E-Paper

অশ্রুত

ভারতে সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার একের পর এক ঘটনা দেখে মনে হতে বাধ্য, স্বীয় দায়িত্ব বিষয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই যথেষ্ট সচেতন নয়।

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৫ ০৬:০৭

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক জন শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশও ঘটে। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানই যখন কোনও শিক্ষার্থীর কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে, তাঁকে বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্বের দিকে ঠেলে দেয়, তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে সমস্যার সমাধানের দায়িত্বটিও নিঃসন্দেহে সেই প্রতিষ্ঠানের, কারণ তার উপর ভরসা করেই শিক্ষার্থী দিনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করেন, হস্টেলজীবনও বেছে নেন। কিন্তু ভারতে সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার একের পর এক ঘটনা দেখে মনে হতে বাধ্য, স্বীয় দায়িত্ব বিষয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই যথেষ্ট সচেতন নয়। নয়তো এক জন শিক্ষার্থী সকলের অলক্ষ্যে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, অথচ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ টেরটিও পেলেন না, এমন হয় কী করে? ওড়িশার কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি-র যে বছর কুড়ির এঞ্জিনিয়ারিং পাঠরত নেপালি ছাত্রীটি সম্প্রতি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন, তিনি ক্যাম্পাসেরই এক ছাত্রের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র উভয়ের কাউন্সেলিং-এর প্রস্তাব দিয়েই নিজ কর্তব্যটি সাঙ্গ করেন।

এই ঘটনা দুঃখের, আতঙ্কেরও। আতঙ্কের কারণ, সমগ্র ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোথায় ফাঁক ছিল, সেই আত্মবিশ্লেষণে না গিয়ে কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তারক্ষী এবং বাউন্সারেরা অবস্থানরত নেপালি পড়ুয়াদের মারধর করে বলে অভিযোগ উঠেছে। নেপালি শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছাড়াও যে জরুরি প্রশ্নটি উঠে আসে, তা হল— নিজের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের প্রতি এই কি কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত ব্যবহার? এমনিতেই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষা, ধর্ম, পোশাকের দিক থেকে নানা পার্থক্য। ভিন দেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই পার্থক্য আরও প্রকট। তাঁদের জন্য কর্তৃপক্ষের অনেক বেশি সতর্ক পদক্ষেপ প্রয়োজন। একের আচরণ যাতে অন্যের অবসাদের কারণ না হয়ে ওঠে, তার জন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলার ব্যবস্থা, এবং সেই কাজে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের নিয়োজিত করা প্রয়োজন। ‘গ্রিভান্স সেল’গুলির এই কাজই করার কথা। তা সত্ত্বেও যখন দেখা যায়, ২০১২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৭৮, তখন প্রশ্ন জাগে, গ্রিভান্স সেলগুলি কী কাজ করছে? শুধু কিছু নিয়মমাফিক আলোচনাতেই তার দায়িত্ব শেষ?

২০০৯ সালে র‌্যাগিং বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল— ক্যাম্পাসে হেনস্থার প্রতি কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারির। অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-অভিযোগের কারণ অনুসন্ধান, এবং অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তিদান। তার পরও এই দেশ সাক্ষী থেকেছে রোহিত ভেমুলার মর্মান্তিক মৃত্যুর। ক্যাম্পাসে হেনস্থার মাত্রা এবং ধরনে নানা পরিবর্তন সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি এই নব যুগের মানসিকতার সঙ্গে তাল না মিলিয়ে সেই শতাব্দীপ্রাচীন কাঠামোকে আঁকড়ে রেখেছে। ফলে, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ, অভিমানগুলি অশ্রুতই থেকে যাচ্ছে বহুলাংশে। শিক্ষার প্রয়োজন মিটলেও মনের প্রয়োজনগুলি মিটছে না। এই সঙ্কটের শেষ কোথায়?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suicide Case Students Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy