—প্রতীকী চিত্র।
ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনে পেশ করা হলফনামা থেকে জানা যায় প্রার্থীদের বিষয়সম্পত্তির হিসাব, তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের হওয়া অভিযোগ, বিচারাধীন মামলার ফিরিস্তিও। এ বছর লোকসভা ভোটের আগে জনপরিসরে শোরগোলও উঠেছে এই নিয়ে। কিছু প্রার্থীর টাকাপয়সা-সম্পত্তির বহর দেখে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য; তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে তাঁদের এই বিপুল বৈভব অর্জিত উত্তরাধিকার সূত্রে বা নিজস্ব সামর্থ্যে, তবু দ্বিতীয় বিষয়টি নিয়ে প্রবল প্রশ্ন জাগে— নারী হেনস্থা, হুমকি, ভীতি প্রদর্শন, ধর্ষণ এমনকি হত্যার অপরাধে অভিযুক্ত মানুষ কী করে প্রার্থী হতে পারেন, কী করে নিজেকে বলতে পারেন সম্ভাব্য ‘জনপ্রতিনিধি’? এহ বাহ্য। নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় দফার শাসনকালে সম্প্রতি যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা শপথ নিল, এখন জানা যাচ্ছে তার ৭২ জন নতুন মন্ত্রীর ১৯ জন গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত। ছ’জন একশো কোটিরও বেশি বিষয়সম্পত্তির মালিক, আট মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে ঘৃণাভাষণের এফআইআর, দুই সাংসদ-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে খুনের চেষ্টার অভিযোগ— দু’জনই বাংলা থেকে নির্বাচিত!
এই সব দেখেশুনে যুগপৎ হতাশা ও আতঙ্ক জাগে। এ কথা ঠিক যে জনমত ও সমর্থন এঁদের পক্ষে গিয়েছে বলেই তাঁরা নির্বাচনে জয়ী। কিন্তু মন্ত্রিসভায় ঠাঁই আলাদা ব্যাপার; তার অর্থ জয়ী সাংসদকে স্রেফ এক জন জনপ্রতিনিধিই ভাবা হচ্ছে না— মন্ত্রকের পূর্ণ বা স্বাধীন দায়িত্ব দিয়ে, বিশাল কর্মকাণ্ড, অর্থ ও মানবসম্পদের নিয়ামক হিসাবে তাঁর গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছর মানুষের জন্যই যাঁর কাজ, তিনিই যদি বিশেষ ধর্ম বর্ণ জাতি গোষ্ঠীর মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ এবং ঘৃণাভাষণে তা উগরে দেওয়ার পূর্ব-অভিযোগে অভিযুক্ত হন, তাতে মানুষের প্রতি তাঁর পূর্ণ দায়বদ্ধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ এমনকি হত্যার চেষ্টার মতো অতি গুরুতর অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তাঁকে দেখে শুধু নারীসমাজ কেন, নাগরিক-সমাজেরই শিউরে ওঠার কথা— এঁরাই কি তবে ভারতশাসকের মুখ, এঁদের উপরেই দেশ পরিচালনার গুরুভার?
লক্ষণীয় যে, এ বার যাঁরা মন্ত্রী হয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বহু মামলাই পাঁচ বছরেরও বেশি পুরনো, এবং এখনও পর্যন্ত তাঁরা ‘অভিযুক্ত’ই, ‘অপরাধী’ প্রমাণিত হননি। বিচারে অপরাধী প্রমাণিত হয়ে এঁদের কারও যদি দু’বছরের বেশি কারাদণ্ড হয়, তা হলে ছাড়া পাওয়ার পর আইন মোতাবেক এঁরা পরবর্তী ছ’বছর ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু সে সব অনেক পরের কথা। ভারতের আদালতগুলিতে জমে থাকা মামলার স্তূপ, বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে পার পেয়ে যান নেতা-মন্ত্রীরা। অনেক সময় উচ্চতর আদালতেও মেলে ছাড়, যেমন পেয়েছেন অমিত শাহ-সহ আরও কেউ কেউ। আসল কথা হল, ভারতে এখন শাসক দলের কাছে অপরাধ ও তার অভিযোগ নিন্দনীয় বা গোপনীয় নয়, বরং উদ্যাপনীয়, মানুষকে ‘শাসন’ করার কাজে দল কেমন নেতা চাইছে তার শংসাপত্র। এ বারের লোকসভা ভোটে ভারতীয় ভোটদাতাদের দেওয়া ‘শিক্ষা’য় বিজেপি খানিক দমেছে বটে, কিন্তু নিজেরা যে শিক্ষা নেয়নি— নবগঠিত মন্ত্রিসভায় ওই ‘কীর্তিমান’দের বরমাল্যই তার প্রমাণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy