E-Paper

এক শতাংশ সাফল্য

সম্পদের মালিকানার ক্ষেত্রেই হোক, বা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে— দেশের শীর্ষ এক শতাংশে ঠাঁই পেতে গেলে শাসকের ঘনিষ্ঠ হতেই হবে।

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৫ ০৫:৫১

বছরে দু’কোটি চাকরি তৈরি হবে, সেই প্রতিশ্রুতির হিসাবে এগারো বছরে মোট ২২ কোটি নতুন চাকরি হওয়ার কথা ছিল। সম্প্রতি জানা গেল, হয়েছে মাত্র ২২ লক্ষ। প্রশ্ন হল, এই সত্যকে মানুষ কী ভাবে দেখবে? কেউ বলতেই পারেন, প্রতিশ্রুতির এক শতাংশ পূরণ হয়েছে, তা-ই বা মন্দ কী? ‘অচ্ছে দিন’ এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির তো সেটুকুও পূরণ হয়নি। ডলারের দাম চল্লিশ টাকায় নিয়ে যাওয়া, এলপিজি সিলিন্ডারের দাম চারশো টাকায় বেঁধে দেওয়া, অথবা বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে কালো টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে পনেরো লক্ষ টাকা জমা করার প্রতিশ্রুতিগুলি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে। তার তুলনায়, চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতির অন্তত এক শতাংশ তো রাখতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী! বিরোধীদের অভিযোগ, রোজগার মেলার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী যত চাকরি দিয়েছেন, তার সিংহভাগ গিয়েছে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ প্রার্থী, এবং বিজেপি-শাসিত রাজ্যের প্রার্থীদের কাছে— তাই সরকার কর্মসংস্থান সংক্রান্ত তথ্যপ্রকাশে গড়িমসি করছে। কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ দফতর জন-অভিযোগ, কর্মিবর্গ, এবং আইন ও ন্যায় মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির কাছে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত যে রিপোর্ট দিয়েছে, তার সম্পর্কে অস্বচ্ছতা এবং অসম্পূর্ণতার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন সংসদীয় কমিটির এক সদস্য। শাসক দল পাল্টা বলতেই পারে, সাফল্যের হার যেখানে মাত্র এক শতাংশ, সেই দুর্লভ সৌভাগ্যের ভাগ কি যাকে-তাকে দেওয়া যায়? সম্পদের মালিকানার ক্ষেত্রেই হোক, বা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে— দেশের শীর্ষ এক শতাংশে ঠাঁই পেতে গেলে শাসকের ঘনিষ্ঠ হতেই হবে।

তবে, প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতিই দিন না কেন, বছরে দু’কোটি নতুন সরকারি চাকরি তৈরি করা অসম্ভব। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুসারে ভারতে কেন্দ্র এবং সব রাজ্য সরকার মিলিয়ে সরকারি চাকরির সংখ্যা দেড় কোটির কম। হিসাব বলছে, দেশে মোট যত কাজ করেছে, তার মাত্র ২ শতাংশ সরকারি চাকরি। তার ঘাড়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির গুরুদায়িত্ব চাপালে তা যে মুখ থুবড়ে পড়বে, তাতে অবাক হওয়ার বিন্দুমাত্র কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ধারেকাছে পৌঁছতে গেলেও ভরসা বেসরকারি ক্ষেত্র, ভরসা বাজার। প্রধানমন্ত্রীও সম্ভবত বাজারকে তাঁর প্রতিশ্রুতির মধ্যেই ধরেছিলেন। সেখানে কর্মসংস্থানের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই— পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা যত বাড়বে, শিল্পক্ষেত্রে তত বেশি কর্মীর প্রয়োজন হবে, কর্মসংস্থানও হবে তত বেশি। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানে দীর্ঘমেয়াদি ভাটার টান। এমনকি, নতুন কর্মীদের বেতনের একটি অংশ সরকার দেবে, এমন প্রতিশ্রুতিও কাজের বাজারকে যথেষ্ট চাঙ্গা করতে পারল না। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, সব বয়সের ক্ষেত্রেই বেকারত্বের হার ফের ঊর্ধ্বমুখী, কিন্তু সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা তরুণ প্রজন্মের। তাদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ।

তা হলে কি বাজারের ব্যর্থতার কারণেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ থেকে গেল? এমন কথা মেনে নিলে তা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বকে লাঘব করে বটে, কিন্তু সত্যের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা যায় না। বাজার তখনই নতুন চাকরির ব্যবস্থা করবে, যখন অতিরিক্ত নতুন কর্মীর প্রয়োজন হবে। এবং, অতিরিক্ত কর্মী তখনই প্রয়োজন হবে, যখন বাজারে চাহিদা ধারাবাহিক ভাবে বাড়তেই থাকবে। নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রায় গোটা মেয়াদ জুড়েই বাজারে চাহিদা শ্লথ। মানুষের হাতে ক্রয়ক্ষমতা ক্রমশ কমেছে। অতিমারির বছরগুলি বাদেও অর্থব্যবস্থা অনুজ্জ্বলই থেকেছে। টানা চার বছর অর্থব্যবস্থার বৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় কম হয়েছে। সরকার প্রকাশ না করলেও ফাঁস হয়ে যাওয়া পরিসংখ্যান থেকে দেখা গিয়েছে যে, গ্রামাঞ্চলে তাৎপর্যপূর্ণ সময় ধরে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছে। এমন বাজারে চাহিদা কোথায়? আর চাহিদা না থাকলে কর্মসংস্থানই বা কোথায়? প্রতিশ্রুতির এক শতাংশ রাখা গিয়েছে, তাই না অনেক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP Government of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy