Advertisement
২১ মার্চ ২০২৩
Government hospitals

পুরনো দাওয়াই

চূড়ান্ত দুর্ভোগের প্রধান কারণ সরকারি হাসপাতালগুলির পরিচালনা দুর্বল। বিবিধ হাসপাতালের পরিসরে রাজনৈতিক ক্ষমতার পেশি-আস্ফালন যার মধ্যে অন্যতম।

Impression picture of a Dead Body

সম্প্রতি নানা হাসপাতালে ঘুরে টলিগঞ্জের চব্বিশ বছরের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:০৬
Share: Save:

রেফার-রোগের দাওয়াই স্থির করেছে স্বাস্থ্য দফতর— কোথায় শয্যা খালি আছে, তা জেনে তবেই রোগী পাঠাতে পারবে হাসপাতালগুলি। সম্প্রতি নানা হাসপাতালে ঘুরে টলিগঞ্জের চব্বিশ বছরের এক যুবকের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে এক স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, রেফার করার এই নির্দেশিকা পাঠানো হবে হাসপাতালে। এমন উদ্যোগ আশ্বস্ত করতে পারত, যদি না এর আগে ঠিক এমনই ভরসা বহু বার দিয়ে থাকতেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। গত বছর ডিসেম্বর মাসে রাজ্যের জেলা হাসপাতালগুলির কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানানো হয়েছিল, যে সব অসুখের চিকিৎসার পরিকাঠামো হাসপাতালে নেই, কেবল সেগুলির জন্যই রোগীকে অন্যত্র পাঠাতে হবে, এবং কোন হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে তা প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করতে হবে। তার আগে, গত বছর মার্চ মাসে, গলায় ধাতুর বস্তু আটকানোর পর নানা হাসপাতালে ঘুরে আট মাসের এক শিশুর মৃত্যু হওয়ার পরেও স্বাস্থ্য দফতর-গঠিত একটি কমিটি সুপারিশ করে, অন্যত্র শয্যা রয়েছে কি না জেনে তবেই রোগী পাঠানো যাবে। কোভিডের সূত্রপাতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কোন হাসপাতালে শয্যা খালি আছে, তা যেন সাধারণ নাগরিক দেখতে পান অনলাইনে। এমন নানা সুপারিশের ইতিহাস দীর্ঘ। প্রতি বার একই সমাধান দিতে হচ্ছে, কারণ সমস্যা একই থেকে যাচ্ছে। যন্ত্রণাকাতর রোগীর প্রতি উদাসীনতা, দুর্ব্যবহার, চিকিৎসায় বিলম্ব এবং রোগীর দায়িত্ব অস্বীকার, বার বার এই সব অভিযোগ উঠছে সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

Advertisement

এই চূড়ান্ত দুর্ভোগের প্রধান কারণ এই যে, সরকারি হাসপাতালগুলির পরিচালনা দুর্বল। তার কারণ বিবিধ— হাসপাতালের পরিসরে রাজনৈতিক ক্ষমতার পেশি-আস্ফালন যার মধ্যে অন্যতম। রাজনীতির দাপটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এক শ্রেণির কর্মীর কাছে সুপারের নির্দেশ অমান্য করাই নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। এই সত্য বার বার প্রতিফলিত হচ্ছে পরিষেবার মৌলিক নানা ত্রুটিতে। নদিয়ার শক্তিনগর হাসপাতালে ট্রলির অভাবে জরুরি বিভাগের সামনে পড়ে থেকে ঊনত্রিশ বছরের এক যুবকের মৃত্যু তারই সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত। হাসপাতালে যথেষ্ট ট্রলি ও ট্রলিকর্মী মজুত রাখা এমন কিছু জটিল বা ব্যয়সাধ্য কাজ নয়। কর্মীদের দায়বদ্ধ করতে সুপার ব্যর্থ হচ্ছেন, তাই রোগী নিত্য হয়রান হচ্ছেন, দুর্নীতি চক্রও অপ্রতিহত। রাজ্য জুড়ে এই পরিব্যাপ্ত অব্যবস্থার সামান্য অংশই সংবাদে আসে। রোগীর প্রতি আয়ার দুর্ব্যবহার থেকে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত পেতে নাকাল হওয়া, প্রতিটি ক্ষেত্রের মধ্যে মিল একটিই: বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশাসনিক শিথিলতা। রাজনীতির খেলা না থামলে সেই শিথিলতা ঘুচবে না।

জেলায়-জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করা হলেও কেন সামান্য জটিলতাতেই কলকাতার হাসপাতালে রেফার করতে হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর নবান্ন বিলক্ষণ জানে— নামেসুপার স্পেশালিটি, কিন্তু বেশির ভাগ জায়গাতেই পরিকাঠামো মহকুমা হাসপাতালের তুল্য। সেই সমস্যার কারণটিও জানা: অর্থাভাব। রেফারের রোগই বলা হোক বা প্রয়োজনীয়তা, তা অবিলম্বে কমার নয়। কাজেই, প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এমন ব্যবস্থা তৈরি করা কঠিন নয়, যেখানে দেখে নেওয়া যাবে যে, রাজ্যের কোন হাসপাতালের কোন বিভাগে কতগুলি শয্যা খালি রয়েছে। সেই অনুযায়ী, যে হাসপাতাল থেকে রোগী রেফার করা হচ্ছে, সেখান থেকেই উদ্দিষ্ট হাসপাতালে শয্যা সংরক্ষণ করে রোগীকে পাঠানো যায়। প্রশাসন এটুকুও ভেবে উঠতে পারে না, কারণ রোগীর প্রতি স্বাভাবিক সহমর্মিতাটুকুও এই রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিরল হয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণ হবে কিসে?

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.