E-Paper

গরমিল

ভারতে কোভিডে, বিশেষত ২০২১-এ কোভিডে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকার দেখিয়েছে, আসল সংখ্যাটা তার চেয়ে অনেক বেশি।

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৫ ০৬:০৫
Share
Save

অতিমারি চলাকালীন এবং তার পরেও ভারতের পরিসংখ্যানবিদ ও গবেষকেরা বার বার বলেছিলেন, সরকারের দেওয়া কোভিডজনিত মৃত্যু-তথ্যে গরমিল আছে, মৃতের সংখ্যা চেপে প্রকাশ করা হচ্ছে। কেন্দ্রও পাল্টা জানিয়ে আসছিল যে, কোনও ভুল নেই, তথ্যে ঢাকাচাপার ব্যাপারই নেই, সরকারি স্বাস্থ্য-প্রশাসন ঠিক তথ্যই রাখছে ও জানাচ্ছে। কথায় কথা বাড়ে, কিন্তু তথ্যেই আসল তথ্য মেলে। ২০২১-এর মারাত্মক কোভিড ডেল্টা-ঢেউয়ের চার বছর পর, সম্প্রতি প্রকাশিত তিনটি সরকারি রিপোর্ট যা তথ্য দিচ্ছে, তাতে খোদ সরকারেরই চরম বিব্রত হওয়ার পালা। ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (সিআরএস) ২০২১’ রিপোর্ট, ‘মেডিক্যালি সার্টিফায়েড কজ় অব ডেথস (এমসিসিডি) ২০২১’ রিপোর্ট এবং ‘স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (এসআরএস) ২০২১’ বুলেটিনের বিশদ তথ্য থেকে এই মর্মার্থই বোঝা যাচ্ছে— ভারতে কোভিডে, বিশেষত ২০২১-এ কোভিডে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকার দেখিয়েছে, আসল সংখ্যাটা তার চেয়ে অনেক বেশি।

দেশে বছরপ্রতি নথিভুক্ত মৃত্যুর সংখ্যা কত, জানা যায় সিআরএস-এ। ভারতে সব মৃত্যু সরকারি ভাবে নথিভুক্ত হয় না, এই সত্য ধরে নিয়েও দেখা যাচ্ছে, ২০২১-এ দেশে নথিভুক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১.০২ কোটি, ২০২০-র তুলনায় প্রায় ২০ লক্ষ বেশি। ২০১৬-২০ সময়কালে যেখানে বছরপ্রতি মৃত্যুসংখ্যা বেড়েছে ২ থেকে ১০%, সেখানে ২০২০-র তুলনায় ২০২১-এ মৃত্যুসংখ্যা বৃদ্ধি ২৬%, যে বছরে এক ডেল্টার প্রকোপ ছাড়া মৃত্যুর প্রবল কারণ হয়ে উঠতে পারে তেমন কিছু ঘটেনি। আবার ভারতে নথিভুক্ত সব মৃত্যুর অতি ক্ষুদ্রাংশই ‘মেডিক্যালি সার্টিফায়েড’ হয়। ২০২০ থেকে সরকারি ভাবে মৃত্যুর কারণ হিসাবে একটি নতুন ‘ক্যাটেগরি’ যুক্ত হয়: ‘বিশেষ কারণে মৃত্যু (কোভিড)’। সরকারি হিসাবমতে ২০২০-২১’এ দেশে কোভিডে মারা যান ৪ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ; আর এমসিসিডি রিপোর্ট বলছে, ২০২১-এ মোট মৃত্যুর মাত্র ২৩.৪% মেডিক্যালি সার্টিফায়েড অর্থাৎ সেখানে মৃত্যুর কারণ নির্দিষ্ট করে বলা আছে। তা হলে ধরে নেওয়া কি অসঙ্গত হবে যে, কোভিডে মৃত বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর কারণ ‘কোভিড’ বলে নির্দিষ্ট করা হয়নি? ‘রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ বলে চালিয়ে দেওয়ার আশঙ্কাও কি অমূলক, যেমন ভূরি ভূরি দেখা গেছে তখন?

সিআরএস যেমন মোট মৃত্যুসংখ্যার খতিয়ান দেয়, এসআরএস সেখানে দেখায় আনুমানিক মৃত্যুহার। ২০২১-এর এসআরএস বুলেটিন মতে, ২০২১-এ ভারতে মৃত্যুহার ছিল ২০১২-র পর থেকে দশ বছরে সর্বোচ্চ, ৭.৫ (২০২০-তে ছিল ৬— প্রতি এক হাজার জনে ছ’জনের মৃত্যু)। যে কোনও দেশের পক্ষেই এক বছরে মৃত্যুহারে এতখানি ফারাক উদ্বেগজনক। ২০১৯ থেকে ২০২০-তে অর্থাৎ কোভিডের প্রথম বছরে যেখানে শতকরা হিসাবে মৃত্যু বেড়েছে মাত্র ১.৬৩%, ২০২০ থেকে ২০২১-এ পৌঁছে তাই বাড়ছে ২৬.৮৪%! কোভিডের ডেল্টা-ঢেউ’এর প্রভাব ব্যতীত এই বৃদ্ধির আর কোনও ব্যাখ্যা হয় কি? অতিমারির চার বছর পর, সরকারেরই পেশ করা তিনটি রিপোর্টের এই এত তথ্যের পাশে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া সেই আদি তথ্য, অর্থাৎ কোভিডে ভারতে মোট ৪ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যুর হিসাবটি বলছে, ভুল হয়েছিল বিলকুল। এবং, তা সম্ভবত অনিচ্ছাকৃত নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CRS SRS

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।