E-Paper

পরিযায়ী সুরক্ষা

পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি গ্রাম থেকে শ্রমজীবী মানুষ আজ ভিনরাজ্যে কাজ করতে যান। অতএব তাঁদের সুরক্ষা এবং কল্যাণের প্রয়োজন ব্যাপক ভাবে অনুভূত হচ্ছে।

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৩ ০৬:২৫
migrant workers

পরিযায়ী শ্রমিক। ফাইল চিত্র।

পরিযায়ী শ্রমিকদের সহায়তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার সম্প্রতি বেশ কিছু ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছে। তার কেন্দ্রে রয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ (ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড) গঠন। সরকার জানিয়েছে, বিপদগ্রস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্যের জন্য চব্বিশ ঘণ্টার সহায়তা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে এবং কেরল, দিল্লি, মহারাষ্ট্রে আঞ্চলিক অফিস নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কোনও পরিযায়ী শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে তিনি পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা অবধি অর্থসাহায্য পাবেন। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার পাবে দু’লক্ষ টাকা। পরিযায়ীদের নাম নথিভুক্তির জন্য একটি পোর্টালও শুরু করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি গ্রাম থেকে শ্রমজীবী মানুষ আজ ভিনরাজ্যে কাজ করতে যান। অতএব তাঁদের সুরক্ষা এবং কল্যাণের প্রয়োজন ব্যাপক ভাবে অনুভূত হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও কিছু প্রশ্ন তোলা দরকার।

যেমন, শ্রমিক বিপদে পড়লে কী সহায়তা পাবেন, তার উপরে সরকারি ঘোষণায় এত গুরুত্ব দেওয়া হল কেন? তাঁরা বিপদে যাতে না পড়েন, তার জন্য কী পদক্ষেপ করছে সরকার? পরিযায়ীদের দুর্দশার কারণগুলি চিহ্নিত করে আগাম প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাঁদের সুরক্ষায় ১৯৭৯ সালে যে আইন প্রণয়ন হয়েছিল, এখনও তার নির্দেশগুলি মানা হয় না এ রাজ্যে। সেই কারণেই শ্রমিকদের বিপন্নতা বেড়েছে। তাঁদের গতিবিধি সম্পর্কে স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে হলে কেবল পোর্টাল তৈরি করলেই চলবে না। প্রয়োজন নিয়মিত সমীক্ষা, যার জন্য দরকার গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন এবং শ্রম দফতরের সমন্বয়। রাজ্য ছাড়ার আগেই পরিযায়ীদের নামধাম নথিভুক্ত করার কাজটি দীর্ঘ দিন অবহেলিত। নাম নথিভুক্তির কোনও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া যখন রাজ্যে চালু নেই, তখন পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় আটত্রিশ লক্ষ— এই তথ্যের ভিত্তি কী? এই অস্বচ্ছতা অনভিপ্রেত।

সর্বোপরি, কেবল তথ্য সংগ্রহই যথেষ্ট নয়। শ্রমিকরা যেন তাঁদের সামাজিক এবং মজুরির সুরক্ষা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল হয়ে কাজ করতে যান, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যে রাজ্যগুলিতে বাংলা থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের চলাচল বেশি, সেগুলির প্রশাসনের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নির্দিষ্ট সমঝোতা করা দরকার। তাঁদের পরিস্থিতির ভয়াবহতা এবং তাঁদের প্রতি প্রশাসনের উদাসীনতা প্রকট করেছিল অতিমারি ও লকডাউন। কাজ, বাসস্থান হারিয়ে কার্যত তাঁদের রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হয়েছিল। নিয়মিত রোজগার বা ন্যূনতম সামাজিক সুরক্ষা না থাকায় বিকল্প পথও কিছু ছিল না। অথচ, ‘আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক আইন, ১৯৭৯’ অনুসারে পরিযায়ীদের বিনামূল্যে বাসস্থান, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে দেখা যায়, কোনও রকম সামাজিক নিরাপত্তা ছাড়াই শ্রমিকরা অস্বাস্থ্যকর, অমানবিক পরিস্থিতিতে দিন কাটান। ঠিকাদার এবং নিয়োগকারীর প্রতারণা এবং নির্যাতনের শিকার হন। এই সব অন্যায়ের নিরসন প্রয়োজন। বাঙালি শ্রমিক ভিনরাজ্যে মারা গেলে পরিবার কত টাকা পাবে, বা সৎকারের জন্য কত টাকা দেবে সরকার, তার চাইতে অনেক বেশি জরুরি, পরিযায়ী শ্রমিকের সুস্থ ও সুরক্ষিত কর্মজীবন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Migrant Workers West Bengal government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy