E-Paper

উদ্বেগ অহেতুক নয়

বিহারে যে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া আপাতত চলমান, নিকট ভবিষ্যতে তা পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হতে চলেছে— এই প্রক্রিয়া নিয়ে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি সর্বোচ্চ আদালত।

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৫ ০৫:২৩

ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের কথা মান্য করে চলার দায় ভারতের নির্বাচন কমিশনের আছে কি না, তার পরীক্ষা এখন। কমিশনের কার্যধারা নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা চলছে, সেই সূত্রে উঠে এসেছে কয়েকটি গুরুতর প্রশ্ন। বিহারে যে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া আপাতত চলমান, নিকট ভবিষ্যতে তা পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হতে চলেছে— এই প্রক্রিয়া নিয়ে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি সর্বোচ্চ আদালত। বস্তুত, ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের অভিযানে নেমেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন— এই মর্মে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং নাগরিক সমাজ থেকে প্রবল আপত্তি উঠলেও আদালতের চত্বরে কিন্তু কোনও মামলাকারী পক্ষই কমিশনের কর্মপ্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ চায়নি। ফলত পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধন এগিয়ে চলেছে। তবে তার মধ্যেই অনেকগুলি আশু সঙ্কটের সম্ভাবনা দেখে সতর্কবার্তা দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চের ঘোষণা, ভোটাররা গণ হারে বাদ পড়লে সমগ্র প্রক্রিয়া বাতিল করার ক্ষমতা আদালতের আছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব এবং কর্তব্য, বিচারবিভাগের বার্তা যথার্থ ভাবে অনুধাবন করা, এবং তদনুসারে প্রক্রিয়াটি চালানো। সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিক ভাবে পালন করা হচ্ছে কি না, তার উপরেই নির্ভর করবে ভারতীয় গণতন্ত্রের ভাগ্য।

মনে রাখা দরকার, ভোটার তালিকা সংশোধনের মাধ্যমে বৈধ ভোটার নির্ধারণ করার অর্থ এই নয় যে শাসকের ইচ্ছামতো ও সুবিধামতো দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যায়। দারিদ্রলাঞ্ছিত, স্বল্পশিক্ষিত, অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া শ্রমজীবী সমাজে প্রতিটি ভোটারের ক্ষেত্রে কমিশনের সতর্ক হওয়া দরকার, কোনও ভাবে নাগরিকত্ব প্রমাণে সাধারণ মানুষ অপারগ হচ্ছেন কি না, কিংবা অসহায় কি না। যাঁরা কাজ করতে বাইরের রাজ্যে বসবাসরত, কিংবা রাজ্যেই অন্যত্র স্থিত, তাঁরা নিজ বাসস্থলে ফিরে আসার সুযোগ পেলেন কি না, না পেলে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করা যায় কি না, কিংবা অন্য পদ্ধতিতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার কি না— সবই জরুরি কাজের মধ্যে পড়ে। যে কাগজপত্র সাধারণ মানুষ কষ্টক্রমে এনে হাজির করছেন, তা ঠিকমতো নথিবদ্ধ হচ্ছে কি না, তাও নিশ্চিত করা দরকার। এই দু’টি বিষয় উল্লেখ করা হল এই জন্য যে, বিহারে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত যে কাজগুলি যথাযথ ভাবে হচ্ছে না। বিধানসভা ভোটের আগেই অত্যল্প সময়ের মধ্যে অভিযান চালিয়ে, এই সব ত্রুটিবিচ্যুতি সহকারে যে ভাবে ৬৫ লক্ষ লোককে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হল, তাতে সংশোধন প্রক্রিয়ার অভিমুখ নিয়েই বিপুল সন্দেহের বাতাবরণ চার দিকে।

সুপ্রিম কোর্টের অন্য বক্তব্যগুলিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করুক নির্বাচন কমিশন। যেমন, সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাব, আধার ও ভোটার কার্ড যোগ্যতা প্রমাণের নথি হিসাবে বিবেচিত হোক, এবং সঙ্গে কোথাও জাল নথি পেলে সেইমতো পদক্ষেপও করা হোক। নথি জাল হতে পারে, এই আশঙ্কায় নথির গুরুত্বই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অথচ নির্বাচন কমিশন কিন্তু এখনও ভোটার কার্ড নিয়ে আপত্তি জারি রেখেছে। যে হেতু ভোটার কার্ডের মান্যতা অনুযায়ীই আগেকার নির্বাচনগুলি ঘটেছে, বড় মাপের ভোটার বাতিল প্রক্রিয়া কিন্তু সমগ্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিতে পারে। নথি বিচারের সময় প্রতি জেলায় সাবধানতা নেওয়া অবশ্যই সুবিবেচনা। কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্র এত দিনে জানে যে, ভোটার তালিকায় দুর্নীতির আশঙ্কার কাঁটা উৎপাটন করতে হলে স্থানীয় নিম্ন আধিকারিকদের মতোই উচ্চস্তরের আধিকারিকদের উপরেও কড়া নজরদারি বাঞ্ছনীয়। আর সে জন্য চাই নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠানটির নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা। বিপদ কি সেখানেই নয়?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SIR Voter Lists

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy