Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
IIM

প্রয়োজন প্রশিক্ষণ

নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকিবার বাধ্যবাধকতা না থাকিবার জন্য বহু ছাত্র ও অভিভাবক অনলাইন শিক্ষার দিকে সরিতেছেন।

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:১৩
Share: Save:

বিদ্যালয় পরিচালনার কৌশল শিখাইতে কর্মশালা হইয়াছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে— অংশগ্রহণ করিয়াছেন পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আধুনিক ভারতে স্কুল কেবল লেখাপড়া শিখিবার স্থান নহে, তাহা এক বহুমুখী প্রতিষ্ঠান। বিচিত্র তাহার কর্মকাণ্ড, কর্তব্যও নানাবিধ। একটি শিশুকে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক ভাবে পরিণত করিয়া তুলিবার যত রকম আয়োজন, তাহার সব দিকের সহিত স্কুলের নিবিড় যোগ রহিয়াছে। সর্বোপরি রহিয়াছে শিশু-কিশোরদের স্কুলে আনিবার, ধরিয়া রাখিবার দায়িত্ব। এই অতিমারি কালে পাঠে অনভ্যাস এবং দারিদ্রের পীড়ার জন্য বহু শিশু স্কুলে ফিরে নাই। অনেক সরকারি স্কুল ছাত্রছাত্রীর অভাবে দ্বার বন্ধ করিতেছে। বিদ্যালয়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, এই ত্রিমাত্রিক সম্পর্কের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে অনলাইন শিক্ষা, নানাবিধ ‘অ্যাপ’। নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকিবার বাধ্যবাধকতা না থাকিবার জন্য বহু ছাত্র ও অভিভাবক অনলাইন শিক্ষার দিকে সরিতেছেন। এই পরিস্থিতিতে কী করিয়া স্কুলকে সকল ছাত্রছাত্রীর নিকট আকর্ষণীয় করা সম্ভব, কী করিয়া শ্রেণির পাঠে তাহাদের আগ্রহ ফিরাইয়া আনা যাইতে পারে, তাহা ভাবিবার প্রয়োজন। সার্বিক ভাবেই স্কুলগুলিকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য আনন্দের পরিসর করিয়া তোলা জরুরি।

গত কয় বৎসরে বারংবার প্রশ্ন উঠিয়াছে, সরকারি বিদ্যালয় বিনা বেতনে পাঠদান, পুষ্টিকর খাদ্য, স্কুলের জামা-জুতা, সাইকেল, আর্থিক অনুদান— সকল প্রকার ব্যবস্থা করিয়াও কেন শিশুদের আকর্ষণ করিতে পারিতেছে না? কেনই বা বিদ্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করিয়াও বহু শিশু লিখিতে-পড়িতে শিখে নাই? শিশুকে স্কুলে আনিতে সরকারি স্কুলে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প চলিতেছে। সেইগুলিকে সুসংহত ভাবে সম্পন্ন করিবার কাজটিও সহজ নহে। মিড-ডে মিল-এর প্রতি শিক্ষক সমাজের একটি বড় অংশের আপত্তি ছিল এই কারণেই। তাঁহাদের আশঙ্কা ছিল, এমন বিশাল কর্মকাণ্ড পঠন-পাঠনকে বিঘ্নিত করিবে। ইহার কারণ, বিবিধ কর্মসূচি পাশাপাশি পরিচালনা করিতে হইলে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন রহিয়াছে। প্রয়োজন এমন প্রশিক্ষণ, যাহা নানা স্বার্থগোষ্ঠীর ব্যক্তিদের মধ্যে সামঞ্জস্য করিয়া, নানাবিধ কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় করিয়া কাজ আদায়ের পদ্ধতি শিখাইয়া দেয়।

স্কুলের উন্নয়ন ও পরিচালনায় আজ প্রধান শিক্ষকদের এক দিকে অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নিশ্চিত করিতে হয়। অপর দিকে স্কুলের শিক্ষক এবং কর্মীদের মধ্যে সদ্ভাবপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখিতে হয়। তৎসহ শিক্ষা দফতরের বিবিধ শর্তও পূরণ করিতে হয়। কাজগুলি কঠিন এবং জটিল। তাহাতে ব্যর্থ হইলে স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হইবে, তাহাতে শিশুকল্যাণ ও শিক্ষার প্রধান পরিকাঠামোটিই দুর্বল হইবে। অতি উত্তম শিক্ষকও প্রশিক্ষক হিসাবে ব্যর্থ হইতে পারেন। অতএব পঠন-পাঠনের প্রকরণের সহিত, প্রতিষ্ঠান পরিচালনার প্রশিক্ষণও সরকারি স্কুলে জরুরি। তবে তাহার সহিত প্রয়োজন স্বাতন্ত্র্য। স্কুলের পরিচালনার ভার যাঁহাদের উপর ন্যস্ত করিয়াছে শিক্ষা দফতর, সেই শিক্ষকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও দিতে হইবে। বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের প্রয়োজন পৃথক, তাহার প্রতি সংবেদনশীল হইতে না পারিলে স্কুলের শূন্য আসন ভরিবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IIM management
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE