E-Paper

মারণক্ষেত্র

ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)-এর তরফে দাবি করা হয়, শরিফ-কে ইচ্ছাকৃত ভাবেই নিশানা বানানো হয়েছিল, যে-হেতু গোয়েন্দাসূত্রে তারা জানত ওই সাংবাদিক হামাসের এক সক্রিয় সামরিক শাখার কর্মী ছিলেন।

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৫ ০৬:৫০

ছবি: রয়টার্স।

জর্জ বার্নার্ড শ একদা লিখেছিলেন ‘হত্যা হল সেন্সরশিপ-এর চরম রূপ’। সম্প্রতি গাজ়া সিটিতে ইজ়রায়েলি বিমান হানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিশিষ্ট প্যালেস্টাইনি সাংবাদিক আনাস অল-শরিফের মৃত্যুতে সেই সত্যের সম্মুখীন হতে হল গোটা বিশ্বকে। হামলায় আনাসের সঙ্গে নিহত হন তাঁর চার জন সহকর্মীও। ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)-এর তরফে দাবি করা হয়, শরিফ-কে ইচ্ছাকৃত ভাবেই নিশানা বানানো হয়েছিল, যে-হেতু গোয়েন্দাসূত্রে তারা জানত ওই সাংবাদিক হামাসের এক সক্রিয় সামরিক শাখার কর্মী ছিলেন। যদিও এই অভিযোগ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তো বটেই, আনাস নিজে স্পষ্ট ভাবে অস্বীকার করেছিলেন। লক্ষণীয়, গাজ়ায় ইজ়রায়েলি সামরিক বাহিনী বর্তমানে যে গণহত্যা চালাচ্ছে, তা বাকি বিশ্বের কাছে তুলে ধরার অন্যতম পরিচিত কণ্ঠস্বর ছিলেন আনাস। যুদ্ধক্ষেত্রে জেনিভা কনভেনশনস-এর মতো আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষা সত্ত্বেও, গত দু’বছরে যুদ্ধে ১৮০ জনেরও বেশি প্যালেস্টাইনি সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মী নিহত হয়েছেন। ইজ়রায়েল যে ভাবে গাজ়ায় সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের ব্যবস্থা করেছে, এই আক্রমণগুলিকে দেখতে হবে তারই বৃহত্তর প্রেক্ষিতে। সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে গত দু’বছর ধরে বিদেশি সাংবাদিকদের স্বাধীন ভাবে ছিটমহলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসছে ইজ়রায়েল। এর ফলে গাজ়ার পরিস্থিতির বিষয়ে জানার উপায়— হয় কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত ইজ়রায়েলি সামরিক বাহিনীর সরবরাহ করা তথ্য, কিংবা দ্বিতীয় কোনও সূত্রের উপরে নির্ভর করা। এমতাবস্থায়, প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্যালেস্টাইনি সাংবাদিকরাই প্রাথমিক ও একমাত্র উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ফলে বোঝা সহজ যে, সাংবাদিকদের উপরে এ-হেন হিংসাবৃদ্ধি আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এক গভীর উদ্বেগজনক প্রবণতার অংশ— যেখানে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে চায় নিজেদের অপরাধ অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখতে।

এ দিকে, ইজ়রায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার যুদ্ধ সম্প্রসারণ এবং গাজ়া শহরের নিয়ন্ত্রণ দখলের সিদ্ধান্ত প্যালেস্টাইনি ছিটমহলে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট নিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক মহলের অভিযোগ, প্যালেস্টাইনিদের বিরুদ্ধে বাস্তবিকই গণহত্যা চালাচ্ছে ইজ়রায়েল। তাদের বলপূর্বক অনাহারের দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় দুর্ভিক্ষ এবং অপুষ্টিতে অসংখ্য শিশুমৃত্যুর কারণে নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে তীব্রতর হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ। এমনকি মিত্র রাষ্ট্র ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডাও যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অথচ, কোনও কিছুতেই কর্ণপাত করছেন না ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। অনাহারে কঙ্কালসার শিশুদের ছবি বাকি বিশ্বকে হতবাক করলেও, তাঁর দাবি গাজ়ায় কোনও দুর্ভিক্ষ নেই। এও সত্য যে নেতানিয়াহু ইজ়রায়েলি আগ্রাসনের মুখ হলেও, তাঁর দেশের এক বড় অংশের কাছে তিনি ও তাঁর প্রশাসন যথেষ্ট কট্টর নয়। নাগরিক সমাজ ও মন্ত্রিসভার বহু সদস্যের মতে, গাজ়া দখল, প্যালেস্টাইনিদের সম্পূর্ণ বহিষ্কার এবং ইহুদিদের দ্রুত পুনর্বাসনই একমাত্র লক্ষ্য। পশ্চিমি পৃষ্ঠপোষকতায় সেই স্বপ্নপূরণের দিকেই ঘটনাবলি এগোচ্ছে। ফলে সেখানে সাংবাদিক থেকে শিশুদের নিধনলীলা আটকাবে কে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

gaza Israel Hamas War Israel Palestine Conflict

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy