E-Paper

চক্রব্যূহ

ফ্রান্সে আইনসভার আসনসংখ্যা ৫৭৭, ‘ম্যাজিক ফিগার’ ২৮৯। এমতাবস্থায় কোনও রাজনৈতিক দলই ওই সংখ্যার ধারেকাছে না পৌঁছতে না পারায় ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫৪
Share
Save

আসন্ন প্যারিস অলিম্পিক্স নিয়ে এই সময়ে মেতে ওঠার কথা ছিল ফরাসিদের। কিন্তু বাদ সেধেছে ফরাসি আইনসভার নির্বাচনের ফলাফল। দেশ জুড়ে এখন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার আবহ। ঘটনার সূত্রপাত জুন মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন থেকে। সেই ভোটে দেখা গিয়েছিল, মারিন ল্য পেন-এর অতি-দক্ষিণপন্থী দল ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) দুরমুশ করেছে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাকরঁ-র উদারবাদী জোটকে। দেশের হাওয়া দক্ষিণে বইছে, সকলেরই মত ছিল সেই সময়ে। বেগতিক দেখে আইনসভা ভেঙে দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই আকস্মিক নির্বাচনের ঘোষণা করলেন মাকরঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে বিবেচনাহীন ঝুঁকি বলে সমালোচনাও করলেন অনেকে। ৩০ জুন প্রথম দফার নির্বাচনে আরএন-এর সাফল্য সমালোচকদের বক্তব্যকেই যেন সঠিক বলে প্রমাণিত করল। গত ৭ জুলাই দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষা পূর্বাভাস দিল যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফলাফল অনুসরণ করে এ বার অতি-দক্ষিণপন্থীরাই ক্ষমতায় আসতে চলেছে। কিন্তু তার পর, দ্বিতীয় দফায় সমস্ত অঙ্ক গেল উল্টে, হাওয়া গেল ঘুরে। নবনির্মিত বামপন্থী জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) জয়ী হল, আরএন অর্জন করল তৃতীয় স্থান। মাকরঁ-র রাজনৈতিক চালটি তা হলে বৃথা গেল না।

ফ্রান্সে আইনসভার আসনসংখ্যা ৫৭৭, ‘ম্যাজিক ফিগার’ ২৮৯। এমতাবস্থায় কোনও রাজনৈতিক দলই ওই সংখ্যার ধারেকাছে না পৌঁছতে না পারায় ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। লক্ষণীয়, ফ্রান্সে ভোটিং প্রক্রিয়া দুই দফায় হয়ে থাকে। প্রথম দফায় সংশ্লিষ্ট আসনে কোনও প্রার্থী মোট ভোটের ৫০ শতাংশ অর্জন করতে না পারলে, দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ করা হয়। অতি-দক্ষিণপন্থীরা প্রথম দফায় শীর্ষ স্থান অর্জন করলেও, ৩৩ শতাংশ ভোট অর্জন করায় অবধারিত ভাবেই নির্বাচন গড়ায় দ্বিতীয় দফায়। তাই প্রথম দফার ভোটে দক্ষিণপন্থীদের জয়ের পরে তাদের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে জোট বাঁধে বেশ কয়েকটি বামপন্থী দল। শুধু তাই নয়, এই প্রচেষ্টায় যোগ দেন প্রেসিডেন্ট মাকরঁ-র উদারবাদী জোটও। এই সূত্রে বেশ কয়েকটি আসনে ‘বোঝাপড়া’ করেন উদারবাদী এবং বামপন্থীরা। ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে আরএন-এর বিরুদ্ধে পড়া ভোট ভাগ হয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে অন্তত ২০০টি-র বেশি আসন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয় বামপন্থী ও উদারবাদী জোট। ফলে কোথাও বামপন্থী জোটের সঙ্গে, কোথাও উদারবাদী জোটের সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় অতি-দক্ষিণপন্থীদের। দ্বিপাক্ষিক জোটের এই সময়োপযোগী চালেই ধরাশায়ী হয়ে পড়ে অতি-দক্ষিণপন্থীরা।

ভোট চলাকালীন জোট-কৌশল কী ভাবে সাফল্য অর্জন করতে পারে, তার দৃষ্টান্ত হয়ে রইল ফ্রান্সের এ বারের নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট মাকরঁ সম্ভবত ভেবেছিলেন, ভোটদাতারা অতি-দক্ষিণপন্থী এবং বামপন্থীদের ছেড়ে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের ঘনিষ্ঠ মূলধারার দলগুলির দিকেই মুখ ফেরাবে। কিন্তু দেখা গেল, ভোটাররা মুদ্রাস্ফীতি, অপরাধ, অভিবাসন প্রভৃতি বিষয়ে যখন ক্ষোভ উগরে দিলেন, স্থিতাবস্থাবিরোধিতার হাওয়া দক্ষিণের সঙ্গে বামেও বইল বেশ জোর বেগে। বাম ও উদারবাদীদের এই জয়ের হেতু ও উপলক্ষ নিয়ে বিশ্লেষণ এখনও বাকি। তবে কিনা, এই পরিস্থিতিতে জোট সরকার তৈরির কাজটি সহজ নয়। জয়-পরবর্তী পথও তাই কণ্টকপূর্ণ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

france Emmanuel Macron

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।