গাজ়ায় যুদ্ধবিরতি, ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার অবিরাম কিন্তু নিষ্ফল প্রচেষ্টা এবং ভেনেজ়ুয়েলায় সম্ভাব্য যুদ্ধের মাঝে এ বছর যদি কেউ সর্বাধিক চর্চিত হয়ে থাকেন, তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বছর প্রেসিডেন্ট পদের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার পর থেকেই তাঁর বিবিধ সিদ্ধান্ত দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এরই অন্যতম গণ-নির্বাসন, আইনি পথের সীমাবদ্ধতা এবং সীমান্ত পুনর্নির্ধারণের জন্য নির্বাহী কর্তৃপক্ষের ব্যবহার-সহ একাধিক আক্রমণাত্মক অভিবাসন নীতির বাস্তবায়ন। ট্রাম্প প্রশাসনের এ-হেন নীতির জেরে এ-যাবৎ ছ’লক্ষেরও বেশি মানুষ মধ্য, লাতিন আমেরিকার পাশাপাশি রুয়ান্ডা, দক্ষিণ সুদান, ভারত-সহ অন্য দেশে নির্বাসিত হয়েছেন। তা ছাড়া, গত জুনে প্রাথমিক ভাবে ১৯টি দেশকে লক্ষ্য করে ভ্রমণ ও অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও এ মাসে সেই তালিকা পৌঁছেছে ৩৯-এ। অন্য দিকে, উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্য, এক লক্ষ ডলার এইচ-১বি ভিসা ফি চালু করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে শুধু বিভিন্ন ক্ষেত্রই নয়, প্রভাব পড়তে চলেছে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনেও।
এ দিকে, বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এটি ছিল এক উত্তেজনাপূর্ণ বছর। বস্তুত, বাণিজ্য অংশীদারদের উপর আমেরিকার শুল্ক আরোপের ফলে আমদানি কর মহামন্দার পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়, আর্থিক বাজারগুলি উত্তাল হয়ে ওঠে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি নিয়ে আলোচনার দফা শুরু হয়। এর ফলে বিশ্বনেতারা কম সুদের চুক্তির জন্য ওয়াশিংটনে ছুটে আসেন, আমেরিকায় কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে। বলা বাহুল্য, ট্রাম্পের এ-হেন শুল্ক যুদ্ধের জেরে সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে কানাডা, মেক্সিকো এবং ভারত-সহ আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের সঙ্গে, যার ফলে শুরু হয়েছে পাল্টা ব্যবস্থা করা এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য জোটের পুনর্গঠন। ব্যতিক্রম চিন, যারা বিরল খনিজ পদার্থে অর্জিত সুবিধা ব্যবহার করে আমেরিকার বাণিজ্যিক চাপ প্রতিহত করতে পেরেছে।
এই বছরই আমেরিকা চিনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করার চেষ্টা করেছিল, বললে অত্যুক্তি হবে কি? প্রসঙ্গত, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার প্রথম মাসেই ফেন্টানাইলের বাণিজ্য রোধে ব্যর্থতার অভিযোগে চিনের উপর ১০% শুল্ক আরোপ করে আমেরিকা। এপ্রিলেই তা পৌঁছে যায় ১৪৫%-এ, চিনের অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলনের কারণে দেশে সৃষ্ট ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’-র অভিযোগে। এর জেরে চিনের উৎপাদন ক্ষেত্র প্রাথমিক স্তরে ধাক্কা খেলেও, তারা জবাব দেয় আমেরিকার সয়াবিন কেনা বন্ধ করার পাশে আমেরিকান গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স এবং প্রতিরক্ষা নির্মাতাদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বিভিন্ন ধরনের বিরল মৃত্তিকা এবং চুম্বকের রফতানি স্থগিত করে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন, এবং দুই দেশকে ‘জি২’ হিসেবে উল্লেখ করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই ঘোষণার অর্থ, চিনকে আমেরিকার সমান ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে উন্নীত করা— যা ভারতের মতো দেশের উদ্বেগের কারণ। ২০২৫ সাল দেখল, ভূরাজনৈতিক পরিসরে আমেরিকা ও চিনের দ্বৈরথের এক রূপ। ২০২৬ কী দেখবে?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)