E-Paper

অর্থসর্বস্ব

মেডিক্যালে অনাবাসীদের জন্য আসন সংরক্ষণের নিয়মটি অবশ্য নতুন নয়। দীর্ঘ দিনই এই সংরক্ষণের জোরে ভারতের সরকারি এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সুযোগ পেয়ে এসেছেন এক বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী।

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ০৬:৫৪

নম্বর খানিক কম থাকলেও ক্ষতি নেই। অনাবাসীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সৌজন্যে তাঁদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়রাও রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরে ভর্তির সুবিধা পাবে, এমনটাই নিয়ম করেছিল পঞ্জাব সরকার। সম্প্রতি তার কড়া সমালোচনা করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। মেডিক্যালে অনাবাসীদের জন্য আসন সংরক্ষণের নিয়মটি অবশ্য নতুন নয়। দীর্ঘ দিনই এই সংরক্ষণের জোরে ভারতের সরকারি এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সুযোগ পেয়ে এসেছেন এক বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী। পঞ্জাবের মতো ভারতের বহু রাজ্যে এই আসন সংরক্ষণের হার মোট আসনের ১৫ শতাংশ। এ-যাবৎ এই নিয়মই বজায় থাকলেও গোল বেধেছে সম্প্রতি পঞ্জাব সরকার প্রবর্তিত নতুন নিয়ম ঘিরে। গত অগস্টে চালু করা এই নিয়মে পঞ্জাব সরকার ‘এনআরআই’-এর সংজ্ঞাটিকে আরও খানিক বিস্তৃত করেছে, যাতে দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের সূত্রেও শিক্ষার্থীরা রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তির সুযোগ পেতে পারে। ইতিপূর্বে পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাই কোর্ট ‘আপ’ সরকারের এ-হেন নতুন নিয়মকে খারিজ করেছিল, যার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল পঞ্জাব সরকার। কিন্তু শীর্ষ আদালতও হাই কোর্টের রায়কেই বহাল রাখল। এবং জানাল, এই ‘জালিয়াতি’ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

নিঃসন্দেহে এনআরআই কোটা ঘিরে রাজ্য সরকারের এ-হেন আগ্রহের কারণটি বাণিজ্যিক। আসনগুলির বিনিময়ে যে-হেতু কলেজগুলির বর্ধিত ফি আদায়ের সুযোগ থাকে, সুতরাং তাতে ‘বেয়াই বোনাই জগাই মাধাই’দেরও অন্তর্ভুক্ত করতে চায় রাজ্য। শীর্ষ আদালতের উদ্বেগের মূল কারণটি সেখানেই। ইতিমধ্যেই এ দেশে ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট)-কে ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সর্বভারতীয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, সেখানে এনআরআই কোটার আসনগুলিকে ঘিরে যে কোনও ধরনের আর্থিক দুর্নীতির জন্ম নেবে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। অর্থ উপার্জনই যদি মূল লক্ষ্য হয়, তা হলে সরাসরি কিছু আসনকে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করতে পারে মেডিক্যাল কলেজগুলি। এ ক্ষেত্রে বরং সংরক্ষণের সংজ্ঞাকে বিস্তৃত করে অস্পষ্টতা তৈরি, তদর্থে দুর্নীতির জমি তৈরি করে দেওয়ার সুযোগ কম থাকবে।

সমস্যা অন্যত্রও। এই নতুন নিয়মের কারণে শুধুমাত্র অর্থের জোরে কম যোগ্যতার শিক্ষার্থীও ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষত মেডিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থ মেধার উপরে স্থান পেতে পারে কি না, সরকারের তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। এমনিতেই দেশে মেডিক্যালে সর্বমোট আসন সংখ্যার ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি কলেজের ভাগটি প্রায় অর্ধেক। স্বাভাবিক ভাবেই বেসরকারি কলেজে ডাক্তারি পড়ার খরচ সরকারি কলেজের তুলনায় বহু গুণ বেশি। তদুপরি, যদি এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন শুধুমাত্র দূর সম্পর্কের আত্মীয় অনাবাসী হওয়ার সুবাদে বরাদ্দ করা হয়, তবে মেধাবী শিক্ষার্থীরা যায় কোথায়? অর্থ উপার্জনের তাগিদে যোগ্য শিক্ষার্থীরা যেন বঞ্চিত না হয়, তা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মেডিক্যাল শিক্ষার সঙ্গে আগামী দিনে দেশের জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত। শুধুমাত্র ‘অর্থের জোর’ সেখানে যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Medical Colleges Quota System Medical Students

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy