Advertisement
০২ মে ২০২৪
snake bite

অবহেলিত ব্যাধি

সর্পদংশনে রোগী মৃত্যুর দু’টি প্রধান কারণ— স্থানীয় স্তরে এখনও কুসংস্কারের রমরমা এবং অনেক ক্ষেত্রে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত অ্যান্টি স্নেক ভেনাম (এএসভি) মজুত না থাকা।

snake bite.

সারা দেশে সর্পদংশনে মৃত্যুর প্রকৃত পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি চরমে। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৩৮
Share: Save:

ভারতে প্রতি বছর সাপের কামড়ে যত জন মারা যান, সেই সংখ্যাটি প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় মৃতের সংখ্যার চার গুণ। পরিসংখ্যানটি উদ্বেগের। কিন্তু প্রশাসন, এবং সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ কি? পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, সারা দেশেই সর্পদংশনে মৃত্যুর প্রকৃত পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি চরমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি খাতায় সর্পদংশনের যে হিসাব দেখা যায়, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। কারণ, সব তথ্য সরকারি খাতা পর্যন্ত পৌঁছয় না। এই অস্বচ্ছতার কারণেই ২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্পদংশনকে ক্রান্তীয় অঞ্চলের ‘নেগলেক্টেড ডিজ়িজ়’ ঘোষণা করেছিল। বারো বছর অতিক্রান্ত। ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্পদংশন প্রতিরোধ এবং বিষক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি অ্যাকশন প্ল্যান প্রকাশ করে, যাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে আঞ্চলিক স্তরে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্পদংশনজনিত মৃত্যু এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পঞ্চাশ শতাংশ হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। সাপের কামড় নিয়ে সচেতনতা আগের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু সর্বত্র যে চিত্রটি সমান নয়, তার প্রমাণ বর্ধিত মৃত্যুর হার।

সর্পদংশনে রোগী মৃত্যুর দু’টি প্রধান কারণ— স্থানীয় স্তরে এখনও কুসংস্কারের রমরমা এবং অনেক ক্ষেত্রে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত অ্যান্টি স্নেক ভেনাম (এএসভি) মজুত না থাকা। এই রাজ্যে প্রথম কারণটি দূর করতে সরকার এবং বিজ্ঞান মঞ্চ থেকে সচেতনতা প্রসারের কাজ চালানো হলেও এখনও কাউকে সাপে কামড়ালে বহু ক্ষেত্রে মানুষ ওঝা-গুনিনের উপরেই ভরসা করেন। শেষ অবধি যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর কিছু করার থাকে না। এ সব ক্ষেত্রে রোগী মারা গেলে তা হামেশাই সরকারি পরিসংখ্যানের বাইরে থেকে যায়। সরকারি হিসাব এবং বাস্তব চিত্রের মধ্যে বিশাল ফাঁক থেকে যাওয়ার এটিও অন্যতম কারণ। অন্য সমস্যাটি পরিকাঠামোগত। গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে প্রায়শই পর্যাপ্ত এএসভি মজুত থাকে না। ইতিপূর্বে জলাতঙ্কের প্রতিষেধকের ক্ষেত্রেও এই অভিযোগ শোনা গিয়েছিল। ফলে, যে মরসুমে সর্পদংশনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখন বহু রোগীর চিকিৎসা-বঞ্চিত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই অব্যবস্থাও মানুষকে ওঝা-গুনিনমুখী করে তোলে, এই অভিযোগ অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।

সর্পদংশনে মৃত্যু প্রতিরোধে জাতীয় ক্ষেত্রেও বিবিধ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হল, স্থানীয় স্তরে মৃত্যু আটকানোর যথেষ্ট চেষ্টা করা না হলে সেই কর্মসূচি সাফল্য পাবে কী করে? সাপে কাটার পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রোগীকে এএসভি দেওয়ার মতো সচল পরিকাঠামো, প্রশিক্ষিত কর্মী দেশের সর্বত্র মজুত আছে কি? অথচ, এই ব্যবস্থা আপৎকালীন চিকিৎসার অঙ্গ হিসেবে সমস্ত গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকা উচিত। এএসভি দেওয়ার ক্ষেত্রে যে-হেতু সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সে-হেতু কী ভাবে দ্রুত রোগীর কাছে তা পৌঁছনো যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। সর্পদংশন প্রতিরোধ করা কঠিন কাজ। বিশেষত, খেতে কাজ করার সময় বা বন্যাদুর্গত এলাকায় সর্পদংশন অতি সাধারণ ঘটনা। তুলনায় সহজ মৃত্যুর হার কমানো। কিন্তু সাধারণ মানুষের একাংশের সঙ্গে সরকারও যদি সর্পদংশনে মৃত্যুকে ভবিতব্য মেনে নেয়, তবে হাতে হিসাবের পেনসিলটুকুই পড়ে থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

snake bite India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE