Advertisement
E-Paper

প্রাণঘাতী

পরিবেশকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ক্লাস্টার তৈরি করে যে পরিমাণ বাজি উৎপাদিত হবে, তা কোন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হবে?

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৪:৫০
Share
Save

মাত্র ন’দিনের ব্যবধান। কল্যাণীর লোকালয়স্থিত বেআইনি বাজি কারখানায় যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ চারটি প্রাণ কেড়ে নিল, তার ঠিক ন’দিন আগেই তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত আইনে এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য পুলিশ জানিয়েছিল, বেআইনি বাজি উদ্ধারে তাদের নিয়মিত অভিযান ও নাকা তল্লাশির কথা। সে দাবি যে কতখানি মর্মান্তিক পরিহাস, বিস্ফোরণে মৃত চার জন তাঁদের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন। ‘নিয়মিত নজরদারি’র এমনই দাপট যে, জনবহুল এলাকায় বেআইনি বাজি কারখানা রমরম করে চলে, নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় নিষিদ্ধ বাজি তৈরির চক্র সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর যথাযথ ব্যবস্থা করা হয় না, এবং একের পর এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণে অকালে বহু প্রাণ ঝরে গেলেও বেআইনি বাজি বন্ধের লক্ষ্যে যে সব পদক্ষেপ করার কথা ইতিপূর্বে বহু বার শোনা গিয়েছিল, সেগুলি অধরাই থেকে যায়। এই বারুদ স্তূপ থেকে রাজ্যের সহজে মুক্তি নেই।

মুক্তি না মেলার প্রধান কারণ এ রাজ্যে বাজি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির বিপজ্জনক অবস্থান। স্পষ্টতই তারা দলীয় স্বার্থে বাজি, মতান্তরে বোমা শিল্পটির অবসান চায় না। কারণ, রাজনৈতিক হানাহানিতে বাহুবলীদের হাত শক্ত করতে এই শিল্পই সর্বাধিক কাজে আসে। সেই কারণেই নিষিদ্ধ বাজি আটক করতে পুলিশ-অভিযান চললে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ঢাল হয়ে দাঁড়ান। এগরা এবং বজবজে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর রাজ্যে বাজি ক্লাস্টার তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য। সেই সময় পরিবেশকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ক্লাস্টার তৈরি করে যে পরিমাণ বাজি উৎপাদিত হবে, তা কোন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হবে? সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, এ রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ইংরেজি নববর্ষে বর্ষবরণ লগ্নের আধ ঘণ্টার কিছু অধিক সময়, কালীপুজোর রাতে আটটা থেকে দশটা, ছটপুজোর সকালে ছ’টা থেকে আটটা শুধুমাত্র সবুজ বাজি পোড়ানোর নির্দেশ জারি করেছিল। এই নির্দিষ্ট সময় ধরে বাজি ফাটানো হলে তার চাহিদা এমন বিপুল পর্যায়ে পৌঁছয় না। সুতরাং প্রশ্ন উঠে এসেছিল— তবে কি ক্লাস্টার গড়ে তোলার আড়ালে অবৈধ বাজি ব্যবসাকেই বৈধতা দানের প্রচেষ্টা করছে রাজ্য?

যদি ধরেও নেওয়া যায় যে, এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের উদ্দেশ্যটি সৎ, অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করাই মূল লক্ষ্য, তবে প্রশ্ন ওঠে— ক্লাস্টার তৈরির কাজে এখনও এমন ঢিলেমি কেন? যে রাজ্যে বেশ কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে কার্যত প্রতি গৃহে বাজি তৈরির কাজটি চলে, সেখানে ক্লাস্টার গড়ে তুলে সকলকে এক ছাদের নীচে আনার দাবিটি কতখানি বাস্তবসম্মত, সে বিষয়েও ভাবা জরুরি। বস্তুত, এ এমন এক শিল্প, যার মধ্যে বৈধ-অবৈধ সীমারেখাটি টানা কার্যত ‘সবুজ বাজি’র সংজ্ঞার মতোই ধোঁয়াশাময়। সেই হেতু নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। তাই প্রশাসনকে সর্বাগ্রে ভাবতে হবে, এমন প্রাণঘাতী বিপজ্জনক শিল্পকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার যুক্তি কি? যে শিল্পের সঙ্গে বহু মহিলা এবং শিশুর জীবনের প্রশ্নটি জড়িত, তার পক্ষে কোনও অজুহাতই কি যথেষ্ট? সমস্যা হল, অন্য পথে চলতে গেলে প্রভাবশালী বাজি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং দলের একাংশের বিষনজরে পড়ার সম্ভাবনাটি প্রবল। নির্বাচন সম্মুখে সেই ঝুঁকি প্রশাসন নেবে, এমন চিন্তা আকাশকুসুমমাত্র।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Firecrackers Cluster

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}