Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Education

প্রশ্নগুলো কঠিন?

২০২০ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১৯-এর চেয়ে ৩৩ হাজার কম ছিল। আবার গত মাধ্যমিকে অর্থাৎ ২০২২ সালে অতিমারির মধ্যেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছিল।

২০২১-এর পরীক্ষার্থীর তুলনায় ২০২২-এ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার বেশি।

২০২১-এর পরীক্ষার্থীর তুলনায় ২০২২-এ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার বেশি। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:২২
Share: Save:

কোভিড-পর্ব কিছু ক্ষেত্রে নতুন সঙ্কট তৈরি করেছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে পুরনো সঙ্কটগুলিকে বাড়িয়ে দিয়ে স্পষ্টতর ও প্রকটতর করেছে। এই যেমন, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম হতে চলেছে। ব্যাখ্যা হিসাবে এও আগেভাগে জানিয়ে রাখা হয়েছে যে, বয়স-বিধির কারণেই এই সংখ্যা হ্রাস। পর্ষদের মতে, শিক্ষার অধিকার আইনের আওতায় ছ’বছরের নীচে প্রথম শ্রেণিতে এবং দশ বছরের নীচে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ভর্তি করা বন্ধ হয়। পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলিতে এই বিধি বলবৎ হয়েছে ২০১৩ সাল থেকে। সেই বছরে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ব্যাচটিই আগামী বারে মাধ্যমিকে বসবে। সুতরাং, সেই কারণেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকবে বলে পর্ষদের দাবি। ব্যাখ্যাটি উত্তম, কিন্তু সর্বাত্মক কি? যে কোনও সচেতন নাগরিক জানেন, অতিমারি কী ভাবে স্কুলছুটের প্রকোপ অনেকখানি বাড়িয়ে তুলেছে। সে ক্ষেত্রে শুধুই বয়স-বিধি দিয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমার উত্তর খোঁজা যায় কি?

আবার ছবির সবটুকু হয়তো অতিমারি ব্যাখ্যাতেও পড়ে না। পরীক্ষার্থীর সংখ্যার এই ওঠাপড়া গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। ২০১৭ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে দেখা গিয়েছিল। ২০১৯ সালে ২০১৮-র তুলনায় ১৮ হাজার পরীক্ষার্থী কমে যায়। ২০২০ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১৯-এর চেয়ে ৩৩ হাজার কম ছিল। আবার গত মাধ্যমিকে অর্থাৎ ২০২২ সালে অতিমারির মধ্যেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছিল। ২০২১-এর পরীক্ষার্থীর তুলনায় ২০২২-এ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার বেশি। আবার, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের হিসাবে ২০২১-এর একটি সমীক্ষায়, দেশে স্কুলছুট কমানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের নাম প্রথমে ছিল। এই আবহে এত দিন অবধি রাজ্য সরকার এক দিকে স্কুলছুট কমার পিছনে তাদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সাফল্য দাবি করেছে। অন্য দিকে, অতিমারি-পূর্ব দিনগুলিতে পরীক্ষার্থী কমার প্রসঙ্গ উঠলে কখনও জন্মহার কমা, কখনও বা অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমার যুক্তি দেখিয়েছে। মোট কথা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়াটাও আখেরে সুলক্ষণ বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা হয়েছে। এ বারে সেই তালিকাতেই জুড়ে গেল বয়স-বিধির প্রশ্ন।

এই বিবিধ যুক্তি-বয়ানের তলায় স্কুলছুটের প্রকৃত বাস্তবতা অনেকটাই চাপা পড়ে থাকছে। এ রাজ্যে স্কুলছুটের হার কোন বছর ঠিক কত, তার নিয়মিত সমীক্ষা প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা মুশকিল। মাঝেমধ্যে এক দশক আগের চেয়ে স্কুলছুট কমেছে বা অন্য রাজ্যের চেয়ে স্কুলছুটের হার কম হয়েছে, ইত্যাকার পরিসংখ্যান যতটা চমক তৈরি করে, ততটা বাস্তব চিত্র সম্ভবত তুলে ধরে না। বিশেষত করোনাকালের পরে স্কুলছুটের সার্বিক চেহারা নির্ধারণ এবং তার নিরসনে সুনির্দিষ্ট সরকারি নীতি এবং কর্মসূচি প্রণয়নের প্রয়োজন ছিল এবং আছে। আক্ষেপের বিষয়, সেই উদ্যোগ এখনও তেমন ভাবে চোখে পড়েনি। আগামী মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পিছনে বয়স-বিধির পাশাপাশি স্কুলছুটের ভূমিকা কতখানি, তার এখটি হিসাব অত্যন্ত জরুরি। কর্মহীনতা এবং মূল্যবৃদ্ধির আঁচে জর্জরিত অর্থনীতির বর্তমান দশায় স্কুলছুটের রেখচিত্র কোথায় পৌঁছল, তার নির্ভেজাল হিসাব না থাকলে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। শিক্ষাক্ষেত্রে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে হিমশিম খাওয়া রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে সদিচ্ছা কতটা পোষণ করে, সেটা অবশ্যই বড় প্রশ্ন। সমস্যার সমাধান করা কঠিন বলে সমস্যার অস্তিত্ব অস্বীকার করার অভ্যাসটি তো অনেক দিন ধরেই করায়ত্ত হয়ে আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Madhyamik Examination Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE