Advertisement
E-Paper

আড়ালের রাজনীতি

সম্প্রতি দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একটি প্রতিবেদনে উপগ্রহের পাঠানো ছবি প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, গত এপ্রিল থেকে সাত মাস ধরে জোশীমঠের মাটি বসেছিল ৯ সেন্টিমিটার।

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪০
জোশীমঠ: রাস্তায় ফাটল।

জোশীমঠ: রাস্তায় ফাটল। ফাইল চিত্র।

বিপর্যয়ের সম্ভাব্য কারণ, ধরন এবং পর্যায়গুলির যথাযথ বিশ্লেষণ সম্পন্ন হলে তবেই তার ভিত্তিতে আগামী দিনে অনুরূপ বিপর্যয় মোকাবিলার কাজটি সহজতর হয়। নাগরিক সজাগ হন, সরকারের পক্ষেও নিখুঁত নীতি নির্ধারণ সম্ভব হয়— অন্তত স্বাভাবিক বুদ্ধি এবং যুক্তি এমনটাই বলে। কিন্তু এ দেশে যে সোজা পথে হাঁটার পরিবর্তে শাসকের গদি বাঁচানোকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, জোশীমঠ তা প্রমাণ করল। সম্প্রতি দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একটি প্রতিবেদনে উপগ্রহের পাঠানো ছবি প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, গত এপ্রিল থেকে সাত মাস ধরে জোশীমঠের মাটি বসেছিল ৯ সেন্টিমিটার। কিন্তু গত ২৭ ডিসেম্বরের পর পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। মাত্র ১২ দিনের মধ্যে ৫.৪ সেন্টিমিটার মাটি বসে যায়। এই ব্যাখ্যায় স্বস্তি মেলেনি বিজেপি সরকারের। প্রতিবেদন প্রকাশের পরই সরকারি সংস্থাগুলির প্রতি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের ফরমান— মাটি বসে যাওয়া নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কিছু বলা বা সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করা চলবে না। অতঃপর রাতারাতি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেওয়া হয় প্রতিবেদনটিকে।

যেখানে বিপর্যয়ের পূর্বাভাস মেলার পরও উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে সরকারের সর্ব পর্যায়ে গড়িমসির চিহ্নটি স্পষ্ট হয়, ‘উন্নয়ন’ বিপদ ডাকতে পারে জেনেও সতর্কবার্তাকে অগ্রাহ্য করা হয়, সেখানে উপগ্রহ চিত্রের ব্যাখ্যার ‘বিভ্রান্তি’ থামাতে রাতারাতি ফরমান জারি— আশ্চর্য বইকি। মাটি বসে যাওয়ার বিবিধ কারণ থাকতে পারে। জোশীমঠের বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে যেমন অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো কারণগুলি উঠে এসেছে। পরিবেশবিদ এবং স্থানীয়রা আঙুল তুলেছেন এনটিপিসি-র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে সুড়ঙ্গ খননের জন্য ঘটানো বিস্ফোরণের দিকে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে এনটিপিসি। এমতাবস্থায়, প্রকৃত সত্য জানার জন্য প্রতিটি প্রমাণ, বিশেষজ্ঞদের অভিমত বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন ছিল। নাগরিকের প্রাণ, জীবিকা যেখানে বিপন্ন, সেখানে সমস্ত পক্ষকে এক সঙ্গে নিয়ে এগোনো প্রয়োজন ছিল। যথারীতি তা হয়নি। উল্টে শাসকের নিজস্ব ব্যাখ্যা এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুর প্রবলতর হচ্ছে। যে শহরকে রাতারাতি বসবাসের অযোগ্য বলে ঘোষণা করতে হয়, বৃহৎ সংখ্যক বাসিন্দাকে শরণার্থী শিবিরে পাঠাতে হয়, সেখানে বিপর্যয়ের কার্যকারণ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো স্বাভাবিক। সেই জন্যই তথ্যপ্রমাণ প্রকাশ্যে আনা উচিত, রাজনীতির স্বার্থে তাকে ধামাচাপা দেওয়ার সুবন্দোবস্ত করা নয়।

অবশ্য, অস্বস্তি ঢাকতে ধামাচাপা দেওয়ার রোগটি বিজেপি সরকারের পুরনো এবং সযত্নলালিত। কোভিডের সময়ও অভিযোগ উঠেছিল সংক্রমণ এবং মৃতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ না করার। এমনকি প্রতিষেধক নিয়েও দীর্ঘ কাল অস্বচ্ছতা বজায় ছিল। সেই ধারা অনুযায়ী, এই ফরমান হয়তো বা প্রত্যাশিতই ছিল। তা-ও আশ্চর্য হতে হয়, পরিবেশ এবং নাগরিক— উভয়কে নিয়ে এই ছেলেখেলা দেখে। ১৯৭৬ সাল থেকে জোশীমঠের সুরক্ষা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ, স্থানীয়দের সরকারি প্রকল্প নিয়ে আপত্তি উপেক্ষার পরিণতি আজ স্পষ্ট হচ্ছে। এর পরেও প্রকৃত চিত্রটি সামনে না আনা নাগরিকের জানার অধিকারটিকে অগ্রাহ্য করার সমতুল্য। গণতান্ত্রিক দেশে এই ঔদ্ধত্য অক্ষমণীয়।

Joshimath Disaster Uttarakhand landslide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy