Advertisement
E-Paper

স্বস্তির শ্বাস?

চলতি সপ্তাহ থেকে স্কুলে ছুটি এবং অনলাইন পর্ব কাটিয়ে অফলাইন পঠনপাঠন শুরু হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস বইছে রাজ্য জুড়ে।

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২২ ০৫:২৮

পাঠশালা তবে খুলল। চলতি সপ্তাহ থেকে স্কুলে ছুটি এবং অনলাইন পর্ব কাটিয়ে অফলাইন পঠনপাঠন শুরু হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস বইছে রাজ্য জুড়ে। শিক্ষক থেকে অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, সকলেই যেন সন্ত্রস্ত বোধ করছিলেন পড়াশোনার ভবিষ্যৎ ভেবে। স্বাভাবিকে ফেরার চেষ্টাই যে কত আনন্দদায়ক, অস্বাভাবিকের এই দুই বছর-ব্যাপী দাপাদাপিতে তা প্রমাণ হল। বেসরকারি স্কুল খোলার সময়ই দেখা গিয়েছিল, উপস্থিতির হার প্রায় ৯৫ শতাংশ, উৎসাহের মাত্রা আকাশছোঁয়া। এ সব পরিসংখ্যান সার্বিক পরিস্থিতির কোনও ছবি দেয় না, এবং শুধুমাত্র শহর কলকাতার বেসরকারি স্কুলের উপস্থিতির হার বিচার করে রাজ্যের শিক্ষা নিয়ে বেশি আশাবাদী হওয়াও বোকামি। তবুও পরিসংখ্যানের মধ্যে শুভ ইঙ্গিত খুঁজতে ইচ্ছা করে। অন্তত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের অগ্রজদের মতো অনলাইনের ফাঁকিবাজির পড়া এবং পরীক্ষার প্রতি আস্থা রাখেনি ছোটরা, এটুকু তো স্বস্তি দেয় বটেই!

গত দু’বছরের অপরিসীম ক্ষতির মধ্যে কিছু রুপোলি রেখা এগুলিই। প্রথম রেখা, স্কুল খুলতেই উপস্থিতির এই সন্তোষজনক হার। দ্বিতীয় রেখা, শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে উদ্যোগের প্রকাশ। কিছু সরকার-পোষিত স্কুলে শিক্ষকরা গ্রীষ্মের ছুটিতেও অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে পাঠ্যক্রম সময়ে সমাপ্ত করা যায়। কিছু স্কুল গ্রীষ্মাবকাশ-অন্তে বিশেষ ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। উঁচু শ্রেণিগুলিতে এত স্বল্প দিনে পাঠ্যক্রম শেষ করে পরীক্ষায় বসা শিক্ষার্থীদের পক্ষে দুষ্কর হতে পারে, সেই কথা ভেবেই এ সব সিদ্ধান্ত। করোনার আবারও একটি ঢেউ আসবে কি না কেউ জানে না। আবার এক শ্রেণির পড়ুয়া নিয়মিত পঠনপাঠন থেকে ছিটকে যাবে কি না, তা-ও জানা নেই। এই আশঙ্কা মাথায় নিয়েই যত দিন সম্ভব স্কুল খোলা রেখে পাঠ্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে অনেক দিন, এবং রাজ্য সরকার অন্য পথে চলায় শিক্ষকদের উদ্যোগের উপর নির্ভর না করে উপায় থাকছে না। হয়তো এই উদ্যোগ সীমিত সংখ্যক স্কুলেই সীমাবদ্ধ, এবং তারাই বাড়তি ক্লাস করার সুযোগ পায়, যাদের অনলাইন ক্লাস করার সামর্থ্য আছে। তৎসত্ত্বেও শিক্ষকরা প্রতিকূলতা পেরোনোর যে তাগিদ অনুভব করেছেন, সেটা কম উল্লেখযোগ্য নয়।

দুশ্চিন্তার অবশ্য অবসান নেই। যে সব ছেলেমেয়ে আর ক্লাসে ফিরল না, তাদের ফেরানোর জন্য কোনও পরিকল্পনা আছে কি? যারা ফিরল, তাদের পড়াশোনার ক্ষতির ফাঁক বোজানোর ব্যবস্থা আছে? আবারও যদি কোনও সংক্রমণ উপস্থিত হয়, তার কোনও আপৎকালীন ব্যবস্থা আছে? গত দু’বছরে শিক্ষার কতখানি ক্ষতি হয়েছে, তার একটা বাস্তব উপলব্ধি কি সত্যিই সরকারের আছে? যে সময় শিক্ষাদিবস বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক ছিল, সেই সময় ক্রমশ ছুটি বাড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখে অন্তত তেমন কোনও প্রমাণ মেলে না। আবহাওয়া সহনীয় হয়ে যাওয়ার পরও যে ভাবে সরকারি জেদের বশে বিদ্যালয়গুলির দরজা বন্ধ রাখা হল— তা কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, প্রায় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। শিক্ষা বিষয়টি তো শুধু বর্তমানের প্রয়োজন নয়, ভবিষ্যৎ জীবনের রসদ। ছোটদের তা থেকে বঞ্চিত করার আগে কেবল প্রশাসনিক বিবেচনাই কি যথেষ্ট, না কি পাশাপাশি কোনও বিশেষজ্ঞ মহলের মতামতও শোনা উচিত? শাসক পক্ষ কি ভেবে দেখবেন?

Online Examination Schools
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy