E-Paper

খনিজের খোঁজে

ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত চুক্তিতে পৌঁছনো সম্ভব হলে কিভ-এর পাশে থাকবে ওয়াশিংটন— আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ-হেন প্রস্তাব এই খনিজ-রাজনীতিরই বড় উদাহরণ।

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫ ০৬:০৪

ভারতকে খনিজ খাতে স্বাবলম্বী করতে উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশে লিথিয়ামের মতো জটিল খনিজের (ক্রিটিক্যাল মিনারেল) সরবরাহ বাড়াতে সম্প্রতি জ়াম্বিয়া, কঙ্গো, তানজ়ানিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে দিল্লি। এগুলি অন্বেষণের কাজে যুক্ত করা হয়েছে কোল ইন্ডিয়া, এনএমডিসি এবং ওএনজিসি বিদেশ-এর মতো সংস্থাকে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে উত্তরণের ক্ষেত্রে এই ধরনের খনিজ পদার্থের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ; লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার দেশগুলির বিপুল খনিজ সম্ভার বিশ্ব জুড়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চালনা করে থাকে। পেট্রল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস শুধু বিংশ শতাব্দীরই নয়, এই সহস্রাব্দের ভূ-রাজনীতি বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করছে। পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজের খোঁজই এখন যুদ্ধ, জোটবন্ধন এমনকি বৈদেশিক সহায়তা অর্জনের অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত চুক্তিতে পৌঁছনো সম্ভব হলে কিভ-এর পাশে থাকবে ওয়াশিংটন— আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ-হেন প্রস্তাব এই খনিজ-রাজনীতিরই বড় উদাহরণ।

বর্তমান খনিজ ভূ-রাজনীতিতে মূলত দু’টি পথ অবলম্বন করা হয়। আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি নিজেদের তুলনায় ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর খনিজ সম্পদ কাজে লাগাতে চায় বেশি। এর অন্যতম উদ্দেশ্য— স্বদেশে নিষ্কাশনের মাত্রা ন্যূনতম রেখে, নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখা। যেমন, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোবাল্ট, লিথিয়াম ও অন্য মূল্যবান খনিজের সম্ভার রয়েছে পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু তারা তাতে হাত দিতে আগ্রহী নয়, যত ক্ষণ পর্যন্ত সেগুলি অন্য দেশ থেকে আমদানি করা যাচ্ছে। অন্য দিকে, চিন শুধু নিজ খনিজ সম্ভারই কাজে লাগায় না, সরবরাহ অব্যাহত রাখতে এ ধরনের দুষ্প্রাপ্য খনিজসমৃদ্ধ দেশগুলির সঙ্গে কৌশলী গাঁটছড়াও বাঁধে। রিপাবলিক অব কঙ্গো-র কোবাল্ট খনির উপরে বেজিং-এর আধিপত্য এর অন্যতম উদাহরণ। তবে খনিজ সম্ভার গড়ে তোলার পাশাপাশি তার প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনেও চিনের আধিপত্যকে টেক্কা দিতে পারছে না পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলি।

অন্য দিকে, ভারত এ-যাবৎ এই ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপ করেনি। খনিজ ও শক্তি (এনার্জি) ভূ-রাজনীতিতে বরাবরই পিছিয়ে সে। যে সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তারা দেশের শক্তি-নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ সুস্থিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই করেনি। বিসমাথ, লিথিয়াম, সিলিকন, টাইটেনিয়াম, টেলুরিয়াম এবং গ্রাফাইটের মতো খনিজের ক্ষেত্রে এখনও বহুলাংশে চিনের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে দিল্লিকে। বস্তুত, অন্য দেশগুলির সঙ্গে খনিজ সরবরাহ চুক্তি করার পরিস্থিতিতে ভারত শুধু পিছিয়েই নেই, দেশীয় খনিজ অনুসন্ধানেও সে তেমন ভাবে এগোতে পারেনি। দেশে সত্যিই এই ধরনের খনিজ বা বিরল ভূপ্রাকৃতিক উপাদানের খনি আছে কি না জানা সম্ভব, যদি এগুলির অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গঠন এবং অর্থ বরাদ্দ করা হয়, এবং সেগুলি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথার্থ নীতি প্রণয়ন করা যায়। তবেই শক্তি-নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারত অন্য দেশ-নির্ভরতা কমিয়ে স্ব-নির্ভর হয়ে উঠবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Global South Scheme Energy Politics International Relation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy