E-Paper

প্রবীণ সুরক্ষা

বয়স্কদের নিরাপদে রাখার বন্দোবস্তটি আসলে বৃহত্তর সমাজেরই দায়িত্ব, এবং তা হবে প্রশাসনিক নজরদারিতে।

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:১৩

শহরের অনেক প্রবীণই এখন একা থাকেন। তাঁদের অনেকেই আর্থিক ভাবে সচ্ছল। সন্তানরা সুশিক্ষিত— তাঁরা ক্রমে বিশ্বনাগরিক হয়ে উঠেছেন, এই শহর তাঁদের ঊর্ধ্বগামী পেশাদার জীবন ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রবীণদের একা থাকার যন্ত্রণা যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাঁদের প্রতি অপরাধীদের কুনজর। গত কয়েক মাসে মহানগরে বারে-বারে আক্রান্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। কখনও শয্যাশায়ী প্রবীণের গলায় ছোরা ঠেকিয়ে লুট হয়েছে, কোথাও দীর্ঘ দিন ছক কষে ফেরিওয়ালা পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার খবর মিলছে। ভয় ধরিয়েছে নিউ গড়িয়ার ঘটনা। এজেন্সি দ্বারা নবনিযুক্ত আয়া পুরুষ সঙ্গী নিয়ে এসে বৃদ্ধকে বেঁধে রেখে, বৃদ্ধাকে খুন করেছে সম্পত্তি হাতানোর উদ্দেশ্যে। এই পরিস্থিতিতে ভাড়াটে, গৃহকর্মীদের তথ্য অনলাইনে স্থানীয় থানায় জানিয়ে রাখতে প্রবীণদের আবারও তাগাদা দিয়েছে পুলিশ। ‘প্রণাম’ প্রকল্পেও এমন তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু, শুধু তথ্যভান্ডার গড়েই কি বয়স্কদের রক্ষা করা সম্ভব?

সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবা অবশ্যই প্রয়োজন। প্রবীণ নাগরিক যেন যে কোনও প্রয়োজনে পুলিশকে সহজেই পাশে পান। কিন্তু, পুলিশের উপর যত কাজের চাপ, এবং বাহিনীতে লোকসংখ্যা যেমন অপ্রতুল, তাতে যাবতীয় সদিচ্ছা যোগ করলেও পুলিশের পক্ষে শহরের প্রবীণ নাগরিকদের প্রাত্যহিক দেখভাল করা অসম্ভব। সেটা পুলিশের কাজও নয়— তার কাজ শহরকে নিরাপদ রাখা, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা। বয়স্কদের নিরাপদে রাখার বন্দোবস্তটি আসলে বৃহত্তর সমাজেরই দায়িত্ব, এবং তা হবে প্রশাসনিক নজরদারিতে। ভাড়াটে, গৃহকর্মীদের ছবি-পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রামাণ্য দলিল তাঁদের জ্ঞাতসারেই থানায় জমা দেওয়াকে সামাজিক অভ্যাস করে তুলতে হবে। অন্য দিকে, কর্মীকে বাড়িটি চিনিয়ে দিলেই লোক সরবরাহের এজেন্সির দায়িত্ব ফুরায় না। রেজিস্ট্রেশন বিধি সম্যক মেনে, পুলিশ এবং গ্রাহকের সঙ্গে অবিরত সংযোগ রাখতেই হবে তাদের। অভিযোগ এলে যথাযথ ব্যবস্থা করতে বিলম্ব তাদের গাফিলতি হিসাবেই দেখতে হবে। সরকারের কর্তব্য, একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা, যার কাজ হবে এই গোটা ব্যবস্থাটির উপরে নজর রাখা; কোনও তরফে গাফিলতি হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা গোটা বিষয়টিকে কিছু জরুরি নিয়মের আওতায় আনবে, যাদের কাছে এজেন্সি দায়বদ্ধ থাকবে।

কিছু নাগরিককে বুঝতে হবে, এজেন্সির মধ্যস্থতাকে উপেক্ষা করে গৃহকর্মীকে সরাসরি বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করার অর্থ লক্ষ্মণরেখা লঙ্ঘন। প্রক্রিয়াটি থেকে বেরিয়ে এলে নিজের জীবন ও নিরাপত্তার ভার নিজেকেই বইতে হবে। সামান্য কিছু অর্থ বাঁচাতে এই ঝুঁকিগ্রহণ কতটা যুক্তিসঙ্গত, বিশেষত আজকের দুর্দিনে, সেটাও ভেবে দেখার। অন্য দিকে দেখা যাচ্ছে যে, মানুষ আবার ছোট ছোট নিঃসঙ্গ কুঠুরিতে বিচ্ছিন্ন, স্বার্থসর্বস্ব হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। কোভিডকালে প্রবীণদের পাশে দাঁড়ানোর যে সামাজিক চেতনা জাগ্রত হয়েছিল, সেই অনুভূতি আবার ফিরে আসা দরকার। পাড়া-প্রতিবেশীরা নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ রক্ষা করলে, বিপদ-আপদে বয়স্কদের ঢাল হয়ে দাঁড়ালে সামাজিক রক্ষাকবচ তৈরি হবে, এতেও সুযোগসন্ধানীরা প্রবীণদের একা, অশক্ত ভাবা বন্ধ করবে ও কুচিন্তা প্রতিহত হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Older Person old

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy