E-Paper

অন্য ছুটি

আপাতদৃষ্টিতে এ ভাবনায় বিশেষ অভিনবত্ব নেই, কাজগুলিও অতি সাধারণ। কিন্তু সমগ্র বিষয়টিকে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বসালে তার গুরুত্ব বোঝা যায়।

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ০৭:৫৭
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

গরমের ছুটি শেষের মুখে। রাজ্যের সরকারি ও সরকারপোষিত স্কুলগুলিতে তালা খুলেছে। বেসরকারি স্কুলগুলিতেও একে একে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। মাসাধিক কালের হুল্লোড়-শেষে ফের সেই ছক-বাঁধা জীবন। তবে দীর্ঘ ছুটির সবটুকুই হুল্লোড়ে ভরা থাকে না, পড়াশোনার সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংযোগ যাতে একেবারে মুছে না যায়, তার জন্য সব স্কুলেই কিছু পড়া-লেখার কাজ বরাদ্দ করা দীর্ঘ কালের রেওয়াজ। তবে চিরচেনা হাতের লেখা অভ্যাস করা, অঙ্ক কষা বা রচনা লেখার বাইরে কিছু অন্য রকম ভাবনা-চিন্তা সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে স্কুলগুলির মধ্যে। এ বছরও যেমন বেশ কিছু স্কুল ‘ছুটির কাজ’-এ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল। সে কাজ নিছক পড়াশোনা সম্পর্কিত নয়, তার মধ্যে রয়েছে মা-বাবার সঙ্গে রাতের শহর দেখা, দাদু-দিদার কাছে গল্প শোনা, এক সঙ্গে সিনেমা দেখা, রান্না করা, জাদুঘর, পার্ক, বা শহরের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার মতো নানা বিষয়।

আপাতদৃষ্টিতে এ ভাবনায় বিশেষ অভিনবত্ব নেই, কাজগুলিও অতি সাধারণ। কিন্তু সমগ্র বিষয়টিকে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বসালে তার গুরুত্ব বোঝা যায়। কর্মব্যস্ত সময়ে, বিশেষত যে পরিবারে মা-বাবা উভয়েই কর্মরত, সেখানে সাধারণ কাজগুলিই অ-সাধারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্কুলগুলির অভিজ্ঞতাও বলছে, পড়াশোনা সম্পর্কিত কাজ শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ করে ফেলে। বাকি থেকে যায় এই ‘অন্য’ কাজগুলি। পরিবারের সদস্যদের এক সঙ্গে বসে সিনেমা দেখা, গল্প করার অবকাশ মেলে কতটুকু? অণু পরিবারে ক’জন শিশুই বা আত্মীয়পরিজনদের সঙ্গ উপভোগ করতে পারে? অথচ, শিশু সঙ্গ চায়, মনোযোগ চায়। এ-যাবৎ অদেখা, অজানা দুনিয়াটিতে পুঁজি ভরে নেওয়ার আগ্রহ তার অপরিসীম। একমাত্র নিকটজনরাই পারেন সেই পুঁজির জোগান দিতে। কিন্তু দিনভর পরিশ্রমের শেষে কত জন অভিভাবকের সেই অবুঝ-সবুজদের সরল প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার, খেলার, অপটু হাতের কাজে শামিল হওয়ার ইচ্ছা বা প্রাণশক্তি থাকে? স্কুলগুলির এই ভিন্ন স্বাদের ‘হোমওয়ার্ক’ তাই শিক্ষার্থীর চেয়েও বেশি অভিভাবকদের উদ্দেশে নির্মিত। তাঁদের প্রতি বার্তা— ক্ষণিক থামার, ঘোড়দৌড়ের ময়দান থেকে খানিক সময় চুরি করে সন্তানদের হাতে তুলে দেওয়ার।

এর একটি অন্য দিকও আছে। পারিবারিক সান্নিধ্যে শিশুর অত্যধিক মোবাইল আসক্তিতে লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা। ডিজিটাল দুনিয়া দীর্ঘ দিনই শিশুর নিজস্ব পৃথিবীতে থাবা বসিয়েছে। খোলা মাঠ, পশু-পাখিদের জীবন, শহরের বাইরের প্রকৃতি তার কাছে আকর্ষণ হারিয়েছে। একলা শিশু আনন্দ খুঁজে নিয়েছে শুধুমাত্র ডিজিটাল যন্ত্রের ভিতর। এই প্রবণতা তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সহায়ক নয়। স্কুলগুলি তাই সচেতন ভাবে যন্ত্রের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে শিশুদের পরিচিত করানোর উদ্যোগ করেছে। লক্ষণীয়, কাজগুলির প্রায় সবটুকুই নির্ধারিত হয়েছে কিন্ডারগার্টেন থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতি, অর্থাৎ যে সময়টুকুতে শৈশব অতিক্রম করে সে ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথে হাঁটে। গড়ে ওঠার এই ধাপগুলিতে স্কুলের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও তার পাশে থাকা প্রয়োজন। অন্যথায় অসম্পূর্ণতার বোঝা বইতে হবে জীবনভর। অ্যাক্টিভিটি ক্লাস, শপিং মলের সাধ্য কি সেই ফাঁক পূরণ করার?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Summer Vacation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy