E-Paper

গতির শিকার

জানা গিয়েছে, শীতের ভোরে তাঁরা বাইকে ‘জয়রাইড’ বা উল্লাস-সফরে বেরিয়েছিলেন। গতি এবং সুরক্ষার দিক থেকে সেই আনন্দযাত্রা কোনও বিধিনিষেধই মানেনি।

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১৭

ক্ষণিকের আনন্দ যদি শেষ পর্যন্ত বিপদের কারণ হয়ে ওঠে, তবে সেই আনন্দ পরিত্যাজ্য। সংশয় হয়, কলকাতার তরুণ প্রজন্মের একাংশ বুঝি সেই কথায় বিশ্বাসী নন। ফলত, ক্ষেত্রবিশেষে তাঁদের পরিণতিটি মর্মান্তিক হয়ে দাঁড়ায়। সম্প্রতি এক বাইক-দুর্ঘটনায় উড়ালপুল থেকে পড়ে দুই যুবকের মৃত্যু সেই সত্যটিকেই আরও এক বার স্পষ্ট করল। জানা গিয়েছে, শীতের ভোরে তাঁরা বাইকে ‘জয়রাইড’ বা উল্লাস-সফরে বেরিয়েছিলেন। গতি এবং সুরক্ষার দিক থেকে সেই আনন্দযাত্রা কোনও বিধিনিষেধই মানেনি। ফলত, তীব্র গতিতে উড়ালপুলের উপর বাইক চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁরা ৬০ ফুট নীচের রাস্তায় পড়ে যান।

দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ‘মা’ উড়ালপুলে, যে জায়গাটি গত কয়েক বছরে বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী। তীব্র গতির জন্য নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উড়ালপুলের নীচে পড়ে মৃত্যু ঘটেছে একাধিক বার। ঘটেছে উড়ালপুল থেকে নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও। একের পর এক দুর্ঘটনা ঠেকাতে ইতিপূর্বে নানাবিধ প্রস্তাব করা হয়েছিল। উড়ালপুলের বিপজ্জনক বাঁকে ক্র্যাশ ব্যারিয়ার লাগানোর প্রস্তাবও উঠেছে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করা যায়নি নানাবিধ কারণে। কেন শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উড়ালপুলে গতি নিয়ন্ত্রণের কোনও কার্যকর উপায় এত দিনেও ভাবা গেল না— সেই প্রশ্নটি এ ক্ষেত্রে ওঠা স্বাভাবিক। উড়ালপুলে যানবাহনের গতি এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পথ খুঁজতে এখনও যদি প্রশাসন আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা উদ্বেগের কথা। শুধুমাত্র এই একটি উড়ালপুলই নয়, সার্বিক ভাবে কলকাতার মতো জনবহুল শহরে তীব্র গতি এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানো হামেশাই দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে উঠে আসছে। শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাটি তবে কোন উদ্দেশ্য সাধন করছে, প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক হবে না। কিছু দিন পূর্বে সল্ট লেক অঞ্চলে স্কুটি এবং বাসের সংঘর্ষে শিশুমৃত্যুর পর রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, কলকাতার রাস্তায় তীব্র গতিতে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু প্রশাসনের সেই অনমনীয় মনোভাবের প্রকাশ পথে এখনও বিশেষ দেখা যায়নি।

লক্ষণীয়, উল্লাস-সফরে বেরিয়ে দুর্ঘটনার একটা বড় অংশ ঘটে ভোরবেলায়। অভিযোগ, সেই সময় পুলিশের নজরদারি তেমন থাকে না। এই ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা করা হবে— সেই প্রশ্নও থেকে যায়। তবে নিঃসন্দেহে গতিসর্বস্ব দুর্ঘটনাগুলি ঠেকানোর সম্পূর্ণ দায় পুলিশ-প্রশাসনের নয়। এর অধিকাংশ দায়ই সেই সব চালকের উপর যাঁরা আইন ভাঙাকেই আনন্দোৎসব মনে করেন। মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং পরিপার্শ্বের প্রতি তোয়াক্কা না করার এ-হেন মানসিকতা নিয়ন্ত্রণে চাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। কারণ, এঁরা শুধুমাত্র নিজেদের বিপদই ডেকে আনেন না, একই সঙ্গে বিপন্ন করেন আরও অনেককে যাঁরা তাঁদের আশপাশে রয়েছেন। সাম্প্রতিক ঘটনাটিতে মৃত্যু হয়েছে বাইকচালক এবং আরোহীর। কিন্তু এমন অনেক ঘটনা আছে, যেখানে নিয়ন্ত্রণ হারানো গাড়ি নিরীহ পথচারী, ফুটপাতবাসী, অথবা অন্য গাড়িকে ধাক্কা মেরে তাঁদের সবিশেষ ক্ষতির কারণ হয়েছে। এই কাণ্ডজ্ঞানহীনতাকে ক্ষমা নয়। আনন্দের নামে রাস্তায় যথেচ্ছাচার বন্ধ হোক, আইন কঠোর হোক— মৃত্যুমিছিল আর নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Death Rash Driving

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy