাকথিত পাকিস্তানি বালোচ ‘জঙ্গি’দের ঘাঁটিতে আঘাত হানে পাকিস্তান। হামলায় দু’তরফেই কিছু হতাহত হওয়ার খবর মিলেছে। বহু দিন ধরে তাদের মাটিতে জইশ অল অদল-এর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিষয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করে আসছে ইরান, যারা পূর্বেও সে দেশের সামরিক তথা সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তান এবং ইরান, দুই পড়শি ইসলামি প্রজাতন্ত্রেই সীমান্তবর্তী মুসলিম সংখ্যালঘুরা অদ্যাবধি উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব বা সমানাধিকার অর্জন করতে পারেনি। পাকিস্তানের বালুচিস্তান এবং ইরানের সিস্তান বালুচিস্তান— সীমানার দু’তরফেই বালোচদের বাস, যাঁদের মধ্যে সাংস্কৃতিক, জাতিগত, ধর্মীয় এমনকি ভাষাগত যোগ রয়েছে। বহু কাল ধরে দুই দেশেই এদের প্রান্তিকীকরণ বালুচদের মধ্যে বেশ কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছে, যারা ‘গ্রেটার বালুচিস্তান’ জাতিরাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায়। এই সন্ত্রাসবাদীরা বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত পেরিয়ে দু’তরফেই হামলা চালায়। আপাতত এই সমস্যা তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করেছে। যার জেরে নানা সময়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলতে দেখা গিয়েছে এদের।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে কোনও তরফই যে এই সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করতে চাইবে না, দুই রাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে তা স্পষ্ট। তবে অন্য কারণগুলিও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, পাকিস্তান এখন চরম আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত। সেই সঙ্গে রয়েছে ভারত এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তবর্তী অস্থিরতাজনিত উদ্বেগ। যদিও মনে করা হচ্ছে যে, ইরানকে দ্রুত প্রত্যুত্তর দেওয়ার মাধ্যমে পড়শি রাষ্ট্রটি পরোক্ষে ভারতকেই বার্তা দিয়ে রাখল, যাতে ভবিষ্যতে দিল্লি তাদের সীমানা পেরিয়ে কোনও আকস্মিক হামলার কথা সহজে না ভাবে। অন্য দিকে, অশান্ত পশ্চিম এশিয়ায় তেহরানও লোহিত সাগরে হুথি, লেবানন সীমান্তে ইজ়রায়েল-এর বিরুদ্ধে হিজ়বুল্লা জঙ্গিগোষ্ঠীর মদতদাতা হিসাবে একাধিক ছায়াযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে। এমতাবস্থায় নতুন কোনও সংঘাতে লিপ্ত হয়ে নিজের অবস্থানকে দুর্বল করতে চাইবে না সে। তবে উভয় তরফের প্রশাসন এবং সামরিক বাহিনীকে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। এবং সংখ্যালঘু মানুষদের অসন্তোষ দূর করার উপরে জোর দিতে হবে, যাতে আগামী দিনে বিচ্ছিন্নতাবাদ পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংবেদনশীল উপসাগরীয় অঞ্চল বালুচ সীমান্তের অস্থিরতা, বালুচিস্তানে চিনের উপস্থিতির পাশাপাশি উপসাগরীয় অঞ্চলেও তার ক্রমবর্ধমান ভূমিকা আগামী দিনে ভারতের পক্ষে উদ্বেগ হয়ে দাঁড়াতেই পারে। দুশ্চিন্তাজনক বিষয়ের তালিকা সমানেই বাড়ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Iran Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE