Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
racism

খণ্ডতার অনুশীলন

সুতরাং, পঞ্জাবে দলিত ভোটের বৃহদংশই এক্ষণে আম আদমি পার্টির খাতায়। বহুজন সমাজ পার্টির সহিত জোটে শিরোমণি অকালি দল।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২৭
Share: Save:

পঞ্জাবে এই প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিলেন এক দলিত নেতা: এই ঘোষণায় নূতন কিছু নাই। ভারতীয় সমাজে জাত বিষয়টি চিরদিনই ঘোর বাস্তব; ১৯৯০-এর দশকে ‘মণ্ডল রাজনীতি’র বিকাশের পর রাজনীতিতেও তাহার অবশ্যম্ভাবিতা আর অস্বীকার করা চলে না। ইতিহাসই প্রমাণ, জনসাধারণ ক্রমশ সত্তাপরিচয়ের রাজনীতির সূত্রেই আপনাপন অধিকার ও পাওনাগন্ডা বুঝিয়া লইতে চাহিতেছেন। ইহা কেবল ভারত নহে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও সত্য। বিশেষত জাতবৈষম্য অধ্যুষিত ভারতীয় রাজনীতিতে ইহাকে এড়াইয়া বা পাশ কাটাইয়া যাওয়া সম্ভবই ছিল না, বরং জাতপাতের প্রবল অস্তিত্বের নিরিখেই গণতন্ত্রের প্রশ্নটিকে ভাবিতে হইবে, ঠিক-ভুল বা ন্যায়-অন্যায় বিচার্যের উপর উঠিয়া বহু বিশেষজ্ঞই ইতিমধ্যে ইহা বলিয়াছেন। স্বাভাবিক ভাবেই ভারতেও সেই বাস্তব প্রবল ভাবে নিজেকে জাহির করিবে। এই কারণেই বিহার ও উত্তরপ্রদেশে জাতগণনার জোরালোতম দাবি উঠিবে, নির্বাচনের আবহে যাহা রীতিমতো আক্রমণাত্মক শোনাইবে। যে সমাজ ও রাজনীতি জাতপাতের অঙ্কে বিভক্ত, সেইখানে কাহারও সামাজিক অবস্থান নির্ণয় করিতে অথবা কোন গোষ্ঠী কতখানি পিছাইয়া আছে, তাহা জানিতে জাতপাতের হিসাবটি বুঝিয়া লওয়া বিনা গত্যন্তর নাই। পঞ্জাবের সিদ্ধান্তটিও তাই এক দিক হইতে ‘স্বাভাবিক’।

তাহা বলিয়া গোটা পরিস্থিতিকেই স্বাভাবিক বলা চলে না। রাজনীতি যে সামাজিক ন্যায় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি লইয়া আসে, সেই স্থলে মানুষকে কেবল পরিচিতির খণ্ডাংশে দেখিলে তাহা সমগ্রের পক্ষে শুভ হইবার কথা নহে। তাই রাজনীতি রাজনীতির মতো চলিলেও, ন্যায় ও উন্নয়নের প্রশ্নগুলি সামগ্রিক বিচারে রাজনীতি অতিক্রম করিলে মঙ্গল। যখন উনিশশো নব্বইয়ের দশকে সত্তাপরিচিতির রাজনীতি ভারতের বাস্তবকে গ্রাস করিতেছিল, তখন তাহার অবশ্যম্ভাবিতা বুঝিয়াও বিশেষজ্ঞরা এই সতর্কবার্তা শুনাইয়াছিলেন। স্বভাবতই, সেই সব বার্তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়াছে, ভোটব্যাঙ্ক সব সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রশ্নের ভিত্তি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। রাজনীতি শুধু খণ্ডতার সাধনায় দৃপ্ত হইয়া উঠিয়াছে।

সুতরাং, পঞ্জাবে দলিত ভোটের বৃহদংশই এক্ষণে আম আদমি পার্টির খাতায়। বহুজন সমাজ পার্টির সহিত জোটে শিরোমণি অকালি দল। তাহাদের দলিত উপমুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি টপকাইয়া বিজেপি দলিত নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী বানাইবে বলিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এমতাবস্থায় ভোটব্যাঙ্ক ফিরিয়া পাইতে কংগ্রেস সরাসরি যুদ্ধে নামিতে ব্যগ্র। ইহাই এখন প্রতিযোগিতামূলক গণতন্ত্রের ছবি, নির্বাচনের পূর্বে যাহা তুঙ্গে পৌঁছাইয়া থাকে। তাই গুজরাতে ভূপেন্দ্র পটেলকে মুখ্যমন্ত্রী বানাইবার পশ্চাতে বিগত ভোটে বিজেপির পাটীদার ভোট খোয়াইবার তিক্ত অভিজ্ঞতা কাজ করিতেছে কি না, উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন শিয়রে আসিবার ফলে মন্ত্রিসভার রদবদলে এত সংখ্যক ওবিসি সাংসদ ঠাঁই পাইলেন কি না, এই সব গুঞ্জনই রাজনীতির সদরমহল অধিকার করিয়াছে। জাত-রাজনীতির বাস্তবতা ও অবশ্যম্ভাবিতা মানিয়াও রাজনীতির এমত অনুশীলন, বসুধাকে খণ্ড ক্ষুদ্র করিয়া দেখিবার এই অভ্যাস যে পীড়াদায়ক, তাহা না বলিয়া উপায় কী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

racism Racial Discrimination Caste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE