E-Paper

সেই তিমিরে

দেশের হাসপাতালে আইসিইউ-সিসিইউ’এর মতো জরুরি স্বাস্থ্য-পরিষেবার মান সুনিশ্চিত ও সুস্থির করা নিয়ে কোনও তর্কই চলে না, অজুহাতও নয়— কারণ তার সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্নটি জড়িয়ে।

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:৪৮

রাজ্য-নির্বিশেষে ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবার সামগ্রিক পরিস্থিতির যে কী হতশ্রী দশা, বিশেষত দেশের হাসপাতালগুলিতে আইসিইউ-সিসিইউ’সহ জরুরি চিকিৎসা-পরিষেবা তথা ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার’ কাঠামো যে কত দুর্বল, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল করোনাকাল। যে কোনও দেশ সেই অভিজ্ঞতা থেকে ‘ঠেকে শেখা’র কথাই ভাববে— শুধু ইউরোপ-আমেরিকা নয়, আফ্রিকার, এমনকি ঘরের কাছে এশিয়ারই অন্য অনেক দেশের সরকার কোভিড-উত্তর জরুরি চিকিৎসা-পরিষেবা ব্যবস্থা পোক্ত করতে দেরি করেনি, সদিচ্ছা ও তৎপরতা দুই-ই দেখিয়েছে। কিন্তু ভারত যে আজও একই তিমিরে, সম্প্রতি বোঝা গেল দেশের শীর্ষ আদালতের ভর্ৎসনায়। হাসপাতালগুলির আইসিইউ-সিসিইউ সংক্রান্ত নির্দেশিকা তৈরিতে গড়িমসি ও আদালতের পূর্বনির্দেশ অবমাননার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট গত ১৩ অক্টোবর দেশের সব ক’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নোটিস পাঠিয়েছে, সেই সঙ্গে প্রতিটি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব বা স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিককে তলবও করেছে।

আদালতের ধমক ছাড়া ভারতে ইদানীং কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারই নড়েচড়ে বসে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, মানবাধিকার, সব ক্ষেত্রেই ছবিটা এক। কিন্তু দেশের হাসপাতালে আইসিইউ-সিসিইউ’এর মতো জরুরি স্বাস্থ্য-পরিষেবার মান সুনিশ্চিত ও সুস্থির করা নিয়ে কোনও তর্কই চলে না, অজুহাতও নয়— কারণ তার সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্নটি জড়িয়ে। আইসিইউ-ব্যবস্থা প্রকৃত অর্থে রোগী তথা নাগরিকের ‘প্রাণরক্ষা’র পরিষেবা, স্রেফ হাসপাতাল-পরিকাঠামোর একটি অঙ্গ হিসাবে তাকে দেখা বা বিচার করা চলে না। ভারতের মতো বিপুল জনভারপীড়িত দেশে যেখানে হাসপাতালে আইসিইউ বেড পাওয়া না-পাওয়াও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক জোর ও অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সামর্থ্যের উপরেও নির্ভরশীল, সেখানে প্রশাসনিক পদক্ষেপ অতি জরুরি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে এই কাজই করতে বলা হয়েছিল, হাসপাতালে ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার’ পরিষেবার কাজের মান স্থির বা ‘স্ট্যান্ডার্ডাইজ়’ করা— রাজ্য স্তরে সরকারি-অসরকারি স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি খসড়া নির্দেশিকা তৈরি করা। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পরে বেড়েছে, তা সত্ত্বেও এই কাজটুকু করা গেল না?

শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, কয়েকটি রাজ্য যে এই কাজ করেনি তা নয়, তবে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে করেছে। ‘ব্যর্থ’ রাজ্যের তালিকাই দীর্ঘ: সেখানে দিল্লি, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরলের পাশে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও। বুঝতে অসুবিধা হয় না, নাগরিকের জরুরি স্বাস্থ্য-পরিষেবা নিশ্চিত করার কাজে রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা ধর্তব্যই নয়, কোন রাজ্য কেন্দ্রের নেকনজরে বা বিষনজরে আছে তাতেও কিছু ইতরবিশেষ হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্ট এখন চরমসীমা বেঁধে দিয়েছে, আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যগুলি রিপোর্ট জমাও দিয়ে দেবে হয়তো। কিন্তু তা যে পরীক্ষার আগের রাত জেগে পড়া তৈরি করার মতো শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হবে না, কে বলতে পারে! এই কাজকে কোনও মতেই হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না, আদালতের এই কড়া চেতাবনিই আপাতত ভরসা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

health services medical treatment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy